অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৪ এ এসেছে সাংবাদিক ও লেখক জান্নাতুল বাকেয়া কেকার ‘ভাষা আন্দোলনের সাত দশক : জানা অজানা’ বইটি। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের প্রকাশিত বইটি বইমেলার সোহরাওযার্দী উদ্যানের প্যাঞ্জেরীর প্যাভিলিয়ন-১৩ তে পাওয়া যাবে।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সাত দশক পেরিয়েছে। ৭২ বছরের পরিক্রমায় ‘চেতনার বাতিঘর’ আপসহীন, কর্মউদ্দীপ্ত ভাষাসংগ্রামীরা। তাদের একজন মোহাম্মদ তোয়াহা। ১৯৪৮ কিংবা ৫২’র এ ছাত্রনেতার যথার্থ মূল্যায়ন হয়নি। ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবির নায়ক, ছাত্রনেতা খালেক নওয়াজ খান, তাকে চেনেন কজন? ৫২’-এ জেলখানায় বসে তিনি এলএলবি পরীক্ষায় পাস করেছেন সে খবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিঠি লিখে তার মাকে জানিয়েছিলেন!
ভাষা আন্দোলনের নির্ভরযোগ্য ইতিহাসবিদ বদরুদ্দীন উমর। তার বাবা অবিভক্ত ভারতে মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশিম জন্মভিটে ছাড়াও আইনসভার সদস্যপদ ছেড়েছিলেন কি মোহে? এর বাস্তবিক, মনস্তত্ত্বাতিক বিশ্লেষন জানতে বদরুদ্দীন উমরের মুখোমুখি লেখক।
তিনি বলছেন, ‘...শেখ মুজিব দলীয় ও সাংগঠনিকভাবে দারুণ দক্ষ এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই’। সর্বপরি ’৪৮-এ প্রধান ভূমিকা রাখা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৫২’র আন্দোলন পরবর্তীতে কারামুক্ত হয়ে বন্দিদের মুক্তিতে জোরদার আন্দোলনে যে ভূমিকা রেখেছেন আর কোনো রাজনীতি করেননি।
ইতিহাসের পাকদণ্ডি বেয়ে ‘কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে’? এ বাস্তবতায় ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক বাস্তবতা, অমর একুশের অর্জন ও ভাষা সংগ্রামীদের সঙ্গে পরের প্রজন্মের চেতনার ফারাক কতটা? এমন তথ্যে, লিখনীর নতুন ধরণে ‘ভাষা আন্দোলনের সাত দশক : জানা অজানা’ বইটি ইতিহাস পাঠে দারুণ আনন্দ জোগাবে নিঃসন্দেহে।
লেখক জান্নাতুল বাকেয়া কেকার মতে, ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় জীবন তো বটেই, বিশ্ব পরিসরে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কারণ অমর একুশের মহাত্মে আজ ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যদা পেয়েছে। এ দেশের প্রেক্ষাপটে সূচিত ভাষা আন্দোলন বিশ্বের দেশে দেশে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠির মাতৃভাষার মর্যাদার প্রতিও সমব্যাথী হতে সাহায্য করে। বিপন্ন ভাষা ও জনগোষ্ঠির টিকে থাকার প্রশ্নে ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থ আজ সর্বজনীন রুপ পেয়েছে।
সবমিলিয়ে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নির্ভর বইটি লিখতে তথ্য প্রমাণ যোগাড় ও নিবিড় গবেষণা সময়ের প্রয়োজনেই অপরিহার্য ছিল। এ কাজ করতে গিয়ে দেখেছি যে, লাইব্রেরিগুলোতে ইতিহাস নির্ভর বইয়ের সংকট রয়েছে। এক্ষেত্রে ওই সময়ের জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রচারিত খবরাখবর ঐতিহাসিক তথ্যসূত্র হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক জাতীয় দৈনিক জাতীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হলেও অনেক দেরিতে এ সংরক্ষণ করায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্র পাওয়া যায়নি।
এমন ক্ষেত্রে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত প্রবীণ গুণীজনদের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। তবে তাদের বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় মেজাজ মর্জি বুঝে কাজ করাটা ছিল সময় সাপেক্ষ। এ ছাড়া আমি নিজেও মাঠের সাংবাদিক হিসেবে পেশাগত কাজকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে ভাষা আন্দোলনের মতো ইতিহাস নির্ভর গবেষণা কাজে ধারাবাহিকভাবে সময় দেওয়া ছিল কঠিন। এ বইটি আমার দীর্ঘ দেড় যুগের পরিশ্রমের ফসল। ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী পাঠক দীর্ঘ পরিশ্রমের ফসল এক মলাটে পেয়ে নিশ্চয়ই উপকৃত হবেন।
মন্তব্য করুন