মুক্তিযুদ্ধে যৌন নির্যাতনের শিকার নারীদের বীরাঙ্গনা উপাধি দেওয়া হয়। কিন্তু সামাজিক ও পারিবারিক কারণে তারা সেই উপাধি প্রকাশ করতে পারেননি। অনেকেই জীবনের শেষ সময়ে এসেও পরিবার সমাজ থেকে যোগ্য সম্মান পায়নি। অথচ অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করা এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীদের অবদান আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে একটা বড় ভূমিকা রেখেছে।
শনিবার (২০ এপ্রিল) বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার হলে ‘সম্ভ্রমযোদ্ধাঃ সেবাসদন ও একজন ডা. হালিদা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
তারা বলেন, এই নারীদের অবদানকে সম্মান জানানো ব্যতিত দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পূর্ণ হবে না। তাই অনতিবিলম্বে মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদানকে সম্মান জানানোর সাথে সাথে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আ হ ম তৌহিদুল আনোয়ার চৌধুরী। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। বই নিয়ে আলোচনা করেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জাতীয় নারী পুনর্বাসন বোর্ডের প্রকল্প পরিচালক শিরিন জাহাঙ্গীর, গণস্বাস্থ্য কমিউনিটি বেইজড ক্যানসার হাসপাতালের প্রিভেনটিভ অনকোলজি বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার, সাহিত্যিক মনসুর মূসা, ওয়াটারএইড-এর আঞ্চলিক পরিচালক ডা. খাইরুল ইসলাম, বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. একেএম মুজাহিদুল ইসলাম, চ্যানেল আইয়ের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জান্নাতুল বাকেয়া কেকা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে একটি বাচিক পরিবেশনার মাধ্যমে ’৭১ সালের বীরাঙ্গনাদের অবস্থা তুলে ধরা হয়। জানানো হয় সেবাসদনে মুক্তিযুদ্ধে যৌন নির্যাতনের শিকার নারীদের চিকিৎসা ও পূনর্বাসনের কার্যক্রম করা হতো। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বেগম রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. হালিদা হানুম আখতার ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে নির্যাতিত নারীদের চিকিৎসক ছিলেন। তাদের পুনর্বাসনের জন্য ১৯৭২ সালে স্থাপিত ‘সেবাসদন’ দায়িত্বপ্রাপ্ত হন তিনি। তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন সেই নারীদের জীবনের কষ্ট। বইটিতে ওই সমস্ত মায়েদের নির্যাতন ও মানসিক যন্ত্রণা, অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নির্যাতনের ফলে গর্ভধারণ করার সেই গর্ভস্থ সন্তানকে গর্ভপাত করা অথবা জীবিত জন্ম হলে তাকে কাছে না পাওয়ার কষ্ট তুলে ধরেন। যদিও আলোচকরা বইটির আরও পরিসর বাড়ানো ও সম্পাদনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তথাপি এমন বই ইতিহাসকে সামনে আনে বলেও উল্লেখ করেন।
অধ্যাপক আ. হ. ম. তৌহিদুল আনোয়ার চৌধুরী বলেন, সে সময় অনেক শিশুকে বিদেশিরা দত্তক নেন। সেই শিশুরা থাকলে তাদের পরিণতি কি হতো। আমি ৩-৪ জন শিশুকে বিদেশিদের দত্তক দেওয়ার ব্যবস্থা করি।
মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, এমন ইতিহাস নতুন প্রজন্মের জানা প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধের এই অধ্যায় উন্মোচনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা। তারা বলেন, এখনো তাদের ইতিহাস না জানা গেলে তাদের সঠিক ইতিহাস জানা হবে না। কারণ তাদের সবাইর বয়স হচ্ছে, কিছুদিন পর প্রত্যক্ষদর্শী থাকবে না। এসএইচপিএল প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত ৬ ফর্মার বইয়ের দাম ৫০০ টাকা।
মন্তব্য করুন