নগরের সবুজ অঞ্চল রক্ষায় প্রয়োজন হলে বিআরটিএ ও সেতু ভবন ভাঙতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। আজ বুধবার রাজধানীর গুলশানের এক হোটেলে ‘নিম্ন আয়ের মানুষের আবাসন ও নাগরিক সুবিধাসমূহ : প্রেক্ষিত ঢাকা’ শিরোনামে নগরকথা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মেয়র এ মন্তব্য করেন তিনি।
মেয়র আতিক বলেন, ‘এয়ারপোর্ট সড়কে যে সেতু ভবন এখন আপনারা দেখছেন; সেখানে ছিল একটি সিটি ফরেস্ট। কেন এবং কাদের পরামর্শে এই ফরেস্ট নষ্ট করে সেখানে সেতু ভবন করা হলো, জানি না। সেতু ভবনের পাশে আগে কিছু গাছপালা থাকলেও পরে সেগুলো কেটে সেখানে বানানো হলো বিআরটিএ ভবন। সেদিন দেখলাম, বাকি গাছগুলো কাটা হচ্ছে। তাদের কাছে জানলাম, গাছ কেটে সেখানে নতুন আবাসন প্রকল্প করা হবে। পরে আমি সেটা বন্ধ করেছি।’
আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাউজক নতুন ড্যাপ করেছে। আমরা দেখতে চাই, ড্যাপে সেতু ভবনের জায়গাকে কী হিসেবে দেখানো হয়েছে। সেটাকে যদি সিটি ফরেস্ট হিসেবে দেখানো হয়, তাহলে সেতু ভবন ও বিআরটিএ ভবন ভেঙে ফেলা হবে।’
এ সময় ডিএনসিসি মেয়র অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরাই নিজেরাই নিজেদের প্রিয়, বসবাসের এই শহরকে শেষ করে দিচ্ছি। ড্যাপ কিছু দিন আগে প্রণয়ন করা হয়েছে। যার ফলাফল আমরা এখনই পাচ্ছি। প্যারিস পার্ক ঢাকা সিটির জন্য একটি ওপেন স্পেস। খোলামেলা জায়গা, শিশুদের খেলার জায়গা। অথচ ড্যাপে এই প্যারিস পার্কে ৩২টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৫২ কাঠা এই পার্কে কীভাবে ৩২টি প্লটে বরাদ্দ দেওয়া হলো? আমরা এসব কী করছি, কার জন্য; কার পরামর্শে করছি? আমরা আশা করি, নগরে কিছু করতে গেলে অবশ্যই যেন সিটি করপোরেশনের পরামর্শে করা হয়।’
মেয়র আতিক বলেন, ‘নদীর সীমানা নির্ধারণে যেভাবে আদালত থেকে আদেশ এসেছে, ঠিক সেভাবে ঢাকার খালগুলোর সীমানা নির্ধারণেও আদেশ প্রয়োজন। নদীর সীমানা নির্ধারণের আইন এবং খালের সীমানা নির্ধারণের আইনে রয়েছে ভিন্নতা। এ ক্ষেত্রে আইনের সংশোধন করা প্রয়োজন। নদীর মতো খালের সীমানা নির্ধারণে সিএস দাগ অনুযায়ী করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মহানগর জরিপ অনুযায়ী নির্ধারণ করতে গেলে দেখা যাবে, সিএস জরিপে যে খাল ১০০ ফিট ছিল; সেটা মহানগরে আছে ১০ ফিট। তাই মহানগর জরিপ নয়, সিএস অনুযায়ী খালের সীমানা নির্ধারণ করতে আইনের সংশোধন করাটা খুব জরুরি।’
মেয়র আতিক বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে ঢাকার খালগুলো সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করেছে ওয়াসা। কিন্তু খালগুলো পরিদর্শনে গিয়ে দেখি সবই দখলে। আমার প্রশ্ন তাহলে এতদিন যাদের কাছে খালগুলো ছিল, তারা কী করেছেন? কেন তারা এসব খাল দখলের ব্যাপারে কাজ করলেন না? আপনারা খেয়াল করেছেন, ঢাকা সিটির তাপমাত্রা ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে। এ জন্য উত্তর সিটি করপোরেশন গাছ লাগানো ও ছাদবাগানকে উৎসাহিত করতে হাউস ট্যাক্সের ওপর ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। একই সঙ্গে যারা ভবনে রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং করবে তাদেরও একই সুযোগ দেওয়া হবে।’
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী সেলিম রেজা বক্তব্য রাখেন।
সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, ইউএন-হ্যাবিট্যাট এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প-ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আবাসনের এ বৈষম্য কমিয়ে আনার পরামর্শ দেন বক্তারা।
বক্তারা বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষ তুলনামূলকভাবে মধ্য আয়ের তুলনায় দ্বিগুণ বাড়ি ভাড়া দেন। নিম্ন আয়ের ক্ষেত্রে ১০০ বর্গফুট বাসার ভাড়া পড়ে ৪ হাজার টাকা। অন্যদিকে মধ্য আয়ের নাগরিকরা ১ হাজার ৫০০ বর্গফুট বাসার ভাড়া দেন ৩০ হাজার টাকা।
তারা বলেন, ঢাকায় নিম্ন আয়ের মানুষ কর্মের তাগিদে জড়ো হন। কিন্তু তাদের আবাসন সুবিধা খুব বেশি নয়। বিশেষ করে বস্তি এলাকায় বাসস্থানের জন্য যে মান থাকা দরকার সেখানে তা নেই। অথচ নিম্ন আয়ের মানুষ অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছেন।
বক্তারা আরও বলেন, ঢাকায় মানুষের স্রোত কমানোর উদ্যোগও নিতে হবে। এ জন্য জেলা শহরগুলোতে যোগাযোগ ও সেবার মান বাড়ানোর পরামর্শ দেন তারা।
আলোচনায় অংশ নেওয়া নিম্ন আয়ের মানুষরা বলেন, আমরা বস্তিতে থাকলেও ঢাকার অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ করছি। আমাদের জন্য খেলার মাঠ ও খোলা জায়গার দাবি জানাচ্ছি। আমাদের আবাসন সমস্যা কীভাবে হবে সেটা পরিষ্কার করা দরকার।