কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি

এনআরবিসি ব্যাংককে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট

গ্রাফিক্স : কালবেলা
গ্রাফিক্স : কালবেলা

বেনামী শেয়ারহোল্ডার, দুর্নীতির দায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত সাবেক পরিচালক ও সাবেক কিছু কর্মকর্তা মিলে এনআরবিসি ব্যাংকের পরিবেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তারা বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। চিহ্নিত ওই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের কাছে চিঠি দিয়েছেন এনআরবিসি ব্যাংকের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বিগত বছরগুলোতে রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতার দাপটে দেশের ব্যাংকিং খাত চরম বেকায়দায় পড়ে। কিন্তু এর মধ্যে ব্যতিক্রম ছিল এনআরবিসি ব্যাংক। প্রভাবশালীদের ঋণ বিতরণ করা থেকে বিরত হয়ে এনআরবিসি ব্যাংক গ্রাম-বাংলার মানুষদের উন্নয়নে নানাবিধ কর্মসূচি হাতে নিয়ে তা বাস্তবায়ন করছে। দেশের অর্থনীতি যখন ক্রান্তিকাল পার করছিল সে মূহূর্তে এনআরবিসি ব্যাংক বিশেষ ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প চালু করে গত দুই বছরে বিনাজামানতে স্বল্প সুদে অন্তত ১ লাখ মানুষকে ঋণ দিয়েছে।

আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, এনআরবিসি ব্যাংক থেকে ঋণের নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাননি কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি। যার ফলে এনআরবিসি ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে গিয়েছে। এক সময় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ব্যাংকটি সমসাময়িক সব ব্যাংকের মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে উঠে এসেছে। পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৭ সালের পরবর্তী ৭ বছরে এনআরবিসি ব্যাংকের সব আর্থিক সূচকে অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। নিট মুনাফা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আমানত সংগ্রহ প্রায় সাড়ে ৪ গুণ বেড়েছে। ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৫ গুণ। জনবল বেড়েছে ৭ গুণেরও বেশি।

পরিচালনা পর্ষদের সঠিক নির্দেশনা এবং ম্যানেজমেন্টের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় এনআরবিসি ব্যাংকের ঋণ বিতরণ কার্যক্রম অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। করপোরেট খাতে ঋণ পুঞ্জীভূত না করে কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প এবং সরকারি বিল-বন্ডে বেশি ঝুঁকছে এনআরবিসি ব্যাংক। ঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্যোক্তা গড়ে তুলে প্রান্তিক পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে ব্যাংকটি। ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত বিতরণকৃত ১৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা এবং সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এসএমই খাতে দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা এবং বিনা জামানতে ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে রিটেইল ঋণ দেওয়া হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, এনআরবিসি ব্যাংক ২০১৩ সালে প্রবাসী উদ্যোক্তাদের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা ইঞ্জিনিয়ার ফরাসত আলী রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংকটির লাইসেন্স হাতিয়ে নেন। লাইসেন্স নেওয়ার শুরুতেই ব্যাপক চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হন তিনি। উদ্যোক্তাদের কাছে প্রায় দ্বিগুণ দামে শেয়ার বিক্রি করেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতা এবং অনুমোদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার নামে আরও টাকা আদায় করেন। এই টাকা দিয়ে নিজের পরিবারের ১৬ সদস্যের নামে এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার কিনে উদ্যোক্তা বনে যান।

ব্যাংক পরিচালনার শুরুতেই নিজে এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকদের নিয়ে অপকর্মে লিপ্ত হন তৎকালীন চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ফরাসত আলী। তার অপকর্মের অংশীদার ছিলেন তৌফিক রহমান চৌধুরী, এনায়েত হোসেন, সনোয়ার আলী, সরোয়ার জামান চৌধুরী, কামরুন নাহার সাকী, শামীম আলী, আশরাফ আলী, ফারুক আলী, ইজাহারুল ইসলাম হালদার, সাখাওয়াত আলী, জাহাঙ্গীর আলম, এসএম গোলাম রাব্বানী চৌধুরী প্রমুখ। এদের অধিকাংশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইতালি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। এদের মধ্যে বেনামী শেয়ারহোল্ডার রয়েছেন।

ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাংলাদেশে বসবাসরত কয়েকজন ব্যবসায়ীকে বেনামে শেয়ার কিনিয়েছিলেন ফরাসত আলী। খাতা-কলমে শেয়ারের মালিক প্রবাসী দেখানো হলেও অনেক শেয়ারের সুবিধাভোগী বাংলাদেশে বসবাসরত ব্যবসায়ীরা।

