বিকেল সাড়ে ৪টা। চট্টগ্রামের বইমেলায় দাঁড়িকমা স্টলের সামনে ছোটখাটো একটা জটলা। কাছাকাছি গিয়ে দেখা গেল কয়েকজন তরুণ-তরুণী বই দেখছেন। আর কয়েকজন তাদের ছবি তুলছেন। কী বই কিনতে এসেছেন জানতে চাইলে একজন জানান, তারা বই কিনতে আসেননি। মেলায় ঘোরাঘুরি আর ছবি তুলতে এসেছেন।
কয়েক স্টল পরে নন্দন বই ঘরের স্টলের সামনেও দেখা গেল একই চিত্র। স্টলের সামনে বই ধরে দাঁড়িয়ে আছেন এক তরুণী। আরেক তরুণী তার ছবি তুলছেন। ছবি তোলা শেষে বই রেখে চলে গেলেন তারা।
রোববার (০৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রামের বইমেলা ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে। চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকার এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম মাঠে এবারের বইমেলা চলছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) উদ্যোগ এবং চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এই মেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত।
প্রকাশনী সংস্থার প্রতিনিধিরা জানান, মেলায় পাঠকের সংখ্যা একদমই নগণ্য। যারা আসছেন, তারা বই হাতে নিয়ে ছবি তুলে চলে যান। তারা যে পরিমাণ বই বিক্রির আশা করেছিলেন, বাস্তবতা তার ধারে কাছেও নেই।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ স্টলে বিক্রয় প্রতিনিধি ছাড়া কোনো লোক নেই। মাঝেমধ্যে দু-একজন পাঠক এলেও তারা কেনেন না। ফলে বেচাকেনা নিয়ে হতাশ প্রকাশকরা। অনেক স্টলের প্রকাশকরা স্টলের খরচ তুলতে পারবেন কি না, তা নিয়েও শঙ্কিত।
অন্তত ২০টি স্টলের প্রকাশনী সংস্থার প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেলা এখনো জমে ওঠেনি। যারা মূল ক্রেতা, তারা তেমন বই দেখেন না। আগে থেকে তালিকা করে নিয়ে আসেন। স্টলে এসে কিনে চলে যান। বন্ধের দিন কিছুটা বেচাকেনা হলেও অন্যান্য দিন তেমন বেচাকেনা নেই।
এদিকে মেলার ৯ দিনে কত সংখ্যক বই বিক্রি হয়েছে—এমন তথ্য পাওয়া যায়নি মেলার কার্যালয়ে। কী পরিমাণ নতুন বই এসেছে, সে তথ্যও দিতে পারেননি মেলার কার্যালয়ে অবস্থান করা মেলার সমন্বয়ক।
এশিয়া পাবলিকেশন্সের স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধি কালবেলাকে বলেন, প্রচারের অভাবে পাঠক কম আসছেন। যারা আসছেন অধিকাংশই বই কেনেন না। ছবি তুলে চলে যান। আদর্শ প্রকাশনীর স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, বিকেল ৩টায় খোলার পর থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত কোনো বই বিক্রি হয়নি। একই কথা বললেন ঐতিহ্য প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি।
গলুই প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি রহমত উল আবেদিন বলেন, প্রচারের অভাবে ক্রেতা আসছে না। দুই ঘণ্টায় মাত্র একটি বই বিক্রি হয়েছে। শুক্র ও শনিবার মোটামুটি বিক্রি হয়।
দাঁড়িকমা প্রকাশনী প্রতিনিধি রাজিব উদ্দীন বলেন, মেলার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১৫ হাজারের মতো বিক্রি হয়েছে। জনসমাগম কম। অন্যবার সাধারণ দিনে যে রকম বিক্রি হতো এবার বন্ধের দিনে তেমন হচ্ছে।
খড়িমাটি প্রকাশনীর স্টলেও এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রয় প্রতিনিধি।
মেলায় কথা হয় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আসমা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো এবারের মেলায় আসলাম। এখনো বই কিনিনি। নন-ফিকশন বই কিনব। মেলা দেখতে এসেছেন পোস্তারপাড় বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির দুই ছাত্রী তাহসিনা রুবাইয়া ও সামিয়া আক্তার। তারা জানায়, মেলায় ঘুরতে এসেছি। পছন্দ হলে গল্পের বই কিনব।
বোয়ালখালী উপজেলা থেকে এসেছেন সাব্বির উদ্দীন বলেন, দুটি বই কিনেছি।
চট্টগ্রামের সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ নুরুন্নবী বলেন, চট্টগ্রামে প্রথম বইমেলায় এসেছি। ভালো লেগেছে। আয়োজন ভালো ছিল। আমি আহমদ ছফার রচনা সমগ্র কিনেছি।
চকবাজার থেকে স্ত্রী ও শিশুসন্তান নিয়ে বইমেলায় এসেছেন সফটওয়্যার প্রকৌশলী মো. রাফি। তিনি বলেন, আমি ইংরেজি উপন্যাস, সিরাত গ্রন্থ ও বাচ্চার জন্য বই কিনেছি। ভাবছিলাম পছন্দের বই পাওয়া যাবে না। কিন্তু মেলায় এসে পেয়েছি। মেলা বেশ ছোট।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা ও মেলার সমন্বয়ক মামুনুর রশীদ কালবেলাকে বলেন, তিন দিন থেকে মেলা জমে উঠেছে। পাঠকরা আসছেন, বই কিনছেন।
প্রচার কম থাকার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রচার মেলা শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগ থেকেই চলছে। নতুন বই ও বিক্রয়ের তথ্য জানতে চাইলে এখনো সংগ্রহ করা হয়নি বলে জানান।
মন্তব্য করুন