দুর্বল ব্যাংকগুলোকে আরও অর্থ সহায়তা দিতে সবল ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেইসঙ্গে ডলারের বাজারে যেন কোনো ধরনের কারসাজি না করা হয়, অর্থাৎ ব্যাংকগুলো যেন বাজারের স্থিতিশীলতা ধরে রাখে সেই বিষয়েও ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে। এ ছাড়া, মূলধন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলো যেন কোনোক্রমেই ডিভিডেন্ট দিতে না পারে সেই বিষয়েও গভর্নর কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হোসনে আরা শিখা। তিনি সাংবাদিকের সামনে বৈঠকের সার সংক্ষেপ তুলে ধরেছেন।
সোমবার (১১ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনির্ধারিত সভায় ১৭টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের অফ সাইট সুপারভিশন বিভাগের আয়োজনে সভায় রাষ্ট্রায়ত্ব ৪ ব্যাংকসহ ব্র্যাক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, সিটি, ঢাকা, ইস্টার্ন, ডাচ-বাংলা, পূবালী, প্রাইম, এনসিসি, মার্কেন্টাইল, প্রিমিয়ার, যমুনা এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের এমডিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে গভর্নর বলেছেন, যেসব ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি ভালো তারা যেন দুর্বল ব্যাংকগুলোকে আরও একটু বেশি সহায়তা করে। এরই মধ্যে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে অর্থ সহায়তা দিতে একটি নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই নীতিমালার আলোকেই অতিরিক্ত তারল্য থাকা ব্যাংকগুলোকে আবারও অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নীতিমালা অনুযায়ী, সংকটে থাকা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে দেওয়া ঋণের গ্যারান্টি দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে দেওয়া ঋণের টাকা ফেরত চাইলে সবল ব্যাংকগুলোকে তিন দিনের মধ্যেই তা ফেরত দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কোনো ব্যাংক ঋণ দেওয়ার জন্য কোনো টাকা নিতে পারবে না। কোন ব্যাংককে কত টাকার তারল্য–সহায়তা দেওয়া হবে, সেটি নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া দুই ব্যাংকের সমঝোতার ভিত্তিতে ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা হবে।
এর আগে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্ততায় ১০টি সবল ব্যাংক তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে ৫ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এসব ব্যাংকে অতিরিক্ত তারল্য থাকায় তারা সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে ধার দিয়েছে। এসব ধার বা ঋণে গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ঋণ সুবিধা পেয়েও এসব ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। গ্রাহকের টাকাও ফেরত দিতে পারছে না। ফলে সংকটও কমছে না। তাই গতকাল নতুন করে ঋণ সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া, বৈঠকে ডলার বাজারের স্থিতিশীলতা নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কি না সেই বিষয়েও জানতে চেয়েছেন গভর্নর।
এ সময় ব্যাংকের এমডিরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিকভাবে বকেয়া বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বৈঠককালেও তারা জানিয়েছে যে, আন্তর্জাতিক বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে কনফার্মিং ব্যাংকগুলো কোন কোন ক্ষেত্রে হয়তো তারা আগেই বিল পরিশোধ করে দিচ্ছে, কিন্তু কনফার্মিং ব্যাংক যখন এলসি পরিশোধ হওয়ার পরে পুনর্ভরণ বা ঋণ সুবিধা চাচ্ছে, তখন তারা অনেক সময় দেরি করে পাচ্ছে বা অনেক সময় পাচ্ছে না। এই বিষয়টিকে গভর্নর অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়ে বলেছেন, ভবিষ্যতে যেসব ব্যাংক দেরিতে বিল পরিশোধ করবে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি তাদের এলসি খোলা বন্ধও করে দিতে পারে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ডলারের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ডলারের বাজার স্থিতিশীল থাকবে। তবে কেউ যাতে অতিরিক্ত ডলার ধরে রেখে বাজারে কারসাজি করতে না পারে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। এ সময় ডলার কিনে ইউরো বা ক্রস কারেন্সিতে রূপান্তর না করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এ সময় ব্যাংকের এমডিরা বলেছেন, বর্তমানে ক্রেডিট কার্ডের সুদহার অনেক কম। কিন্তু খরচ অনেক বেশি। তাই এই সুদহার বাড়িয়ে যৌক্তিক করার দাবি জানিয়েছেন তারা। সেইসাথে ঋণ অবলোপনের সাথে সাথেই যেন ব্যাংকগুলো মামলা করতে পারে, সেই দাবি জানিয়েছেন তারা। এসময় গভর্নর বলেছেন, বিষয়টি বিআরপিডির সঙ্গে বসে ঠিক করতে হবে। বর্তমানে ঋণ অবলোপনের দুই বছর পর্যন্ত প্রভিশনিং করে তারপর মামলা করতে পারে ব্যাংকগুলো। এ ছাড়া, যেসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি রয়েছে, সেসব ব্যাংক যেন কোনোক্রমেই ডিভিডেন্ট দিতে না পারে সেই বিষয়েও কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর।
মন্তব্য করুন