ঈদসহ যে কোনো উৎসবে মানুষের ঘোরাঘুরি অথবা সপরিবারে একটু অবকাশ কাটাতে প্রত্নসম্পদ সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক জায়গা বরাবরই বাড়তি আগ্রহ জোগায়। আসন্ন ঈদুল ফিতরের লম্বা ছুটিতে এবার বগুড়ার মহাস্থানগড়ের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখতে দর্শনার্থীর সংখ্যা অন্যান্য বারের চেয়ে বেশি হতে পারে বলে মনে করছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ।
ঈদের প্রথম দিন থেকে বগুড়াসহ আশপাশের জেলার ভ্রমণপিপাসুরা প্রিয়জনদের নিয়ে মহাস্থানগড়ে বেড়াতে আসেন প্রাচীন পুরাকীর্তি এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখতে। এ কারণে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও বিড়ম্বনা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মহাস্থানগড় প্রাচীন পুণ্ড্র রাজ্যের রাজধানী পুণ্ড্রনগর। এটি তৃতীয় খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে পঞ্চদশ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে মৌর্য, সুঙ্গ, গুপ্ত, পাল, সেন প্রভৃতি বৌদ্ধ ও হিন্দু রাজবংশের রাজত্বের রাজধানী ও শাসনকেন্দ্র ছিল। আর এ কারণেই মহাস্থানগড় দেশের সবচেয়ে প্রাচীন প্রত্নস্থল। আড়াই হাজার বছরের সভ্যতা নিয়ে মাটির নিচে চাপা পড়া এই নগরীটি প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ও এক কিলোমিটার প্রশস্ত। তবে এলাকাটি সমতলভূমির তুলনায় অনেক উঁচু। নগরীটি মাটির নিচে চাপা পড়লেও এর দুর্গপ্রাচীর আর প্রবেশদ্বারের ধ্বংসাবশেষ দৃশ্যমান। ৫ হাজার ফুট দীর্ঘ প্রাচীরবেষ্টিত ও ৪ হাজার ৫০০ ফুট প্রশস্ত নগরীর পুরোটাই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে সমৃদ্ধ। প্রতিনিয়ত প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বিভিন্ন নিদর্শন বেরিয়ে আসছে নগরীটির। প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বিভিন্ন আমলের নির্মাণ স্তরের স্থাপত্য কাঠামোর পাশাপাশি বেশ কিছু প্রত্নসামগ্রী উদ্ধার হয়। প্রত্নসামগ্রীগুলো মহাস্থান জাদুঘরে রাখা আছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঈদের দিনে শুধু জাদুঘর বন্ধ থাকবে। খোলা থাকবে গোবিন্দ ভিটা, জাহাজ ঘাটা ও বেহুলার বাসরঘর। তবে এখানে যারা আসেন তারা মূলত আশপাশের জেলায় আত্মীয় বাড়িতে আসেন। সেখান থেকে সবাই দল বেঁধে মহাস্থানগড় বেড়াতে আসেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন।
মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানা জানান, ঈদের দিন থেকে প্রচুর দর্শনার্থী আসেন এখানে। এই ভিড় থাকে চার-পাঁচ দিন। ঈদের ছুটি বেশি হলে দর্শনার্থীর চাপও বেড়ে যায়। এ সময় গড়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ হাজার দর্শনার্থী আসেন মহাস্থানগড়ে। যদিও ঈদ উপলক্ষে মহাস্থানগড় আলাদাভাবে সাজানো হয়নি। তবে জাদুঘরের ভেতর পরিষ্কার করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। অন্যান্য বাবের তুলনায় এবার দর্শনার্থীর চাপ বাড়তে পারে বলে মনে করছেন এই কর্মকর্তা।
যেভাবে যাওয়া যাবে মহাস্থানগড় মহাস্থানগড় বগুড়া শহর ১২ কিলোমিটার উত্তরে শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। যেতে হলে শহরের সাতমাথা থেকে পায়ে চালিত রিকশা অথবা অটোরিকশায় যেতে হবে দত্তবাড়ী। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ২৫ টাকা ভাড়ায় সরাসরি পৌঁছে যেতে পারবেন মহাস্থান শাহ সুলতান বলখীর মাজারের দরজা পর্যন্ত। কেউ যদি বাসে মহাস্থান যেতে চান তাহলে তাকে দত্তবাড়ী থেকে মাটিডালি যেতে হবে। মাটিডালি থেকে পর্যাপ্ত বাস পাওয়া যাবে মহাস্থানগড় যাওয়ার জন্য।