জহির রায়হান, আলমগীর কবির, বাদল রহমান, তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র এবং তাদের ভাব ও ভাবনাকে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যসূচিতে আজও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চলচ্চিত্রবিষয়ক অধ্যয়নে আমাদের কীর্তিমান চলচ্চিত্রকারদের না পড়ানোর কী অর্থ তা আমরা জানি না। জহির রায়হান, আলমগীর কবির, বাদল রহমান এবং তারেক মাসুদকে পাঠ্যসূচিতে আনা উচিত।
চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের ১২তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে রোববার (১৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে ‘তারেক মাসুদ স্মারক বক্তৃতা-২০২৩’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন চলচ্চিত্র গবেষক, লেখক ও চলচ্চিত্র শিক্ষক ফাহমিদুল হক।
ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি এবং তারেক মাসুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট যৌথভাবে তারেক মাসুদ স্মরণ এবং ‘তারেক মাসুদ স্মারক বক্তৃতা ২০২৩’ আয়োজন করেছে। চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরসহ নিহত চলচ্চিত্রকর্মীদের স্মরণে স্মৃতিতর্পণ এবং ‘তারেক মাসুদ স্মারক বক্তৃতা ২০২৩’-এর পাশাপাশি এই দিন শিল্পী এস এম সুলতানের জীবন ও কর্ম নিয়ে তারেক মাসুদ নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘আদমসুরত প্রদর্শিত হয়।
ফাহমিদুল হক বলেন, বাংলাদেশের শৈল্পিক ও স্বাধীনধারার চলচ্চিত্র নির্মাতারা নিয়মিতভাবে জাতীয় আত্মপরিচয়কে তাদের চলচ্চিত্রে তুলে ধরেন। এটা করতে গিয়ে তারা দেখান যে বাঙালিত্ব ও মুসলমানিত্ব দুটি বিবদমান আত্মপরিচয়ের ধারা এবং বাঙালিত্বের ব্যাপারে তাদের পক্ষপাত চলচ্চিত্রগুলোতে স্পষ্ট থাকে। তবে দুয়েকজন চলচ্চিত্রকার জনধর্মকেও (সুফি ও বাউল ধারা) আত্মপরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে মনে করেন।
তিনি আরও বলেন, সমসাময়িক চলচ্চিত্রে বিশ্বায়ন-উত্তর বাংলাদেশের যে নতুন জটিলতা যেমন নয়া উদারবাদী ভোক্তাসংস্কৃতি কিংবা কট্টরপন্থি ও জিহাদি ইসলামের বিশ্বায়নের অভিঘাত, তাকেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তুলে ধরা হয়েছে।
তিনি বলেন, সর্বোপরি বাংলাদেশ সমাজ যে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা নির্মাতারা চলচ্চিত্রের পর্দায় প্রতিফলন ঘটান। আবার বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে তুলে ধরতে গিয়ে অনেক সময় তারা প্রাচ্যবাদী ফাঁদে পা দেন, পশ্চিম প্রাচ্যকে যেভাবে দেখতে চায় সেই চোখ দিয়ে নিজেকে দেখেন পরিচালকরা।
ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক বেলায়াত হোসেন মামুন তার বক্তব্যে বলেন, আজ এক যুগ হলো তারেক মাসুদের প্রয়াণের, সেই সাথে মিশুক মুনীরসহ আরও তিনজন চলচ্চিত্রকর্মীর অকাল প্রয়াণের। যদি তারেক মাসুদ ১২ বছর আগে সেই দিন প্রয়াত না হতেন তাহলে হয়ত আমাদের চলচ্চিত্রের ইতিহাস আজ আরও অনেক সমৃদ্ধ হতো। আমরা বিশ্ব চলচ্চিত্রের মানচিত্রে আমাদের নিজস্ব স্বাক্ষর রাখতে পারতাম। সেই সম্ভাবনার মৃত্যু তারেক মাসুদের অকাল প্রয়াণে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।
মন্তব্য করুন