বাবার পরকীয়ার বলি শিশু ইশা, ১১ মাস পর রহস্য উদ্ঘাটন

নিহত শিশু ইরিন সুলতানা ইশা
নিহত শিশু ইরিন সুলতানা ইশা

নাটোরের লালপুরে প্রায় ১১ মাস পর সাড়ে তিন বছরের শিশু ইরিন সুলতানা ইশা হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। পিতার অনৈতিক কার্যকলাপের সময় বিরক্ত করলে গলা চেপে ধরায় শ্বাসরোধে মারা যায় ইশা। এ ঘটনায় তিনজনের নামে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ।

গত বছর ১৫ মার্চ ২০২২ উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের সাধুপাড়া গ্রামের একটি ডোবা থেকে ওই শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। সে ওই গ্রামের আনসার সদস্য মো. ইলিয়াস আলীর একমাত্র সন্তান। ওই দিন রাতে নিহতের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে লালপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

আজ শনিবার লালপুর থানার ওসি মোহা. মনোয়ারুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আসামিরা হলেন, আড়বাব ইউনিয়নের সাধুপাড়া গ্রামের নিহত ইশার বাবা মো. ইলিয়াস আলী (৩১), প্রতিবেশী মো. নূর উদ্দিনের স্ত্রী মোছা. শোভা খাতুন (৩৫) এবং মো. ইসলাম আলী মোল্লার স্ত্রী মোছা. শেফালী বেগম (৪৮)।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক হীরেন্দ্রনাথ প্রামাণিক ও এসআই মোল্লা সোহেল মাহমুদ দৈনিক কালবেলাকে বলেন, মামলার বাদী নিহতের বাবা মো. ইলিয়াস আলী ও মোছা. শোভা খাতুন সম্পর্কে পরস্পর চাচি ও ভাতিজা। শোভা খাতুনের স্বামী কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ায় গত ২০২১ সালের জুন মাসে অপারেশন করে দুর্বল হয়ে যান। শোভা খাতুন শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য এক পর্যায়ে ইলিয়াস আলীর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

ঘটনার দিন ১৫ মার্চ ২০২২ তারিখে ইলিয়াস আলী নাস্তা করে মেয়ে ইরিন সুলতানা ইশাকে কোলে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে শোভা খাতুনের বাড়িতে যান। মেয়েকে শোভা খাতুনের বাড়ির বারান্দার সিঁড়ির ওপর দাঁড় করিয়ে তারা শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টাকালে মেয়ে ইশা বাবাকে ধরে টানাটানি শুরু করে। এ সময় ইলিয়াস আলী উত্তেজিত হয়ে ইশাকে থাপ্পড় মারেন। ইশা মাটিতে পড়ে কান্নার চেষ্টা করলে মেয়ের গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করে।

এরপর ইশার মৃতদেহ পার্শ্ববর্তী মোছা. শেফালী বেগমের (৪৮) বাড়ির সামনে সিঁড়ির ওপর ফেলে রাখেন। ওই সময় শেফালী বেগম বের হয়ে দেখেন বাড়ির মুরগি ইশার মাথায় ঠোকর দিলেও কোনো সাড়া দিচ্ছে না। তখন তিনি এগিয়ে গিয়ে ইশাকে মৃত অবস্থায় দেখে মৃতদেহ বাড়ির বাইরে টয়লেটের মধ্যে রেখে দেন। কিছুক্ষণ পর ইশার মা তার মেয়েকে খোঁজাখুঁজি করলে শেফালী বেগম ভয় পেয়ে মৃতদেহ বস্তায় ভরে বসতবাড়ির পশ্চিম পার্শ্বে ডোবার মধ্যে ফেলে দেন।

ইশার মা মোছা. আঁখি খাতুন মেয়েকে না পেয়ে স্বামী ইলিয়াস আলীকে মোবাইলে জানান। ইলিয়াস আলী বাড়িতে এসে ঘটনার বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে স্থানীয় মসজিদের মাইকে প্রচার চালান ও সাধারণ ডায়েরি করার জন্য থানায় আসেন। এদিকে প্রতিবেশী কয়েকজন আমবাগানে কিটনাশক দেওয়ার জন্য যাওয়ার সময় পাশের ডোবায় বস্তার মধ্যে মৃতদেহ দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেন। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।

লালপুর থানার ওসি মোহা. মনোয়ারুজ্জামান দৈনিক কালবেলাকে বলেন, মামলার বাদী ‘তদন্ত প্রাপ্ত আসামি’ নিহতের বাবা মো. ইলিয়াস আলী ও মোছা. শোভা খাতুন পরস্পর যোগসাজশে ইশাকে হত্যা ও অপর আসামি মোছা. শেফালী বেগম কর্তৃক মৃতদেহ গুম করার অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য প্রমাণিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ঘটনার দিন আটক মোছা. শোভা খাতুন জামিনে মুক্ত রয়েছেন। অপর দুই আসামি ইশার বাবা মো. ইলিয়াস আলী ও মোছা. শেফালী বেগম পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.
logo
kalbela.com