কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৪, ১১:৩৭ পিএম
আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৪, ১১:৩৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক, কমেছে সবজির দাম

পুরোনো ছবি
পুরোনো ছবি

কোটা আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সারা দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল দুর্বৃত্তরা। দেশের সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে নাশকতা চালায় তারা। এতে সারা দেশ থেকে পণ্যবাহী কোনো গাড়ি ঢাকায় ঢুকতে পারছিল না। ফলে সরবরাহ সংকটে স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজার। সবজি, মাছ-মুরগিসহ নিত্যপণ্যের দামও বেড়ে হয়ে যায় আকাশছোঁয়া। এতে বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা এ অবস্থার অনেকটাই অবসান হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় রাজধানীতে বেড়েছে পণ্যের সরবরাহ। যার ফলে দামও কিছুটা কমেছে।

গত রোববার থেকে সারা দেশের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হয়। এতে নগরীর বাজারগুলোতে বাড়তে থাকে পণ্যের সরবরাহ, যার প্রভাব পড়েছে দামেও। পাইকারি বাজারে দাম কমায় খুচরা পর্যায়ে ক্রেতারাও কিছুটা কমে পণ্য কিনতে পারছেন।

মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাজধানীর বৃহৎ পাইকারি বাজার শ্যামবাজার, কাপ্তানবাজার ও কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সব ধরনের সবজি, মাছ, মুরগি, ডিমসহ নিত্যপ্রয়োজনী পণ্যের সরবরাহ ভালো।

সবজির পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে ব্যবসায়ী পারভেজ হাসান বলেন, গত এক সপ্তাহের তুলনায় আজ (গতকাল) সরবরাহ অনেক বেশি। রাস্তায় কোনো ঝামেলা নেই। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সবজি ভর্তি ট্রাক-লরি রাজধানীতে ঢুকছে। বাজারে চাহিদা অনুযায়ী এখন প্রায় সবরকম সবজি পাওয়া যাচ্ছে। সরবরাহ সংকট নেই, যার ফলে দাম কমেছে। শ্যামবাজারের আতিকউল্লাহ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী জাহিদুল ইসলাম বলেন, আজ পাইকারিতে কাঁচামরিচের কেজি ১৮০-১৯০ টাকা, যা গত কয়েকদিনের তুলনায় অনেক কম। দেশের পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হলে মরিচসহ সব সবজির দাম আরও কমবে।

কারওয়ান বাজারের আলু ও পেঁয়াজের পাইকারি বিক্রেতা মোহাম্মদ জসীম বলেন, দুদিন ধরে বাজারে সরবরাহের কোনো সংকট নেই। পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে প্রকারভেদে ১০০-১০৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে আলুর দাম আগের মতোই আছে। প্রতি কেজি ৫৩-৫৫ টাকা।

রাজধানীর নয়াবাজার, রায়সাহেব বাজার, হাতিরপুল বাজার, নিউমার্কেট কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক। ক্রেতাও গত কয়েকদিনের তুলনায় বেশি। বিক্রেতারা আশা করছেন, এক সপ্তাহ যে ক্ষতি হয়েছে, বিক্রি বাড়ায় সেটা দ্রুত কিছুটা কমিয়ে আনা যাবে।

হাতিরপুল কাঁচাবাজারে ক্রেতা আলিফ হোসেন বলেন, বাজারে সব কিছুর দাম গত কয়েকদিনের তুলনায় আজ (মঙ্গলবার) কম। তাই আজ একটু বেশি করে কেনাকাটা করছি। মাছ-মাংস, ডিম, আলু-পেয়াঁজ, সবজি এক সপ্তাহের জন্য একবারে কিনে রাখলাম। তিনি বলেন, ৬০০ টাকার কাঁচামরিচ আজ ২১০ টাকায় কিনলাম।

হাতিরপুল বাজারের মুরগি বিক্রেতা ফরহাদ ইসলাম বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম ‘কিছুটা’ স্বাভাবিক। গত দুদিনে দাম বাড়েনি। আজ ১৭০-১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ পাচ্ছি, সংকট নেই।

কাপ্তানবাজারে ক্রেতা মো. রাজু হাওলাদার বলেন, গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ ডিম-মুরগিসহ সব নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক। দাম বাড়েওনি, কমেওনি। তবে সবজির দাম কমেছে কিছুটা। গত এক সপ্তাহ আকাশছোঁয়া দাম ছিল।

শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সেলিম কালবেলাকে বলেন, গত এক সপ্তাহ রাজধানীতে সহিংসতার কারণে সবজির সরবরাহ চেইন বন্ধ ছিল। যা আসছিল, তাও আবার দ্বিগুণ দামে। তবে দুদিন ধরে রাজধানীতে সরবরাহ বেড়েছে। রাজধানীর প্রবেশপথগুলো এখন স্বাভাবিক হয়েছে। এতে করে আজ খুচরা বাজারেও সবজির দাম কমে অর্ধেক হয়ে গেছে।