কামরুন নাহার সাকীর নামে থাকা শেয়ারের প্রকৃত মালিক শহীদুল আহসান, এনায়েত হোসেনের শেয়ারের প্রকৃত মালিক খান মুজিবুর রহমান, আমির হোসেনের শেয়ারের প্রকৃত মালিক মাকসুদুর রহমান এবং সরোয়ান জামান চৌধুরীর নামে দেখানো শেয়ারের প্রকৃত মালিক মামুন মুছা মিয়া। আইন অনুযায়ী বেনামে শেয়ারহোল্ডার দণ্ডনীয় অপরাধ এবং শেয়ারগুলো রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তযোগ্য। সেই প্রক্রিয়া শুরু হলেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তা করতে দেয়নি ফরাসত আলী গংরা।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, তৎকালীন চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ফরাসত আলী ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চেয়ারম্যান পদে থেকে এনআরবিসি ব্যাংকে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটে মেতে ওঠেন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বহু বছর। তবে শেষরক্ষা হয়নি। দুর্নীতির কারণে ফারমার্স ব্যাংক (পরবর্তীতে পদ্মা ব্যাংক) বন্ধের উপক্রম হলে এনআরবিসি ব্যাংকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তৎকালীন চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ফরাসত আলীসহ ৬ পরিচালককে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন এবং তাকে ২ বছরের জন্য আর্থিক খাতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগের চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ইঞ্জিনিয়ার ফরাসত আলী গংরা আবার বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আবারও ব্যাংকটিকে দখলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে ফরাসত আলী গংরা। এবার তাদের সঙ্গে যুক্ত হন এনআরবিসি ব্যাংকের অর্থ কেলেঙ্কারিসহ অসততার দায়ে চাকরি হারানো কয়েকজন কর্মকর্তা। এদের মধ্যে রয়েছেন তৎকালীন ডিএমডি শাফায়েত ওয়াহেদ, সৈয়দ মো. মহররম হোসেন, মাহফুজুর রহমান, রিয়াজ উদ্দিন আসিফ প্রমুখ। ব্যাংকটির সুনাম ধসিয়ে ব্যাংকটিকে বেকায়দায় ফেলতে ২০২০ সাল থেকে সরকারের নানা দপ্তর ও গণমাধ্যমে চিঠি পাঠিয়ে চলেছেন। এক্ষেত্রে অনেক পরিচালক, উদ্যোক্তা, শেয়ারহোল্ডার এবং কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে তাদের নামেও চিঠি পাঠিয়েছেন। সব সময় তারা এনআরবিসি ব্যাংককে ব্যর্থ হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর তারা আবার ভোল পাল্টে সেই একই তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছেন। তাদের লক্ষ্য চূড়ান্তভাবে এনআরবিসি ব্যাংককে ধ্বংস করা। সেই ধ্বংসের পাঁয়তারা হিসেবে ব্যাংকটির পরিবেশ অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে সামষ্টিকভাবে নানাভাবে অপপ্রচার ও অপকৌশলে লিপ্ত হয়েছেন।

চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, ধ্বংস থেকে শীর্ষে যাওয়ার সফলতম উদাহরণ এনআরবিসি ব্যাংক। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিজয়ের পর অসাধু চক্রটি তাদের পূর্বের ভোল পাল্টিয়ে এনআরবিসি ব্যাংক দখল করতে আবারও মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা ব্যাংকটিকে অস্থিতিশীল করার মাধ্যমে তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে উপদেষ্টাদের দপ্তর, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এনআরবিসি ব্যাংকের কর্মকতাদের কাছে ভিত্তিহীন বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ ধরনের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত বিচার-বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে এনআরবিসি ব্যাংকটির গতি রোধ না করে সামনের দিকে কীভাবে আরও এগিয়ে নেওয়া যায় সেজন্য আপনার সুবিবেচ্য দিকনির্দেশনা কামনা করছি। এনআরবিসি ব্যাংকের সার্বিক পরিবেশ স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শীত নিয়ে কী বলছে আবহাওয়া অফিস?

আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে পাবিপ্রবিতে বিক্ষোভ

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহযোগিতায় ২.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি

পানি আনতে গিয়ে ঘুষির আঘাতে প্রাণ গেল চা দোকানের কর্মচারীর

ধুনটে গৃহবধূকে ধর্ষণ মামলায় আদম ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার

কূটনৈতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভারত সরকার ব্যর্থ : ছাত্রদল

ভারতে সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ববিতে বিক্ষোভ মিছিল

এআইইউবি’র মিডিয়া অ্যান্ড মাস কমিউনিকেশন বিভাগের আয়োজনে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান

ভারতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে রাবিতে বিক্ষোভ

প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটিতে আন্ত-বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ পোস্টার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

১০

আগরতলায় সহকারী হইকমিশনে হামলা, প্রতিবাদে জবিতে বিক্ষোভ

১১

সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত

১২

‘এখন সবাই মুক্তভাবে কথা বলতে পারছেন’

১৩

ভেড়ামারায় শিক্ষা কর্মকর্তা অবরুদ্ধ

১৪

সিএমপির পাঁচ কর্মকর্তাকে বদলি

১৫

‘আ.লীগের মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ির কারণে তাদের এ শোচনীয় পরিণতি’

১৬

বর্ষসেরা শব্দ ‘ব্রেন রট’: টিকটক ও রিলসের সঙ্গে কী সম্পর্ক?

১৭

‘ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে’

১৮

মেহেরপুরের শহীদ আবু সাঈদ ক্লাবে হামলা-ভাঙচুর

১৯

ভারতে সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় উত্তাল ঢাবি

২০
X