ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গত সোমবার ছাত্রদের দাবির মুখে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ চার কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। এদের মধ্যে দুজন ডেপুটি গভর্নর নিয়োগে কার্যক্রম শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিয়োগকৃত সার্চ কমিটি। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের মাধ্যমে বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন নির্বাহী পরিচালকের কাছ থেকে বায়োডাটা সংগ্রহ করেছে সার্চ কমিটি। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাইরেও অনেকের থেকে বায়োডাটা সংগ্রহ করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তথ্য বলছে, রোববার (১৮ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকে দ্বিতীয় দিনের মতো বৈঠক করেছে সার্চ কমিটি। এর আগে গত বৃহস্পতিবার প্রথম বৈঠক করেছিল কমিটি। সোমবারের বৈঠক শেষে আসতে পারে ডেপুটি গভর্নর নিয়োগের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত। এরপর অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত হবে সিদ্ধান্ত। আগেরবারের মতো এবারও সার্চ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নিয়োগের লক্ষ্যে চার সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তাফা কামাল মুজেরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য নজরুল হুদা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব বদরে মুনির ফেরদৌস। এই কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বদরে মুনির ফেরদৌস।
ডেপুটি গভর্নর নিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তাফা কামাল মুজেরী বলেন, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ডেপুটি গভর্নরদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। এ পদে যোগ্য ব্যক্তিদের স্থান দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতর ও বাহির যেখানে যোগ্যদের পাওয়া যাবে সেখান থেকেই নিয়োগ দেওয়া হবে। আর যেহেতু ডেপুটি গভর্নর পদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া হবে, তাই এবার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ৯ আগস্ট পদত্যাগ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। সেদিন তিনি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে তার পদত্যাগপত্র পাঠান। এরপর গত ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৩তম গভর্নরের দায়িত্ব পান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষক ড. আহসান এইচ মনসুর। এর আগে সোমবার শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাপের মুখে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর-১ কাজী ছাইদুর রহমান ও ডেপুটি গভর্নর-৩ খুরশিদ আলম পদত্যাগ করেন। পাশাপাশি পদত্যাগ করেন আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি উপদেষ্টা আবু ফারাহ মো. নাসের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরের চারটি পদেই নিয়োগ দেয় সরকার। সবশেষ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাহী পরিচালক মো. খুরশীদ আলম এবং প্রধান অর্থনীতিবিদ মো. হাবিবুর রহমান ডেপুটি গভর্নর হিসেবে ৪ বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো। এর আগে ২০১৯ সালেও একবার সার্চ কমিটি করা হয়েছিল। সে সময় ডেপুটি গভর্নর নিয়োগের জন্য পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমানকে প্রধান করে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিনই অস্থিরতা শুরু হয় আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকে। গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এবং চার ডেপুটি গভর্নরের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেন কর্মকর্তারা। এরপর গভর্নর ও দুই ডেপুটি গভর্নর পদত্যাগ করেন। একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও শীর্ষ দুই কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন।
মন্তব্য করুন