মাসুদ রানা
প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০২:৩৭ এএম
অনলাইন সংস্করণ

শুরুই হয়নি সাক্ষ্য গ্রহণ

শুরুই হয়নি সাক্ষ্য গ্রহণ

রাজধানীর চকবাজার এলাকায় জহিরুল ইসলাম সুমন তার স্ত্রী শিল্পী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। অসুস্থ সন্তানের ওষুধ কিনতে গিয়ে চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডে মারা যান স্ত্রী। এরপর ছয় মাসের ফাতেমা ও সাড়ে চার বছরের মারিয়াকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন সুমন। দুই সন্তানও বড় হয়ে যাচ্ছে। বাবা সুমনের দায়িত্ব বেড়েছে। অথচ স্ত্রী নিহতের ঘটনায় সরকার বা ভবন মালিক কারোর কাছ থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। চার বছর পেরিয়ে গেলেও চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডে সুমনের স্ত্রীসহ ৭০ জন নিহতের ঘটনায় করা মামলার বিচারও শেষ হয়নি।

এ বিষয়ে সুমন কালবেলাকে বলেন, ‘ছোট দুই কন্যাসন্তান নিয়ে সুখে বসবাস করছিলাম। অসুস্থ মেয়ের জন্য ওষুধ কিনতে যায় আমার স্ত্রী। এরপর অগ্নিকাণ্ডে সে মারা যায়। কিন্তু এ পর্যন্ত সরকার বা ভবন মালিকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পাইনি। ভবন নতুনভাবে চালু হয়েছে, আসামিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু চার বছরেও বিচার পেলাম না। ভবনের মালিকসহ অন্যদের বিচার চাই।’

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘দুই সন্তান নিয়ে অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছি। মা না থাকলে তো সন্তানরা কখনোই পরিপূর্ণ ভালোবাসা পায় না। তাদের যথাসম্ভব ভালো রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। অর্থনৈতিক কারণে অনেক কষ্টে আছি। দুই সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য সরকার বা মালিক পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।’

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে ৭০ জন নিহত হন। এ ঘটনায় চকবাজার মডেল থানায় ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকের দুই ছেলে সোহেল-হাসানসহ অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ মামলার পর দেখতে দেখতে চার বছর কেটে গেছে। মামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়নি। এতে এ মামলার বিচারকাজ আটকে রয়েছে।

সাক্ষ্য গ্রহণের অপেক্ষায় মামলাটি

প্রায় তিন বছর তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার পরিদর্শক আবদুল কাইউম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪, ৪২৭, ৩৩৬ ও ৩৪ ধারায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে মামলাটি বিচারের জন্য ওই বছরের ২৮ মার্চ মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। চার মাস পর চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি আদালত আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে দেন। একই সঙ্গে আট আসামির বিরদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এ মামলায় আগামী ১৪ মার্চ সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

ভবনের মালিক দুই ভাইসহ আটজন জামিনে

এ মামলায় ভবনের মালিক দুই ভাই মোহাম্মদ হাসান সুলতান ও সুলতান সোহেলসহ আটজন জামিনে রয়েছেন। তারা সবাই বিচারিক আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। গত ৩১ জানুয়ারি অভিযোগ গঠনের দিন তারা আদালতে হাজিরা দেন। এ মামলায় অভিযুক্ত অপর ছয় আসামি রাসায়নিকের গুদামের মালিক ইমতিয়াজ আহমেদ, পরিচালক মোজাম্মেল ইকবাল, ম্যানেজার মোজাফফর উদ্দিন, মোহাম্মদ জাওয়াব আতির, মো. নাবিল ও কাশিফ উদ্দিন জামিনে রয়েছেন।

চালু হয়েছে চুড়িহাট্টার সেই ভবন

চার বছর আগে চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ের ওয়াহেদ ম্যানশন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় পুরো এলাকা। এতে ৭০ জন নিহত হন। আগুনে ওই ভবনটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার পর ভবনটি নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে। কয়েক মাস আগে এ ভবনটি ব্যবসায়িক কাজে চালু হয়েছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ওয়াহেদ ম্যানশনের চারতলার ভবনটি নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে। ভবনের নিচতলায় বেকারি, কম্পিউটার ও টেলিকমের দোকান ভাড়া দেওয়া হয়েছে। দোতলায় তিনটি বেসরকারি ব্যাংকও তাদের কার্যক্রম পরিচালনার ভবন ভাড়া পেয়েছে। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় সংস্কার অবস্থায় খালি রয়েছে।

