রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) তিন হাজার কোটি টাকার সভরেন গ্যারান্টি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এ ঋণ গ্যারান্টি পাওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য যে কোনো ঋণদাতা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে পারবে আইসিবি। রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ এ সংস্থাটি পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দিয়ে থাকে।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) এক বৈঠক শেষে এই সভরেন গ্যারান্টি অনুমোদন করা হয়।
পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিনিয়োগের মাধ্যমে সংকট কাটাতে সহযোগিতা করে। এ ঋণ পাওয়ার ফলে পুঁজিবাজারে আইসিবি তারল্য সহায়তা করতে পারবে। ফলে পুঁজিবাজার আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ কালবেলাকে বলেন, এই টাকাটা প্রয়োজনের তুলনায় খুব বেশি না। পুঁজিবাজার আগের সরকারের সময়ে বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে সময় অন্যান্য ব্যাংকগুলোর মতো আইসিবিতেও এক প্রকার লুট হয়েছে।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার নামে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে উচ্চ সুদে ঋণ এনে আইসিবি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন যে টাকা ঋণ পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হবে। তবে এর অনুপাত কত হবে তা এখনো নির্ধারিত হয়নি।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম কালবেলাকে বলেন, আইসিবি যেনো এই ফান্ডটি পায় এরজন্য কমিশনের পক্ষ থেকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে। এই ফান্ড পেলে আইসিবির আর্থিক সক্ষমতা বাড়বে। ঋণগুলো পরিশোধ করতে পারবে এবং কিছু ফান্ড তারা নতুন করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। এতে করে বাজারে তারল্য বাড়বে এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি পাবে।
তথ্য অনুযায়ী, বেশ দীর্ঘ সময় ধরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে তারল্য সংকট কাটানোর জন্য সরকারের কাছে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ চেয়ে আসছিল আইসিবি। তবে আর্থিক সংকটে থাকার কারণে সরাসরি ঋণ দেওয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে কয়েক দফায় চিঠি চালাচালিও হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সে ঋণ আর অনুমোদন হয়নি।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। নতুন সরকার সকল খাতে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করে। বিএসইসি, ডিএসই ও আইসিবি থেকে শুরু করে আর্থিক খাতের প্রায় সবগুলো সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন আসে। তবে বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যানের নেওয়া কিছু সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। এমন পরিস্থিতিতে বিএসইসি ব্যাপক সংস্কার কাজ শুরু করে।
অর্থ উপদেষ্টা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে করণীয় সম্পর্কে জানতে বিএসইসিতে উপস্থিত হলে পুঁজিবাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এরপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মূলধনী মুনাফা করহার কমিয়ে অর্ধেক করে দিলে পুঁজিবাজারে ব্যাপক উত্থান হয়।
এরপর নতুন করে আলোচনায় আসে আইসিবির ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণের বিষয়টি। এ নিয়ে গত ১৭ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে (এফআইডি) একটি বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে এফআইডির পক্ষ থেকে অর্থ উপদেষ্টার কাছে সেই প্রস্তাবনা রেজুলেশন আকারে তুলে ধরে। পরবর্তী তা গত মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টা অনুমোদন করেন।
এফআইডি সূত্রে জানা যায়, আইসিবির প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণের বিষয়ে রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে এফআইডিকে অনুরোধ করা হলে গত ১৭ অক্টোবর এফআইডি, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি ও আইসিবির একটি বৈঠক হয়। সে বৈঠকে আইসিবিকে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করা হলে তা গত মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টা অনুমোদন করেন।
মুনাফা কমছে আইসিবির
২০২২ সালের জুলাই মাসে ফ্লোর প্রাইস ব্যবস্থা চালুর প্রায় দুই বছর পর জানুয়ারিতে তা অপসারণের পরে বাজার মূলধন প্রায় এক লাখ কোটি টাকা কমে যায়। ফ্লোর প্রাইস হলো কোনো স্টক বেচাকেনার সর্বনিম্ন মূল্য। আর শেয়ার নির্ধারিত ফ্লোর প্রাইসের নিচে নামতে পারে না। বাজারের অস্থিরতা রোধের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিএসইসি গত ২৪ এপ্রিল তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না বলে আদেশ দেয়।
অস্থিতিশীল বাজারের কারণে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে আইসিবি ২৬৭ কোটি টাকা লোকসান করেছে। এটির মূলধন লাভ ৫৯ শতাংশ কমে ১০৫ কোটি টাকা হয়েছে। এ ছাড়া আমানত ও ঋণের সুদ পরিশোধ ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ বেড়ে ৬৭৫ কোটি টাকা হয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে বিনিয়োগ ব্যাংকটির মুনাফা ৪৬ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৭৭ কোটি টাকা হয়। এ ছাড়া ফ্লোর প্রাইস সীমাবদ্ধতার মধ্যে শেয়ার বিক্রি করতে না পারায় আইসিবি এটির আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
মন্তব্য করুন