একযুগের বেশি সময় আগে অমর একুশে বইমেলায় লেখক, কবি, নাট্যকার ও সংস্কৃতিকর্মীদের উপস্থিতিতে প্রাণের ঝঙ্কার ও কোলাহল থাকত বাংলা একাডেমির বটতলা প্রাঙ্গণ। বইপ্রেমী ও সাংস্কৃতিককর্মীর ভিড়ে স্টলগুলো ঘুরে ঘুরে পছন্দের বই কিনতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হতো। দিন যত বাড়তে থাকে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়তে থাকে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ২০১৪ সালে একাডেমি প্রাঙ্গণের পাশাপাশি ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও বইমেলা সম্প্রসারণ করা হয়। এরপর থেকেই পাল্টে যায় মেলার চিত্র। এখন দুই চত্বরে বইমেলা বসলেও মূল আকর্ষণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সেই সাথে এবার উদ্যানে বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ধুলোবালি।
মেলার একাদশতম দিন রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে দেখা যায়, লেখক, প্রকাশক আর পাঠকের উপস্থিতিতে উদ্যান প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠেছে। এর বিপরীত চিত্র একাডেমি প্রাঙ্গণে হাতেগোনা কয়েকজন দর্শনার্থী ও স্টলের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়া তেমন কেউ এই প্রাঙ্গণে নেই। এখানে বেশকিছু স্টল থাকলেও নেই পাঠক-দর্শনার্থীর আনাগোনা। বলা যায়, অনেকটা ব্যস্ততাহীন সময় কাটাচ্ছে এখানকার স্টলগুলোর বিক্রয় কর্মীরা। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ এদিকে ঢুঁ মারছেন না। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টল আর রাজনৈতিক স্টলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে বাংলা একাডেমি চত্বর। তবে এসব স্টলে রয়েছে বিচিত্র বই।
এ বছর বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১৭৩টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র একটি প্যাভিলিয়ন। স্টলের কর্মীরা জানান, একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলার মূল মঞ্চ থাকায় কিছু দর্শনার্থী মঞ্চের অনুষ্ঠানে আসেন। তা ছাড়া খুব একটা পাঠক-দর্শনার্থী এদিকে আসেন না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলবেঁধে পাঠক-দর্শক আসছেন। লেখক-প্রকাশক, পাঠক, বন্ধু-বান্ধব মিলে জমিয়ে আড্ডা চলছে। তবে বাংলা একাডেমি থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বইমেলার মূল আকর্ষণ হলেও একাডেমি জানিয়ে দিয়েছে, এ বছরই এখানে শেষ মেলা। কিন্তু আগামী বছর কোথায় মেলা হবে, সেই স্থান নির্বাচন নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। কারণ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়া মেলা করার মতো সুবিধাজনক জায়গা ঢাকায় নেই।
অনিন্দ্য প্রকাশনীর প্রকাশক আফজাল হোসেন বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এখন মেলাকে ধারণ করছে। প্রকৃতি, খোলা আকাশ, স্বাধীনতা স্তম্ভ, লেকসহ এখানে রয়েছে সুবিশাল আয়োজন, লেখক বলছি মঞ্চ, মোড়ক উন্মোচন পর্ব এসব মানুষকে আকর্ষণ করছে।
তাছাড়া বাণ্ডুলে প্রকাশনীর কর্ণধার অনিন্দ্য দীপ বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বইমেলার মূল আকর্ষণ হবে, এটাই স্বাভাবিক। কারণ, সব সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টল এখানে।
মেলায় আসা কবি অরবিন্দু চক্রবর্তী বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সঙ্গে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস জড়িত। জায়গাটি রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে হওয়ায় আসা-যাওয়ায় সুবিধা হয়।
লিটল ম্যাগ সম্পাদক মোস্তফা মামুন বলেন, বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়াদী উদ্যান– দুটোই ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। একটির সঙ্গে ভাষা, অন্যটির সঙ্গে স্বাধীনতার স্মৃতি জড়িত। আগামী বছর না হলেও দুই-এক বছর বিরতি দিয়েও যেন এখানে মেলা শুরু করা হয়।
বাংলা একাডেমির অব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলেন অনিন্দ্য প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী মিতু। তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে প্রতিদিন বিকেলে পানি ছিটানোর কথা থাকলেও তা ছিটাচ্ছেন না মেলা কর্তৃপক্ষ। ফলে দুপুর গড়াতেই ধুলোবালিময় হয়ে উঠে উদ্যান অংশের মেলা প্রাঙ্গণ। এটা আগত পাঠক-দর্শনার্থীদের বেশ স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
বইমেলার সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেছেন, গণপূর্ত কর্তৃপক্ষ বাংলা একাডেমিকে জানিয়েছে, মার্চ থেকেই তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে তোলার কাজ শুরু করবে। ফলে আগামী বছর থেকে বইমেলা অন্যত্র করতে হবে।
তবে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, আগামী বছর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি না পেলে আমরা একাডেমির সামনের রাস্তায় মেলা করব। উদ্যানে মেলা হবে না, এটা হতে দেওয়া হবে না।
মন্তব্য করুন