ইসলামী ব্যাংক কীভাবে দখলে নেয় এস আলম গ্রুপ, সে বিষয়টি সাধারণ মানুষের অজানা থাকলেও এবার কথা বলেছেন ব্যাংকটির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল মান্নান।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের আয়োজনে ‘ব্যাংকিং খাতে দখলদারিত্ব উচ্ছেদ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে অনুষ্ঠিত এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংক দখল করে নেয় মোহাম্মদ সাইফুল আলমের মালিকানাধীন এস আলম গ্রুপ উল্লেখ করে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি আবদুল মান্নান বলেন, ৫ জানুয়ারি পরীবাগের বাসায় ছিলাস আমি। ভোরের দিকে হঠাৎ করেই আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা। ডিজিএফআই আমাকে বলে তাদের সঙ্গে যেতে হবে। পরবর্তী সময়ে আমাকে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা কচুক্ষেতের ডিজিএফআই কার্যালয়ে তুলে নিয়ে যায়।
আবদুল মান্নান বলেন, ডিজিএফআই কার্যালয়ে শুধু আমি এক নই একইভাবে নিজ নিজ বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয় ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানকে। এরপর আমাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে ব্যাংকটি দখলে নেয় এস আলম গ্রুপ।
পুরো প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করেন গোয়েন্দা সংস্থাটির তৎকালীন কিছু শীর্ষ কর্মকর্তা উল্লেখ করে ব্যাংকটির সাবেক এমডি বলেন, ক্ষমতায় তখন শেখ হাসিনার সরকার। ওপর মহলের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেই ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশকে ‘জামায়াতমুক্ত’ করার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে সংস্থাটি।
ইসলামী ব্যাংকের একটি অব্যবহৃত প্যাডে লেখা পদত্যাগপত্রে জোর করে স্বাক্ষর নেওয়া হয় আমার উল্লেখ করে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি বলেন, সে প্যাড ১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে চলতি ২০২৪ সাল পর্যন্ত কখনই ব্যবহার করা হয়নি।
পদত্যাগ করার সময়কে স্মরণ করে তিনি আরও বলেন, ওই দিন অনেক রাত পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের স্যাররা অফিস করেছেন। এস আলম গ্রুপ ওই দিনই ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনের কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করতে কাজ করেছে।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, ব্যাংক দখলের কাজগুলো কীভাবে হতে পারে একটি দেশের ব্যাংক খাতে। অথচ যে ব্যাংক খাত একটি দেশের অর্থনীতির প্রাণ। ইসলামী ব্যাংক দখলের পরবর্তী কয়েক বছর এস আলম গ্রুপের নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের অনেক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে বলে আক্ষেপ জানিয়ে আবদুল মান্নান বলেন, রাতারাতি ব্যাংক দখল কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটানোর সাহস কেউ না পায়।
মন্তব্য করুন