কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
দৃশ্যমান হচ্ছে টাস্কফোর্সের কার্যক্রম

প্রথম ধাপে ৩ ব্যাংকের মূল্যায়ন

গ্রাফিক্স : কালবেলা।
গ্রাফিক্স : কালবেলা।

দেশের ব্যাংক খাতের সংস্কারে গভর্নরের নেতৃত্বে গত কয়েকদিন আগে ৬ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যেই টাস্কফোর্সের ২ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৪ জন কর্মকর্তাকে পরিদর্শনের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিদেশি কয়েকজন পরিদর্শক নিয়োগ দিয়েই টাস্কফোর্স কার্যক্রম শুরু করবে। এ ক্ষেত্রে প্রথম ধাপে ইসলামী ব্যাংকসহ ৩টি ব্যাংকের সম্পদ নিরূপণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে আরও ৩টি করে ৯ ব্যাংকের এ কার্যক্রম চালানো হবে।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) টাস্কফোর্সের দ্বিতীয় বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা উপস্থিত ছিলেন।

গভর্নর বলেন, টাস্কফোর্স মূলত ৩টি বিষয়ে কাজ করবে। প্রথমত, ব্যাংকগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত সম্পদ নির্ণয় করবে। এরপর ব্যাংকগুলোর সম্পদ কোথায় আছে তা চিহ্নিত করবে। এরপর ওই সম্পদ পুনরুদ্ধারে কাজ করবে। এক্ষেত্রে প্রথম ধাপে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১৪ কর্মকর্তাকে ৩ ভাগে বিভক্ত করে ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে দুই গ্রুপে ৪ জন করে কর্মকর্তা দিবেন। আর অন্য গ্রুপে রয়েছেন ৬ জন। এক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক বড় ব্যাংক হওয়ায় পরিদর্শনের দায়িত্বে থাকবে ৬ জন কর্মকর্তা। পাশাপাশি নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান ও বিদেশি নিরীক্ষকদের যুক্ত করা হবে। উন্নয়ন সহযোগীরা এসব অর্থ দেবে। তিনি বলেন, আমরা প্রথমে দেখব ব্যাংক থেকে নামে বা বেনামে কি পরিমাণ অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে। এরপর ওই অর্থ যদি দেশের বাইরে চলে যায় তাহলে সেগুলো কিভাবে আন্তর্জাতিক আইন মেনে আনা যায়- সে বিষয়ে কাজ করব। এ ক্ষেত্রে আমরা বড় কেসগুলো নিয়ে কাজ করব। আমাদের যদি ৪ লাখ কোটি টাকার মতো খারাপ সম্পদ থেকে থাকে তার অর্ধেক হয়ে তো অল্প কয়েকজন ব্যক্তির কাছে গেছে। এজন্য তাদের উপর বেশি ফোকাস থাকবে। আর ছোটগুলো সিস্টেমেটিক ওয়েতে তুলে আনা হবে।

গভর্নর বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছি। আমাদের রেমিট্যান্স প্রভাব বাড়ছে। যদি এসব ব্যাংক রেমিট্যান্স ভালো পায় তাহলে তাদের তারল্য প্রবাহ বাড়ায় সহায়তা করবে। রেমিট্যান্স যখন তারা বিক্রি করবে তখন তাদের হাতে টাকা চলে আসবে। এভাবেই তাদের রিকভার করতে পারবে।

তিনি বলেন, একীভূত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক এখানো কোনো সিদ্ধান্তে যায়নি। আমরা চেষ্টা করব ছোট ছোট ব্যাংকগুলোকে একীভূত করে ফেলা যায় কিনা। এটা করতে পারলে ভালোই হবে। এসব ব্যাংকগুলো যেহেতু মূলধন সহায়তা আমরাই করব সেক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ অনেকগুলো ব্যাংকের আগের মালিকরা অনিয়ম করে তাদের মালিকানা হারিয়েছেন। এখন ওই মালিকানা সরকারের ক্ষেত্রে একীভূত করা সহজ হবে। তবে বাস্তবতা বুঝে আমরা কাজ করব। তবে কয়েকটি ব্যাংক কমিয়ে ফেলা অবশ্যই ভালো হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংক একীভূত হলেও আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