মামলার চার্জশিটে যা বলা হয়েছে

এ মামলায় আসামি মোহাম্মদ হাসান সুলতান ও সুলতান সোহেল অসৎ উদ্দেশ্যে এবং অধিক লাভের বশীভূত হয়ে আসামি ইমতিয়াজদের সঙ্গে আবাসিক বাড়িটি গোডাউন হিসেবে ভাড়া দেন। অর্থাৎ ভবনের মালিক এবং গোডাউন ভাড়াটিয়াদের অবহেলার কারণেই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আসামি মোজাফফর মানুষের জানমালের ক্ষতি হতে পারে জেনেও প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আসামি কাশিফ ও নাবিল গোডাউনের মালিক না হলেও সেলসম্যান হিসেবে ব্যবসা করেছেন। আসামি ইমতিয়াজ পার্ল ইন্টারন্যাশনালের মূল মালিকের ব্যবসায়িক পার্টনার ছিলেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মোস্তফা পাঠান কালবেলাকে বলেন, ‘ভবনের মালিক সোহেল ও হাসান সম্পূর্ণ নির্দোষ, তারা এ ঘটনায় অন্যতম ভুক্তভোগী। তাদের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ গঠন করেছেন। এ অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি।’

ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মাজহারুল হক কালবেলাকে বলেন, ‘এ মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। সাক্ষীদের বিরুদ্ধে সমন জারি করা হয়েছে। সাক্ষীদের আদালতে হাজির করে দ্রুত এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করা হবে।’

চুড়িহাট্টায় নিহতের স্মরণে নানা কর্মসূচি

চার বছর আগে চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডে নানা কর্মসূচি নিয়েছে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত সংস্থা। আজ সোমবার কালোব্যাজ ধারণ, ঘটনাস্থলে এক মিনিট নীরবতা পালন, আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন, বিশেষ মোনাজাত এবং তবারক বিতবরণ করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সকাল ৯টার মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস

২৭ এপ্রিল : আজকের নামাজের সময়সূচি

গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আজ

নাটোরে অপহরণের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৭

ছাত্র ইউনিয়নের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত 

ভোট দেওয়ার শর্তে কোরআন ছুয়ে নিতে হবে টাকা, কল রেকর্ড ভাইরাল

‘বাংলাদেশের গণমাধ্যম ভয়াবহ সঙ্কটকাল পার করছে’

 ছেলের কিল-ঘুষিতে শিক্ষক পিতার মৃত্যু

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুনের ১০ বছর আজ

‘ভয়াল ২৯ এপ্রিল, ১৯৯১ স্মরণ ও প্যারাবন নিধন প্রতিবাদ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত

১০

শাহ আমানতে ৯০ হাজার দিরহামসহ যাত্রী আটক

১১

আবুধাবিতে চালু হচ্ছে উড়ন্ত ট্যাক্সি, ৩০ মিনিটেই দুবাই

১২

গরু চোরাচালানে জড়িত ছাত্রলীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধি

১৩

ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ চায় খেলাফত মজলিস

১৪

বাংলাদেশ এসএসসি ৯৮ ফ্রেন্ডস ফাউন্ডেশন যাত্রা শুরু

১৫

চিকিৎসার জন্য আমেরিকায় গেলেন আমির খসরু 

১৬

উত্তর কোরিয়া থেকে অস্ত্র নিয়ে চীনা বন্দরে রুশ জাহাজ

১৭

বর্জ্যবাহী গাড়ির ধাক্কায় নিহতের ঘটনায় ব্যবস্থা : তাপস

১৮

বর্ণিল আয়োজনে রূপায়ণ সিটি উত্তরায় সামার ফেস্ট-২০২৪ অনুষ্ঠিত

১৯

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা 

২০
*/ ?>
X