মেলা মানেই বাঙালির জন্য উৎসব। সেটা হোক বইমেলা কিংবা বাণিজ্য মেলা। সেজেগুজে মেলার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পুরোটাই ঘোরা চাই সতীর্থের হাত ধরে।
বই কেনা হোক বা না হোক, মেলার স্মৃতি ফ্রেমবন্দি করে রাখতে ভোলেন না আগন্তুকরা। বইমেলায় চোখে পড়ে স্থিরচিত্র ধারণের এমন অনেক দৃশ্য। এতে মেলার সৌন্দর্য বাড়ে বৈ কমে না।
তবে এবারের মেলা যেসব কারণে আলোচিত, তা ভালো কোনো বই বা প্রথিতযশা লেখকের কারণে নয়। মেয়ের বয়সী ছাত্রীকে বিয়ে করে বরাবরাই আলোচিত খন্দকার মোশতাক। জেল খেটে আইডিয়ালের পদ হারিয়ে বইমেলায় হঠাৎ লিখে ফেললেন বই। নাম দিলেন ‘তিশার ভালোবাসা’; বইটি কে লিখেছে তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। রাতারাতি জনপ্রিয়তায় বাদ সাধে কতিপয় বিদ্রোহী যুবক। নানা কুটূক্তি দিয়ে মেলা থেকে বের করে দেয় তিশা ও মুশতাককে।
আরেক আলোচিত লেখিকা ডা. সাবরিনা। করোনার সময় পরীক্ষা না করিয়েই রিপোর্ট দিয়ে যে অপরাধ করেছিলেন তার প্রায়শ্চিত্ত করেছিলেন কারাবাস করে। সম্প্রতি জামিন পান তিনি। জামিন পেয়েই রাতারাতি লিখে ফেলেন বই। জেল জীবনের ঘটনা নিয়ে তিনিও লিখেছেন ‘বন্দিনী’ নামের একটি বই।
কান্নাকাটি করে বই বিক্রির ছবিও প্রকাশ পেয়েছে গণমাধ্যমে। তিশা-মোশতাকের পথ ধরেই ডা. সাবরিনাকের বের করে দেওয়া হয় বইমেলা থেকে।
আলোচিত হকার লেখক টিপু সুলতান। নিজে ততটা জ্ঞানী না হলেও তরুণ-তরুণীদের অযথা বিভিন্ন ইংরেজি শব্দের বাংলা অর্থ জানতে চেয়ে বিব্রত করেন তিনি। শেষে তাকেও বিব্রত অবস্থায় মেলা ছেড়ে যেতে হয়।
সর্বশেষ কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলমকেও বইমেলা থেকে বের করে দেয় কথিত বিপ্লবীরা। তবে ডিবি অফিসে গিয়ে নালিশ করে নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে, লজ্জার মাথা খেয়ে আবারও বইমেলায় ফিরেছেন হিরো আলম। ফিরেছেন ডা. সাবরিনাও।
এসব সমালোচিত লেখকদের বই প্রকাশ করে যারা বইমেলার পরিবেশ নষ্ট করল, তাদের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? না তারা আছেন বহাল তবিয়তেই। লেখক হতে চাওয়া সমালোচিত এসব ব্যক্তিদের বইমেলা থেকে বের করে দিল তারাই বা কারা? তারা কি আসলে পাঠক? না তারা পাঠক নয়, বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- তারা আসলে মেলায় বিভিন্ন উদ্দেশ্যে নিয়ে আসে। একজন জানাল তারা আসলে তিশাকে দেখতে এসেছিল। তিশা আর মেলায় না আসায় হতাশ তারা। আরেকজন সরল বললেন- মেলায় মেয়েরা আসে সেজেগুজে তাদের সঙ্গে ভাব জমাতেই আসেন মেলায়। গত মেলায় একজনের সঙ্গে প্রেম হয়েও গিয়েছিল, সেই প্রেম বেশি দিন টিকেনি। এবারো সেই আশাতেই এসেছে।
এবারের মেলায় বখাটেদের উৎপাতে প্রকৃত পাঠকরাও ছিল তটস্থ। কী চায় তারা বইমেলায়? প্রতিভা প্রকাশের প্রকাশক কবি মঈন মুরসালিন জানান, এবার বখাটেদের উৎপাত অতীতের তুলনায় বেশি মনে হয়েছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার ছিল। তবে যাদের দেখার কথা, তারা চোখ বুঝে আছে মনে হয়।
মেলার এমন বিশৃঙ্খলা দেখে এক পাঠক জানান, এসব উটকো ঝামেলা এড়াতে অন্তত ২শ টাকার টিকিট করা জরুরি। তবে মেলায় বই কিনলে সেই টাকা ফেরত দেওয়া বা বইয়ের মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি ও পুঁথিনিলয়ের প্রকাশক শ্যামল পাল বলেন, এটা সত্যি এবারে প্রচুর দর্শনার্থী মেলায়। তবে পাঠক তুলনামূলক কম।
ভুঁইফোঁড় লেখক আর বখাটে আগন্তুকদের উপদ্রবে এবারের মেলায় যেমন আতঙ্কিত ছিল লেখকরা তেমনি পাঠকরাও। মেলার পরিবেশ নষ্ট করতে যারা বিশেষ ভূমিকা রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে কে ব্যবস্থা নেবে জানতে চায় প্রকৃত লেখক ও পাঠকরা।
মন্তব্য করুন