এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মেজর (অব.) ডা. মো. রেজাউল হককে পরিচালক করে নতুন পর্ষদ গঠন হয়েছে।
রোববার (২৫ আগস্ট) এক চিঠিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০২৩ পর্যন্ত সংশোধিত) এর ধারা ৪৭ এর উপ-ধারা (১) এবং ধারা ৪৮ এর উপ-ধারা (১) এ প্রদত্ত সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি এর পরিচালনা পর্ষদ ২৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখের আদেশ নং : বিআরপিডি(বিএমএমএ)৬৫১/৯(১৮)ডিএ/২০২৪-৭৩৭৪ এর মাধ্যমে অবিলম্বে কার্যকর করে বাতিল করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষার্থে এবং ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিতকল্পে ও জনস্বার্থে ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ নতুনভাবে গঠনের নিমিত্তে নিম্নবর্ণিত ব্যক্তিবর্গকে পরিচালক/স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ প্রদান করা হলো-
নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মেজর (অব.) ডা. মো. রেজাউল হককে। আর স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন যথাক্রমে- বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মাকসুদা বেগম, ড. এম সাদিকুল ইসলাম, রূপালী ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোরশেদ আলম খন্দকার এবং মো. আনোয়ার হোসেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় ২০১৭ সালে এসআইবিএল দখলে নেয় এস আলম গ্রুপ। এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ৬ ব্যাংকের ঋণ বিতরণে গত ১৯ আগস্ট বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এসব ব্যাংক কৃষি, চলতি মূলধন, সিএমএসএমই, প্রণোদনা প্যাকেজ এবং নিজ ব্যাংকে রক্ষিত এফডিআরের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা দিতে পারবে। এলসি খোলার ক্ষেত্রে শতভাগ নগদ মার্জিন নিতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ বা সীমাতিরিক্ত বকেয়া স্থিতির নগদ আদায় ছাড়া বিদ্যমান বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়া যাবে না।
এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। এ ছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকও নিয়ন্ত্রণ নেয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। অথচ ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে ব্যাংকটি দেখিয়েছে মাত্র ১ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা।
একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটির পরিদর্শন টিম ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ পেয়েছে ৮ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যাংকটি দেখিয়েছে মাত্র ৬৪ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি ৮ হাজার ৬৩ কোটি টাকা গোপন করেছে।
ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে টানা ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের নজিরবিহীন দুঃশাসন ও স্বেচ্ছাচারিতার অবসান ঘটে। সরকার পরিবর্তনের পর এস আলম ঘনিষ্ঠরা গা-ঢাকা দিয়েছেন।