সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) এক বিবৃতিতে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে জানান, সংবিধানকে উপেক্ষা করে সরকার ২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তার নিন্দা জানাচ্ছে উদীচী। একইসঙ্গে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের ন্যক্কারজনক হামলা ও প্রাণহানির ঘটনায় নিন্দাও জানাচ্ছে উদীচী।
বিবৃতিতে উদীচীর নেতারা বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দেওয়া এবং তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষে দাঁড় করানোর একটি অপচেষ্টা দীর্ঘদিন ধরেই দেখা যাচ্ছিল। কয়েকদিন আগে সরকারপ্রধানের বক্তব্য সেই অপচেষ্টাকে উৎসাহিত করেছে। তার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ‘রাজাকার’ পরিচয় দিয়ে স্লোগান দেয় ও মিছিল করে, যা অবশ্যই দুঃখজনক। অবশ্য, নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে কিছুক্ষণের মধ্যে তাদের স্লোগান পরিবর্তন করা প্রশংসার যোগ্য।
বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের বিভ্রান্তিমূলক মন্তব্যের সুযোগ নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ বিষয়ে সচেতন থেকে কারো পাতা ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য কোটা আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে উদীচী।
সংগঠনটির নেতৃদ্বয় বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে ২০১৮ সালেও আন্দোলন করেছিল শিক্ষার্থীরা। সেসময় তাদের দাবি না মেনে উল্টো পুরো কোটা পদ্ধতিই বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার, যা সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কেননা, সংবিধানে অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন ধরনের কোটার কথা বাধ্যতামূলক করা রয়েছে। সম্প্রতি হাইকোর্টের রায়ে সেই প্রজ্ঞাপন বাতিল হলে আবারো আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। উদীচী এই দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে একটি কমিশন গঠনের মাধ্যমে কোটাপদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানাচ্ছে।
উদীচীর নেতারা আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসা শিক্ষার্থীদের ওপর সোমবার হঠাৎ করেই নৃশংস হামলা চালায় সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে কয়েকশ শিক্ষার্থী আহত হয়। সেই আহত শিক্ষার্থীদের ওপর হাসপাতালে গিয়ে হামলা চালানোর মতো ন্যক্কারজনক ঘটনাও ঘটেছে। সংঘর্ষের পুরো সময়টিতেই পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আশ্চর্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, মঙ্গলবার রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি জেলায় সহিংসতার মাত্রা আরও বৃদ্ধি পায়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুরে মারা যায় পথচারী ও স্কুলছাত্রীসহ কয়েকজন। এদিন ছাত্রলীগের পাশাপাশি পুলিশও আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয়, যা নিন্দনীয়।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে হামলায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে উদীচী। একইসাথে কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার করে এ সংকট সমাধানের দাবিও জানান উদীচীর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
মন্তব্য করুন