গভর্নর বলেন, কিছু ব্যাংক থেকে গ্রাহক টাকা তুলে অন্য ব্যাংকে রাখছে। যেসব ব্যাংক থেকে টাকা তোলা হচ্ছে তারা তারল্য সংকটে পড়ছে। আবার যাদের কাছে রাখা হচ্ছে তাদের তারল্য বেড়ে যাচ্ছে। এজন্য আমরা গ্যারান্টার হয়ে তারল্য বেশি থাকা ব্যাংকগুলো থেকে কম থাকা ব্যাংকগুলোকে টাকা দেব। এক্ষেত্রে দুর্বল ব্যাংক টাকা না দিতে পারলে ওই টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক পরিশোধ করবে। এখন পর্যন্ত এই স্কিম থেকে কাউকেই টাকা দেওয়া হয়নি। যদি এদের অবস্থা ভালো হয়ে যায় তাহলে কাউকে দিতেও হবে না। প্রয়োজন বোধে দেব। যার যত টাকা দরকার সে অনুযায়ী টাকা দেওয়া হবে। তবে এসব ব্যাংক এখন ক্যাশফ্লো ভালো রয়েছে। গত কয়েক দিনে ব্যাংকগুলোর তারল্য উদ্বৃত্ত আছে ৮১০ কোটি টাকা। আশা করি সমস্যা সমাধান হবে। তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় চলতি সপ্তাহে আবারও নীতি সুদহার (পলিসি রেট) বৃদ্ধি করা হবে। এরপর আগামী মাসে আরও কিছুটা বৃদ্ধি করা হবে। বর্তমানে নীতি সুদহার ৯ শতাংশে রয়েছে। গত বছরের মার্চ থেকে দেশের মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি থাকায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শের সঙ্গে মিল রেখে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়।

গভর্নর বলেন, আমি আশাবাদী মূল্যস্ফীতি মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে একটি ভালো জায়গায় চলে আসবে। কতখানি ভালো জায়গায় আসবে সেটা হয়তো বলা যাবে না। তবে আমরা পলিটি টাইট করব যাতে মূল্যস্ফীতি কমে আসে। আমাদের এখন বিনিময় হার স্থিতিশীল আছে। এছাড়া রেমিট্যান্সও বাড়ছে। আশাকরি আগামীতেও বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকবে। যদি এটা ধরে রাখা যায় তাহলে মূল্যস্ফীতি অবশ্যই কমে আসবে। তাছাড়া আমাদের বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণের যে লক্ষ্য রাখা হয়েছে তা ৫০ হাজার কোটি টাকা কমানো হতে পারে। এটা হলে বেসরকারি বিনিয়োগও ঠিক হয়ে আসবে। সবমিলিয়ে আমরা যদি মূল্যস্ফীতি ৪-৫ এ নামিয়ে আনতে পারি তাহলে সুদের হার আমরা কমিয়ে আনতে পারব। সে জন্য সময় দিতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গাজায় শিশু হত্যার তীব্র নিন্দা পোপ ফ্রান্সিসের

শাহবাগে বেসরকারি ট্রেইনি চিকিৎসকদের বিক্ষোভ

‘ফ্রেন্ডলি ফায়ারে’ নিজেদের যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করল মার্কিন সেনারা

সন্দ্বীপবাসীর কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ করবে ফেরিঘাট : বিএনপি নেতা মিল্টন

বাড্ডায় ছিনতাই করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা ৩

চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করল সেই পাকিস্তানি জাহাজ

সংলাপে বক্তারা / গত ১৫ বছর গণমাধ্যম জনগণের কথা বলেনি

‘বঙ্গবন্ধু রেল সেতু’র নাম পরিবর্তন

প্রশাসন ক্যাডারের ইয়াং অফিসার্স ফোরামের সভাপতি শুভ, সা. সম্পাদক জয়

সাদপন্থি নেতা মুফতি মুআজ বিন নূর ৩ দিনের রিমান্ডে

১০

চলাচলের রাস্তায় যুবলীগ নেতার সবজি চাষ

১১

গাজা উপত্যকা এখন মানবতার কবরস্থান : জাতিসংঘ

১২

ক্ষেপণাস্ত্র সমালোচনা / যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া জবাব দিল পাকিস্তান

১৩

গাজীপুরে বোতাম কারখানায় ভয়াবহ আগুন

১৪

মেলবোর্ন সাংবাদিকের সঙ্গে বাদানুবাদে কোহলিকে ঘিরে সমালোচনার ঝড়

১৫

দেশের বাজারে এলো পেট্রোনাস নেক্সটা 

১৬

সংযুক্ত আরব আমিরাতের পাসপোর্ট বিশ্বসেরা 

১৭

‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠার দাবি প্রশাসন ক্যাডারদের

১৮

যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল না কিনলে শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের

১৯

কাতারে বিজয় মেলার পর্দা নামল

২০
X