সার্ভার জটিলতায় দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির লাখ লাখ গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়েছেন। রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) দিনভর টাকা উত্তোলন ও জমা দিতে পারেননি ব্যাংকটির গ্রাহকরা। ইসলামী ব্যাংকের একাধিক শাখা ও এটিএম বুথ ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
যদিও সন্ধ্যায় সার্ভার সমস্যা সমাধান হয়েছে বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ।
তথ্য বলছে, সকাল ১০টায় সাধারণ সময়ের মত লেনদেন শুরু করার এক ঘণ্টা পরেই সার্ভার ‘বিপর্যয়’ ঘটে বেসরকারি খাতের শরিয়াভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকে।
সার্ভার ত্রুটিতে ব্যাংকিং লেনদেনের শেষ সময় বিকেল ৪টা পর্যন্ত কোনো প্রকার লেনদেন করতে পারেনি ব্যাংকের গ্রাহকরা। এ সময় শাখা পর্যায়ের সঙ্গে বন্ধ ছিল ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও এটিএম বুথের সেবাও। নিজস্বের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহক ও ভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহকরা কোনো ধরনের চেক দিয়ে লেনদেন করতে পারেননি। যদিও শুক্র ও শনিবারও এটিএম থেকে টাকা না তুলতে পারার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় বসবাস করা ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক আক্তার হোসেন কালবেলাকে বলেন, আমার অফিসের বেতন হয় ইসলামী ব্যাংকের একাউন্টে। গত শুক্র ও শনিবার বাড্ডা এলাকা ও এর আশেপাশে এলাকার সব বুথে চেষ্টা করেও টাকা তুলতে পারিনি। এমনকি মতিঝিল এলাকায়ও কোন বুথ থেকে টাকা তোলা যায়নি। পরে রোববার অফিস খোলার প্রথম প্রহরে গিয়ে দীর্ঘ সময় চেষ্টা করেও টাকা তুলতে পারিনি। পরে জানানো হয় ব্যাংকে সার্ভারের সমস্যা।
ভোগান্তিতে পড়ে শেষ বেলা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ব্যাংকটিতে টাকা জমা দিতে পারেননি ফরিদা বেগম। তিনি বলেন, ‘সকাল পৌনে ১১টার সময়ে লাইনে দাঁড়াই টাকা জমা দিতে। ১১টার সময়ে কাউন্টারে টাকা জমা দেওয়ার সময়ে টাকা না নিয়ে অপেক্ষা করতে বলেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা।’
কয়েকবার চেষ্টা করেও টাকা জমা দিতে না পেরে বেলা একটার দিকে মতিঝিল শাখা ছাড়েন তিনি।
অন্যদিকে ইসলামী ব্যাংকের মালিবাগ শাখায় টাকা উত্তোলন করতে পারেননি করপোরেট এক গ্রাহক। শেষ দফায় বেলা দুই টার সময়ে চাইলেও টাকা তুলতে পারেননি ওই গ্রাহক।
ব্যাংকের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের জানানো হয় ‘র্সার্ভার ডাউন’ হয়েছে। কয়েকবার সচল হওয়ার সংকেত দিলেও লেনদেন নিস্পত্তি করতে পারেনি।
এভাবেই শেষ হয় ব্যাংকিং সময়। কয়েকজন বড় গ্রাহককে সন্ধ্যার পরও অনেক শাখায় অপেক্ষায় রাখা হয়। বিশেষ করে করপোরেট কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ‘বড় অঙ্কের’ অর্থ জমা দিতে ব্যাংকের শাখায় অপেক্ষা করেন।
সন্ধ্যা ছয় টার কিছু আগে সার্ভার সচল হলে টাকা জমা নেওয়া শুরু করে ব্যাংকটি। সন্ধ্যা সাতটার সময়েও টাকা জমা নেয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
এজন্য রাজধানীর শাখাগুলোর ক্যাশ বিভাগের কোনো কর্মকর্তাকে ছুটি দেয়া হয়নি।
রাজধানীর একটি শাখার ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, সন্ধ্যার দিকে নেটওয়ার্ক পাই আমরা। যাদের জরুরি জমা ও বড় গ্রাহক তারা ব্যাংকেই আছেন। আমরা একটি একটি করে জমা নিচ্ছি।
এ বিষয়ে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা’র সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
পরে ইসলামী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে কালবেলাকে বলেন, সকালে আমাদের সার্ভার জটিলতার কারণে লেনদেন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এরপর সারাদিনে আমরা আর লেনদেন করতে পারিনি। এ সময় ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও এটিএম বুথ থেকে ওর টাকা তোলা যায়নি বলে অভিযোগ পেয়েছি। তবে সন্ধ্যায় আমাদের সার্ভার জটিলতা সমাধান হয়েছে। এখন গ্রাহকরা এটিএম থেকে টাকা তুলতে পারবেন।
এদিকে, আগের গ্রুপটি থেকে মুক্ত হওয়ার পর থেকে ব্যাংকটির শেয়ার দরও বাড়ছে। সবশেষ দেশের বড় পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, ডিএসই’তে শীর্ষ দর বৃদ্ধির তালিকায় উঠে এসেছে ইসলামী ব্যাংক। ‘ফ্লোর’ প্রাইস থাকা কোম্পানিটির শেয়ার দর আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। সবশেষ শেয়ারটি হাতবদল হয় ৫৪ টাকা ৩০ পয়সায়।
মন্তব্য করুন