৯ মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলেন আব্দুল মজিদ

র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার যুদ্ধাপরাধী আব্দুল মজিদ।
র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার যুদ্ধাপরাধী আব্দুল মজিদ।ছবি : সংগৃহীত

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ও দীর্ঘদিন ধরে পলাতক আসামি আব্দুল মজিদকে মাদারীপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-৩।

র‍্যাব জানায়, আসামির বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়। ১৯৭০ সালে গঠিত জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী আব্দুল মজিদ পূর্বধলা থানা জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া আলবদর পূর্বধলা রামপুর থানা কমিটির প্রধানও ছিলেন তিনি।

র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘পূর্বধলা রামপুর মৌদাম গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকসহ তার আপন দুই ভাই এবং পাঁচজন চাচাতো ভাই মিলে একই বাড়িতে মোট সাতজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণের পাশাপাশি এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন সহযোগিতা করতেন। এ জন্য আলবদর কমিটির প্রধান আব্দুল মজিদের শত্রুতে পরিণত হন তারা।

১৯৭১ সালে ২১ আগস্ট দুপুরে আব্দুল মজিদ তার দলবল নিয়ে বাড়হা গ্রামের আব্দুল খালেকের বাড়িতে আক্রমণ করেন। সে সময় বাড়িতে অবস্থানরত আব্দুল খালেকসহ মুক্তিবাহিনীর ৯ মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেন। হত্যার পর বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের লাশটি কংস নদে ফেলে দেওয়া হয় এবং অপর মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ কোকখালী নদীতে বস্তাবন্দি করে ফেলা হয়।

এই হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি তারা আব্দুল খালেকের বাড়িতে লুটপাট চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় আব্দুল খালেকের ভাই আব্দুল কাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে কোনোরকমে প্রাণ বাঁচান।

তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আব্দুল মজিদসহ চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন আব্দুল কাদের। পরে মামলার গভীর তদন্তে আরও তিনজনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে এবং আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত সাতটি অভিযোগই প্রসিকিউশনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়।

২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মোট সাতজন আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করা হয়। এটি মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা যুদ্ধাপরাধের মামলায় ৩৬তম রায়। বিচার চলাকালে এই মামলার দুজন আসামি (আহম্মদ আলী ও আব্দুর রহমান) মারা যান এবং রায় হওয়ার পর পলাতক অবস্থায় মারা যান আরও দুই আসামি (রদ্দিন মিয়া ও আব্দুস সালাম বেগ)।

র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার যুদ্ধাপরাধী আব্দুল মজিদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার

এই মামলার আরও দুজন আসামি (আব্দুল খালেক তালুকদার ও কবির খাঁ) বর্তমানে পলাতক। এদিকে, মামলাটির বিচারিক প্রক্রিয়া চলমান থাকাকালে ২০১৫ সালে আব্দুল মজিদ তার নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন এবং ফকিরাপুল এলাকায় কিছুদিন আত্মগোপনে থাকেন। এরপর তার আত্মীয়ের সহযোগিতায় মাদারীপুরে গিয়ে আত্মগোপন করে একটি কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে পলাতক জীবন শুরু করেন। ২০১৫ সাল থেকে মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালে তিনি কখনোই আদালতে হাজিরা দেননি।

গতকাল বুধবার রাতে র‍্যাব-৩-এর একটি আভিযানিক দল মাদারীপুর সদর এলাকা থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত এবং দীর্ঘদিন ধরে পলাতক আসামি মো. আব্দুল মজিদকে গ্রেপ্তার করেছে।

র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক বলেন, আব্দুল মজিদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার এড়াতে নিয়মিত বাসা পরিবর্তন করতেন।

এ সময় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে তিনি অন্যের রেজিস্ট্রেশনকৃত সিমকার্ড দিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন। আত্মগোপনে থাকাকালে তিনি সাধারণত জনসমাগম স্থান, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলতেন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com