ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৬ হাজার ৭৬০ কোটি ৭৪ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে।
আজ বুধবার (৩১ জুলাই) ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মিলনায়তনে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এই বাজেট ঘোষণা করেন।
এ সময় মেয়র বাজেট সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ বছর মেয়াদি বেকারমুক্ত ঢাকা গড়ার পরিকল্পনার ঘোষণা দেন মেয়র তাপস।
বাজেটে ১ হাজার ৩৯৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা রাজস্ব এবং অন্যান্য উৎস থেকে ১০৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা মিলিয়ে ১ হাজার ৫০৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা আয়ের লক্ষ্য ঠিক করেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এ ছাড়া সরকারি ও বৈদেশিক উৎস থেকে মোট ৪ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা পাওয়ার আশা করছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
বাজেটে ৫৬৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা রাখা হয়েছে পরিচালন ব্যয় মেটানোর জন্য। সেখানে অন্যান্য ব্যয় ১৫ কোটি ২ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৩৬৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ডিএসসিসির নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন ব্যয় ১ হাজার ৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা ও, সরকারি ও বৈদেশিক সহায়ক উন্নয়ন ব্যয় ৪ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। সমাপনী স্থিতি ধরা হয়েছে ৮২৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬ হাজার ৭৫১ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিল ডিএসসিসি। এবারের বাজেটে মশক নিয়ন্ত্রণ ও জলাবদ্ধতা নিরসনে বরাদ্দ গত অর্থবছরের চেয়ে বেড়েছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে মশক নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে ৪৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৪০ কোটি টাকা দিয়ে মশা নিধনে ব্যবহৃত কীটনাশক কেনা হবে। এ ছাড়া ফগার, হুইল, স্প্রে মেশিন ও পরিবহনে ব্যয় হবে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। মশক নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রপাতি কেনা হবে ৫০ লাখ টাকার। গত অর্থবছরে মশক নিয়ন্ত্রণে ৪৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখলেও সংস্থাটি খরচ করেছে ৪৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
এবারের বাজেটে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ১০০ কোটি টাকা এবং খাল, জলাশয়, নর্দমা পরিচ্ছন্নতায় ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে পানির পাম্প ক্রয় ও স্থাপনে আরও এক কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত অর্থবছরে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ৪০ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং খাল, জলাশয় ও নর্দমা পরিচ্ছন্নতা খাতে ২৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা খরচ করেছে ডিএসসিসি। এবারের বাজেটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের প্রধান সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে ১১৭ কোটি রাখা হয়েছে।
এদিকে বার্ষিক বাজেট সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ বছর মেয়াদি বেকারমুক্ত ঢাকা গড়ার পরিকল্পনার ঘোষণা দেন মেয়র তাপস। এই প্রকল্পের নাম হবে ‘মেয়র শেখ তাপসের কর্মসংস্থান কর্মসূচি- ঢাকা হবে বেকার মুক্ত নগরী’। ঘোষণা দিয়ে মেয়র বলেন, ঢাকাবাসীর কর্মসংস্থানের দায়িত্ব অবশ্যই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন যথাযথভাবে পালন করবে। ঢাকা হবে বেকার মুক্ত নগরী।
মেয়র তাপস বলেন, আমরা অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে দেখছি যে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাসরত ভোটার ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাড়ির ট্যাক্স পরিশোধকারী পরিবারের অনেকেই এখনো বেকার রয়েছে। তারা যথাযথ কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাই ঢাকাবাসীর সব পরিবারের কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে আমি পাঁচ বছর মেয়াদি এই কর্মসূচি ঘোষণা করছি।
ডিএসসিসি মেয়র বলেন, আমরা শুধু অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য নয়, তাদের পারিবারিকভাবে সহায়তা, তাদের সঙ্গে থাকার জন্য, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার জন্য আমরা নিবেদিত থাকবো। সেটা পুঁজি হোক সে কিংবা দোকান বরাদ্দ দিয়ে হোক আমরা থাকব।
মেয়র বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে সুশাসন নিশ্চিত হয়েছে, তাই আয় আগের চেয়ে বেড়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে গৃহকর থেকে আয় হয়েছিল ২০০ কোটি টাকার কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা ৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে আমি ঢাকাবাসীর ওপর কোনো রকমের করের বোঝা না চাপিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছিলাম। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিগত ৪ বছরে আমরা কোনো খাতে কোনো কর বৃদ্ধি করিনি। বরং এ সময়ে ২৫টি নতুন খাত সৃষ্টি করা হয়েছে এবং ১৪টি নতুন খাত হতে আমরা রাজস্ব আদায় শুরু করেছি। ফলে, আয়ের খাত বৃদ্ধি, কর ফাঁকি রোধ এবং বকেয়া কর আদায়ের মাধ্যমে আমরা রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি।
মন্তব্য করুন