‘অন্তর্লোকে অবগাহন’ কাব্যে শব্দের নিপুণ বুননে আত্ম-অন্বেষণ ও জীবন-অন্বেষণ একসূত্রে গাঁথা। কবিতাগুলো পাঠকের হৃদয়ে রেখাপাত করে। জীবনকে কবিতার ভাষায় রূপায়িত করার এক অনন্য প্রয়াস আছে ইউশা রহমানের লেখায়। বইটির ভূমিকায় তিনি নিজেই উল্লেখ করেছেন, প্রতিটি কবিতা তার অন্তর্জগতের প্রতিফলন, যেখানে ব্যক্তিগত উপলব্ধির পাশাপাশি বহির্জগতের রূপ, রস ও গন্ধও ধরা দিয়েছে। ‘সাধনা-বীক্ষণ’, ‘জীবন-বীক্ষণ’, ‘কূলরেখা’, ‘জবানবন্দি’, ‘অনন্তপ্রবাহ’ এবং ‘মুক্তির নির্যাস’—এই কবিতাগুলোর প্রতিটি পঙ্ক্তির গভীরে আত্মপরিচয়ের এক নিরন্তর অনুসন্ধানের প্রতিধ্বনি শোনা যায়। কবিতাগুলোতে ফুটে ওঠে ব্যক্তি ও সত্তার অন্তর্গত দ্বন্দ্ব, উপলব্ধির গভীরতা এবং আত্মসন্ধানের এক অনিরবচ্ছিন্ন যাত্রা। এই কাব্যগ্রন্থে কবির অন্তর্দৃষ্টির গভীরতা ও জটিলতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ৬৬ লাইনের সাধনা বীক্ষণ কবিতার প্রথম কিছু চরণে—
‘নিজের আত্মা অধরা-অবাধ্য আমার কী সাধ্য, করি অভিযোজন। রহস্যময় মন, অতল গভীরে হয়নি নিরূপণ।’
অথবা কূলরেখা কবিতায় শুরুর কয়েকটি লাইন—
‘ক্ষণিকের স্বার্থ, ক্ষণিকের মত নয় চিরায়ত মনের বিচিত্র পালাবদল। অচেনা পথে জীবন নদী গভীর অতল।’
প্রেম ও বিচ্ছেদ, আশার আলো ও হতাশার অন্ধকার, জীবন ও তার অনিবার্য সত্য—এসবের সম্মিলনে ইউশা রহমানের কবিতাগুলো পাঠককে এক ভিন্নতর অনুভূতির জগতে নিয়ে যাবে। কিছু কবিতায় ভাবনা ও অনুভূতির প্রকাশ এতটাই স্বতঃস্ফূর্ত যে, পাঠক সহজেই সেই আবেগের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যেতে পারেন। ভাবের গভীরতায় জীবনের বিচিত্র রঙ ছড়িয়ে রয়েছে নানা উপমা ও রূপকের বুননে—
তুমি অতিথি পাখি, যাচ্ছো ফিরে, আপন ঠিকানায় সুখ। আমার ঠিকানা নেই, অজানায় ঘুরছি, আমিও আগন্তুক। কিংবা, ‘সে রেখে গেল নদী, বুকের মানচিত্রে গভীর এক রেখা। নদীটির স্রোতে ভাসে, বেদনা আমার-নিঃসঙ্গ একা।’
জীবন ও চেতনার এক অন্তর্লীন স্রোত এখানে প্রবাহিত হয়েছে। কবিতাগুলো অস্তিত্ব, জীবন ও দর্শনের বিভিন্ন দিক নিয়ে পাঠককে চিন্তার উৎস দেয়। সামগ্রিকভাবে, অন্তর্লোকে অবগাহন আত্ম অন্বেষণ ও জীবন অন্বেষণের মেলবন্ধন তৈরি করে।
২০২৫ এর অমর একুশে বইমেলা বইটি প্রকাশ করেছে জাগতিক প্রকাশন। স্টল নং ৫৫১-৫৫২। স্টল থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারবেন মাত্র ১৫০ টাকায়।
মন্তব্য করুন