আগামী ২ মার্চ শেষ হচ্ছে এবারের একুশে বইমেলা। তবে শেষ সময়ে এসে শুরু হয়েছে নিরাপত্তায় ঢিলেঢালা। এই সুযোগে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণ এলাকায় ধূমপায়ীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ বইপ্রেমী দর্শনার্থীরা। সিগারেট কিংবা যে কোনো ধরনের মাদকদ্রব্য নিয়ে মেলায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অবাধে চলছে সিগারেট বিক্রি আর ধূমপান।
অভিযোগ উঠেছে, মেলার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও আনসার সদস্যরা দিনপ্রতি ২শ’ থেকে ৪শ’ টাকার বিনিময়ে ভ্রাম্যমাণ সিগারেট বিক্রেতাদের মেলায় প্রবেশের সুযোগ করে দিচ্ছে।
মেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে পলিথিনের ব্যাগে সিগারেট বিক্রি করছিল মো. আলী। সিগারেট বিক্রি করতে মেলা প্রাঙ্গণে কীভাবে প্রবেশ করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভেতরে ঢুকতে তাকে ৩০০ টাকা দিতে হয়েছে। তার মতো এমন আরও ৪০ থেকে ৫০ জন হকার আছেন, যারা প্রতিদিন আনসার সদস্যদের টাকা দিয়ে ভেতরে ঢুকছে।
চা-কফি আর সিগারেটের আরেক ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা সুমী আক্তার বাইরে ১৭ টাকা মূল্যের সিগারেটের দাম নিচ্ছিলেন ২০ টাকা। কেন বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, দোকান থেকে তাদের একটু বেশি দাম নিতে হবে, কারণ ভেতরে ঢুকতে টাকা দিতে হয়েছে। তার দাবি, অনেক আনসার সদস্যদের ফ্রি চা-সিগারেট খাওয়াতে হয়, তা না খাওয়ালে বের করে দেয় এবং চায়ের ফ্ল্যালাক্স ভেঙে ফেলে।
গত রোববার বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের টিএসসি সামনের গেটে ফুল বিক্রেতা সাইমুনকে বের হয়ে যেতে বলছিলেন একজন আনসার সদস্য। তখনো অসহায়ের মতো গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। জানালেন, তার কাছে আনসার সদস্যরা ৫০ থেকে ১০০ টাকা চায়। কিন্তু সারাদিন ফুল বিক্রি হয় ২শ-৩শ টাকা। এর মধ্যে থেকে যদি ১০০ টাকা দিতে হয় তাহলে পুঁজি থাকবে না।
মেলায় আসা একজন দর্শনার্থী আবদুল্লাহ খান বলেন, বই মেলার ভেতরে অবাধে ধূমপান ও হকারদের ঘুরে ঘুরে খাবার বিক্রি বেশ বিরক্তিকর এবং মেলার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। যত্রতত্র চানাচুর, বাদাম, ফুল, সিগারেট-চা বিক্রেতারা ঘোরাঘুরি করে বিক্রি করছে। এতে করে অনেক দর্শনার্থী এগুলো খেয়ে যত্রতত্র কাগজ-পলিথিনসহ জ্বলন্ত সিগারেটের মুখ ফেলছে।
বইমেলায় আদর্শ প্রকাশনীর বিক্রয় কর্মী পৃথ্বিলা দাস অনেকটা ক্ষোভ নিয়েই কালবেলাকে বলেন, বইমেলায় ছোট-বড় সকলেই আসেন, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ সিগারেট খেতেই পারেন, কিন্তু মেলার ভেতরে প্রবেশ করতে হলে যেখানে সবার সিগারেট-দিয়াশলাই চেক করে রেখে দিচ্ছে, সেখানে পুলিশ ও আনসারের সামনে মেলার মাঠ এবং মুক্ত মঞ্চের আশপাশে সিগারেট বিক্রেতারা ঢুকে পড়ছে।
মেলার ভেতর ভ্রাম্যমাণ চা-সিগারেট বিক্রেতাদের বিষয়ে মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, মেলার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ও মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা বিষয়টি ভালো জানবেন। আমার কাছে এই বিষয়ে এখনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। যদি এই সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ আসে অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে মেলার নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকা শাহবাগ থানার ওসি মোস্তাজিরুর রহমান বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি মেলার ভেতরে যেন সিগারেট-দিয়াশলাই বিক্রেতা হকার প্রবেশ করতে না পারে। কিন্তু বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান লেক দিয়ে অনেকে ঢুকে পড়ছে। মেলা কর্তৃপক্ষ ওই অংশে কোনো বেষ্টনী দেয়নি। তবে আমরা দেখা মাত্রই মেলা প্রাঙ্গণ থেকে এসব সিগারেট বিক্রেতা হকারদের বের করে দিচ্ছি।
মন্তব্য করুন