আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সেলিম, তার ছেলে ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ফজলে ফাহিম, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের প্রটোকল অফিসার (পিএস) আকিজ উদ্দিন, তাদের স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
বুধবার (২৮ আগস্ট) আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়ে অ্যাকাউন্ট জব্দ করতে বলেছে। আলাদা চিঠি দিয়ে এসব ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করতে বলা হয়েছে।
বিএফআইইউর চিঠিতে বলা হয়, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তার স্ত্রী ফাতেমা সেলিম, ছেলে শেখ ফজলে ফাহিম, শেখ ফজলে নাইম এবং মেয়ে শেখ আমিনা সুলতানা সানিয়া ব্যাংকের সব হিসাব আগামী ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
অন্য চিঠিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুল রহমান এবং তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানের ও তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে বলা হয়েছে। চিঠিতে সালমান ফজলুল রহমান এবং তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দেওয়া হয়েছে।
হিসাব জব্দ করাদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সব লেনদেন বন্ধ থাকবে। আগামী ৩০ দিন এসব হিসাবে কোনো ধরনের লেনদেন করতে পারবেন না তারা। প্রয়োজনে লেনদেন স্থগিত করার সময় বাড়ানো হবে। বিএফআইইউর নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, কোনো হিসাব স্থগিত করা হলে হিসাবসংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল যেমন- হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী ইত্যাদি চিঠি দেওয়ার তারিখ থেকে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের কাছে পাঠানোর জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের প্রটোকল অফিসার (পিএস) আকিজ উদ্দিনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা হিসাব ও তাদের মালিকানাধীন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ডিগ্রি পাস করার পর ২০০৯ সালে আকিজ উদ্দিন এস আলম গ্রুপের মালিকাধীন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার (ক্যাশ) হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরই মধ্যে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের প্রটোকল অফিসার (পিএস) হন। তিনি এস আলমের এস আলমের এতটাই মন জয় করেন যে, ১৪ বছরের ব্যবধানে অস্বাভাবিক পদোন্নতি পেয়ে বনে যান ইসলামী ব্যাংকের মতো দেশসেরা প্রতিষ্ঠিত একটি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি)।
অভিযোগ উঠেছে, গত ৬ আগস্ট ইসলামী ব্যাংক থেকে ৮৮৯ কোটি টাকার ‘বেনামি ঋণের’ মাধ্যমে অর্থ তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ডিএমডি আকিজ উদ্দিন। তবে, ব্যাংক কর্মকর্তাদের তৎপরতায় ৮৮৯ কোটি টাকা উত্তোলন আটকে যায়। এসব অর্থ তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছিল আকিজ উদ্দিনের মালিকাধীন ‘গোল্ডেন স্টার’ ও ‘টপ টেন ট্রেডিং হাউজ’ নামে দু’টি প্রতিষ্ঠান।
ইসলামী ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই আকিজ উদ্দিন নামে-বেনামে কোম্পানি খুলে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করতেন। তিনি আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে এস আলমের কোটি কোটি টাকা পাচারে সহযোগিতা করতেন। বেনামি ঋণ সৃষ্টি করে ওই অর্থ দিয়েই ইসলামী ব্যাংকের বিদেশি কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে এস আলমের বেনামি প্রতিষ্ঠানের নামে শেয়ার কিনতেও সহযোগিতা করতেন। আর এভাবেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
মন্তব্য করুন