দেশের আর্থিক খাতের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভবনা নিয়ে গবেষণা করে অর্থনীতি সমিতি। গত কয়েক বছরের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে প্রতিষ্ঠানটির মান কমেছে অনেকাংশেই। বিশেষ করে, বিতর্কিত অর্থনীতিবিদদের দাপটে সংস্থাটির ওপর আস্থা হারিয়েছে আর্থিকখাতের কর্তা-ব্যক্তিরা। পরবর্তী পরিস্থিতিতে সমিতির অফিস দখলে নিয়েছে সংগঠনটির বৈষম্যবিরোধী নামে একটি পক্ষ। এরপর করা হয়েছে এডহক কমিটি। যদিও ওই কমিটিতেও আওয়ামী সমর্থিত ব্যক্তিদেরই আধিপত্য দেখা গেছে। অর্থনীতি সমিতির সাম্প্রতিক কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
জানা যায়, গত ১ অক্টোবর নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আজিজুর রহমানকে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি করে এডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে ৩০ সেপ্টেম্বর সমিতির এডহক কমিটির করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক করা হয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও জনতার মঞ্চের সংগঠক সৈয়দ মহাবুব-ই-জামিল।
বৈষম্যবিরোধী নাম হলেও সংগঠনটির অফিস দখলে নেতৃত্ব দেওয়া সৈয়দ মহাবুব-ই-জামিল ও তার সহযোগী মোসলে উদ্দিন রিফাতের আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ আগের কমিটির সদস্যদের।
তারা বলছেন, সরকার পতনের পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে অর্থনীতি সমিতির অফিসের সদর দরজা ও অফিস কক্ষের তালা ভেঙে অফিস দখল করে বৈষম্যবিরোধী নামধারী সমিতির সদস্য ও কতিপয় বহিরাগত। এসময় অফিসের মালামাল, কম্পিউটারসহ অন্যান্য কাগজপত্র লুট করা ও অফিসের দারোয়ানকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এতে নেতৃত্ব দেন সাবেক ছাত্রলীগের নেতা, জনতার মঞ্চের সংগঠক সৈয়দ মহাবুব-ই-জামিল। সাথে আছে তার সহযোগী আজিজুর রহমান, মোহম্মদ আলী ও মোসলে উদ্দিন রিফাতসহ গুটিকয়েক সমিতির সদস্য। এদের মধ্যে মোসলে উদ্দিন রিফাত ও মহাবুব-ই-জামিলের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে অর্থনীতি সমিতির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালবেলাকে বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে সমিতির অফিসের তালা ভেঙে এডহক কমিটির সদস্যরা অফিস দখল করে। এরপর তারা সমিতির নিচের গেটে তালা লাগিয়ে চলে যায়। এমসয় ভেতরে দারোয়ানরা ছিলো। পরদিন তারা এডহক কমিটি গঠন করেছে।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে এডহক কমিটির সভাপতি ড. মো. আজিজুর রহমান কালবেলাকে বলেন, আমি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। সে সময় ছিলো ১৯৬৯-৭৫ সময়। ওই সময় তো দেশে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ ছাড়া তেমন কোন দল ছিলো না।
সমিতির অফিস দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তালা ভাঙা বা দরজা ভাঙার ঘটনা ছিলো না। তবে আমরা দায়িত্ব থেকে অর্থনীতি সমিতির এডহক কমিটি করেছি। কারণ গত ৩ আগস্ট আগের কমিটির নেতারা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে গণহত্যায় তাকে সমর্থন দিয়েছেন। এটা আমাকে এবং দেশের আর্থিক খাতের অনেককেই ব্যথিত করেছে। এছাড়া গত কয়েক বছর থেকে বিতর্কিত ব্যক্তিরা অর্থনীতি সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে। আমরা সেই সুনাম ফিরিয়ে আনতে চাই।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সৈয়দ মহাবুব-ই-জামিল কালবেলাকে বলেন, আমি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করেছি। এটা সত্য। আর জনতা মঞ্চ গঠনের সময় তাদের সঙ্গেও ছিলাম। কিন্তু অর্থনীতি সমিতিতে যারা নেতৃত্বে ছিলো তারা স্বৈরাচারের দোষর ছিলো। এছাড়া অর্থনীতি সমিতি তো কারও নিজস্ব সম্পত্তি নয়। আমরা ওই সমিতির সদস্য। আমরা আমরা আমাদের অধিকার থেকেই সমিতিতে ঢুকেছি।
তিনি বলেন, ৭ সেপ্টেম্বর আমরা একটা মিটিং করেছিলাম। সেখানে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম নতুন কমিটি ভেঙে দিয়ে এডহক কমিটি গঠন করা হোক। কিন্তু তারা সেখানে কোন কর্ণপাত করেননি। উল্টো অফিস বন্ধের নোটিশ দিয়েছেন। এটা তো তারা করতে পারে না। আমরা শুরু আমাদের অধিকার আদায় করেছি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের ডেকেছিলো। সে সময় আমরা গিয়ে এই হত্যাকাণ্ড থামানোর পরামর্শ দিয়েছি। আমরা কোন হত্যাকাণ্ডে সমর্থন দিবো কিভাবে। কোন জ্ঞানবান লোক এটা করতে পারে? এখন একটা পক্ষ আমাদের কোন দোষ খুঁজে না পেয়ে আমাদের বিরুদ্ধে এ ধরণের অপপ্রচার করছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী যদি কাউকে ডাকে তাহলে না যাওয়ার কোন অপশন থাকে কিনা প্রশ্ন এই অর্থনীতিবিদের।
তিনি বলেন, আমাদের সংগঠনের গঠনতন্ত্র ভায়োলেট করে তারা এডহক কমিটি করেছে। তারা আমাদের প্রস্তাব দিয়েছিলো। আমরা বলেছি কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবো। কিন্তু তারা আমাদের সময় না দিয়েই সমিতির তালা ভেঙে সমিতি দখলে নিয়েছে। এরপর আমাদের প্রহরীরা ভিতরে রেখে তারা বাহির থেকে তালা আটকে চলে গেছে।
মন্তব্য করুন