বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে শহীদ তাহীর জামান প্রিয়র মা শামসী আরা জামান বলেছেন, প্রিয়র ছেলে বোঝে না তার বাবা মারা গেছে। সে তার বাবাকে সব জায়গায় খুঁজে ফেরে। বাবা তাকে কাঁধে তোলে না। এটা তাকে কষ্ট দেয়। আমি আমার সন্তানসহ সব শহীদের মৃত্যুর বিচার চাই। দেশে তরুণ সমাজের মধ্যে আর কোনো হতাশা নয়, মাদকাসক্ত সমাজ হবে না। এই আহ্বানই জানান তিনি।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের আয়োজনে নন্দনমঞ্চে গণঅভ্যুত্থানের গান ‘আওয়াজ উড়া’ পরিবেশন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে শহীদ তাহীর জামান প্রিয়র মা শামসী আরা জামান এ আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ, অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মোহাম্মদ আশরাফুল।
এ ছাড়া স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান। অনুষ্ঠানে র্যাপ সংগীত পরিবেশন করেন হান্নান হোসেন শিমুল ও তার দল, ব্যান্ডদল এফ মাইনর, যিন ব্রাদার্স, লুম্বিনী চাকমাসহ অনান্য শিল্পীরা। এই গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে জনপ্রিয় গান ‘আওয়াজ উড়া’ এর আলোকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এই অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ‘আওয়াজ উড়া’।
ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, আমরা সকল মত, সকল পথ, সকল ভাষা, সব ধর্ম হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলমান বাঙালি, আদিবাসী, সকলে মিলে এক সাথে একটি দেশ গড়ে তুলব। সেখানে আমাদের পরিচিতি হবে একটি কণ্ঠস্বর। আর হতাশা নয়, সকল শহীদের মৃত্যুর বিচার চাই।
বক্তারা বলেন, জুলাই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু গান, স্লোগান বা অন্য কার্যক্রম অভ্যুত্থানকে বেগবান, আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছে। যার ফলে অনেক শিল্পী আইনগতভাবে নানা ঝুঁকির মুখে পড়েন। আইনি জটিলতা উপেক্ষা করেই গানের মাধ্যমে সাধারণ জনতাকে একত্রিত করেছেন অনেকে। তারা অভ্যুত্থানের বার্তা দিয়ে ওই প্রতিকূল মুহূর্তে যেভাবে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছেন এই বিজয়ে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থান থেকে জন্ম নেওয়া দৃঢ়তা ও আশার চেতনাকে শ্রদ্ধা জানাতে জনগণের কণ্ঠস্বরকে, তারুণ্যের দীপ্ততাকে তুলে ধরতে গণঅভ্যুত্থানের গান নিয়ে ‘আওয়াজ উড়া’ কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজনে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার শুরুতেই সমবেত সংগীত ‘চল চল চল’ পরিবেশন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কণ্ঠশিল্পীরা। সমবেত সংগীত ‘আমরা করব জয়’ ও ‘নীল নির্বাস’ পরিবেশন করে ডেমোক্রেসি ক্লাউন। এরপর শিল্পী লুম্বিনী চাকমা ‘চাকমা ভাষার গান’; ধর্মচন্দ্রা তঞ্চজ্ঞা সন্তোষ ‘তঞ্চজ্ঞা ভাষার গান’; ডিউক মুরমু ‘সাঁওতাল ভাষার গান’; সমাপন স্মাল ‘গারো ভাষার গান’ পরিবেশন করেন। একক সংগীত পরিবেশন করেন আহমেদ হাসান সানী এবং ব্যান্ড সংগীত ‘আদিবাসী গান’ পরিবেশন করেন এফ মাইনর। অনুষ্ঠানে সবশেষে সমবেত সংগীত ‘মোরা ঝঞ্জার মতো’ পরিবেশন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কণ্ঠশিল্পীরা। ‘আওয়াজ উড়া’ সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল।
মন্তব্য করুন