এখনো পুরোপুরি নেভেনি বঙ্গবাজারের আগুন। বিভিন্ন জায়গা থেকে উড়ছে ধোঁয়া। চারপাশে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী, সরিয়ে নিচ্ছেন অবশিষ্ট সম্বল। তাদের মধ্যেই একজন মো. সাদ্দাম হোসেন। পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া টাকা হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তিনি। কত টাকা ছিল জানতে চাইলে বলেন, এখানে ৫০ হাজার টাকা ছিল। আর দোকানে ছিল চার লাখ টাকার মালামাল। এখন সব শেষ।
সাদ্দামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর। থাকেন গুলিস্তানে। দেনাপাওনা করে তিন মাস আগে বঙ্গবাজারে দোকান নিয়েছিলেন তিনি। দোকানের নাম রেখেছিলেন মামুনা গার্মেন্টস। তার মতো অনেক ব্যবসায়ীর স্বপ্ন পুড়ে গেছে এই আগুনে। এখন শেষ সম্বলের খোঁজে বঙ্গবাজারে আসছেন তারা। কেউ শেষটুকু নিয়ে যেতে পারছেন, কেউ পাচ্ছেন না কিছুই।
রাজধানীর বঙ্গবাজারে লাগা ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণের খবর আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে গতকাল মঙ্গলবারই। এরপর পেরিয়ে গেছে ২৯ ঘণ্টা। কিন্তু এখনো কিছু কিছু জায়গায় জ্বলছে আগুন, উড়ছে ধোঁয়া। আজ বুধবার রাজধানীর বঙ্গবাজারে পুড়ে যাওয়া মার্কেটে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, আগুন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এরপরও কিছু জায়গা থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যাচ্ছে। যেহেতু ভেতরে কাপড়ের গোডাউন রয়েছে, এ জন্য ধোঁয়া বের হচ্ছে। তবে আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণ করতে আমরা কাজ করছি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। যেসব জায়গা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে, সেসব জায়গায় পানি ছিটাচ্ছেন তারা।
ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিটের দীর্ঘ ছয় ঘণ্টার চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এর আগে গতকাল সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন লাগে। সংবাদ পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের একের পর এক ইউনিট ঘটনাস্থলে যায় বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাফি আল ফারুক।
দুপুর সাড়ে ১২টায় যখন আগুন নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা আসে, ততক্ষণে সব শেষ। চোখের সামনে অন্তত ৫ হাজার ব্যবসায়ী দেখলেন তাদের জীবিকার সব সম্বল পুড়ে মিশে যাচ্ছে বাতাসে। আগুনে পুলিশ সদর দপ্তরের ব্যারাকের নথি ও আসবাবও পুড়েছে।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গতকাল সকাল ৬টা ১০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পান তারা। ২ মিনিটে তাদের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট দীর্ঘ ৬ ঘণ্টার চেষ্টার পর দুপুর ১২টা ২৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত বঙ্গবাজারের এনেক্স ভবনে আগুন জ্বলছিল।
খোলামেলা জায়গায় আগুন নেভাতেও বেশ বেগ পেতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের। পানি না পাওয়ায় দীর্ঘ সময় লেগেছে আগুন নেভাতে। তবে ভয়াবহতা আঁচ করে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশ এবং র্যাব সদস্যরাও অংশ নেন আগুন নির্বাপণ ও ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে। আগুন নেভাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী, দোকানকর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবকও অংশ নেন।