এদিকে বাজারে মুরগি ও ডিমের সরবরাহ বেড়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, সারা দেশে যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় দুদিন ধরে রাজধানীতে মুরগি ও ডিমের সরবরাহ স্বাভাবিক। নিয়মিতভাবেই খামারিরা মুরগি-ডিম পাঠাচ্ছেন।

বাজারে দুদিন আগেও যে কাঁচামরিচ ৬০০ টাকা ছিল, তা গতকাল ২০০ থেকে ২১০ টাকা কেজিতে মিলেছে। ৯০-১০০ টাকার বরবটি ও কচুরমুখী গতকাল বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, যা একদিন আগেও ছিল ১০০-১২০ টাকা কেজি। কাঁকরোলের দাম কেজিতে ২০ টাকা কমে এখন ৭০ থেকে ৮০, ২০০ টাকার গাজর মিলছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। ফুলকপির দাম ১০-২০ টাকা কমে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টমেটোর কেজি ১৭০ থেকে ১৮০; চিচিঙ্গা, ধুন্দল ও ঝিঙার দাম কমে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় নেমেছে। পটোল ও পেঁপের কেজি এখন ৩০ থেকে ৫০ টাকা। আকারভেদে লাউয়ের দাম রাখা হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। তবে আলু-পেঁয়াজের দাম আগের মতোই। আলুর কেজি ৫৫ থেকে ৬০ এবং পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা। মুরগির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। সোনালি ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা। ডিমের ডজন ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। মাছের বাজারে রুই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। তেলাপিয়া, পাঙাশ ও চাষের কই মাছের প্রতি কেজি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। পাবদার কেজি ৪৫০ থেকে ৬০০, শিং ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং কাতলা ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা।

এ ছাড়া বাজারে চাল, ডাল ও তেলের দাম আগের মতোই আছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে মুদি দোকান ঘুরে দেখা যায়, চাল সরু (নাজির-মিনিকেট) প্রতি কেজি ৭০-৭৮ টাকা, চাল (মাঝারি) পাইজাম-লতার কেজি ৫৫-৬২ টাকা, মোটা চাল স্বর্ণা, চায়না প্রতি কেজি ৫০-৫৫ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৫০-১৫৫ টাকা, বোতলজাত প্রতি লিটার ১৬৫-১৬৭ টাকা। মসুর ডালের কেজি ১১০-১৫০ টাকা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
ঘটনাপ্রবাহ: কোটা সংস্কার আন্দোলন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মিছিলে বিএনপি নেতার গুলির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

রৌমারীতে ব্যবসায়ীদের আহ্বায়ক কমিটির শপথ অনুষ্ঠিত

৬৫ ভরি স্বর্ণ ছিনিয়ে নেয়ায় মামুনের বিরুদ্ধে যুবদলের মামলা

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

ক্ষমা পেয়ে আমিরাত থেকে ১২ জন ফিরছেন চট্টগ্রামে

‘ছাত্র জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকার দুই ভাবে পরাজিত’

মহানবীকে (সা.) কটূক্তিকারী সেই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা

শিবচর আঞ্চলিক সড়কে গ্রামবাসীর বৃক্ষরোপণ

মাদ্রাসাছাত্রকে বলাৎকার চেষ্টার অভিযোগ ধামাচাপা, ৭ দিন পর ফাঁস

১২ দিনেও মেলেনি রানীনগরে নিখোঁজ নার্গিসের সন্ধান

১০

দায়িত্বশীলদের নিয়ে সাতক্ষীরায় ছাত্র শিবিরের সমাবেশ

১১

আযহারী শিক্ষার্থীরা হবে বাংলাদেশ ও মিশরীয় ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন : মিশরীয় রাষ্ট্রদূত

১২

রাজশাহীতে বস্তাভর্তি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার

১৩

আন্দোলনের ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ কর্মীকে গণধোলাই

১৪

আশুলিয়ায় গার্মেন্টস শ্রমিক অসন্তোষ ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে শ্রমিক সমাবেশ

১৫

কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

১৬

পাকিস্তানের জলসীমায় বিপুল তেল-গ্যাস মজুতের সন্ধান

১৭

বিসিবির দুর্নীতির তদন্ত দাবি সাবেকদের

১৮

পাবিপ্রবি ছাত্রলীগ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ

১৯

জেল খেটেছি তবু শেখ হাসিনার মতো পালিয়ে যাইনি : সাবেক এমপি হাবিব

২০
X