দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পর্যটন শিল্পের প্রবেশদ্বার মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল। এখানকার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর জীববৈচিত্র্য ভ্রমণপিপাসু দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মনে জায়গা করে নিয়েছে সেই কবেই। প্রতি বছর বিশেষ দিনগুলো, ঈদ কিংবা সরকারি ছুটিতে পর্যটকের পদচারণা যেন বাড়তি মাত্রা যোগ করে। এবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে পর্যটক বরণে যেন প্রস্তুত হয়ে রয়েছে শ্রীমঙ্গল।
সবুজের সমারোহে গালিচা বিছানো উঁচু-নিচু নান্দনিক চা বাগানে ঘেরা শহর শ্রীমঙ্গলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কাউকেই বিমোহিত করবে। শ্রীমঙ্গলের পাশেই কমলগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। এটি বাংলাদেশের অন্যতম জাতীয় উদ্যান এবং চিরহরিৎ বনাঞ্চলের উল্লেখযোগ্য একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। যে উদ্যানে রয়েছে বিস্তর গাছগাছালি, জীববৈচিত্র্য ও পাখিদের কলতান। বাংলাদেশের ৭টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ১০টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে এটি অন্যতম। কমলগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে দর্শনীয় পর্যটন স্থান চা বাগানঘেরা মাধবপুর লেক, তা ছাড়া এখানে রয়েছে গারো, ত্রিপুরা, খাসিয়া ও মণিপুরীদের আবাসস্থল। রয়েছে শীতেষ বাবুর বন্যপ্রাণী সেবাশ্রম, রমেশ রাম গৌড়ের সাত রঙের চা, রামনগর মণিপুরীদের হস্তশিল্পের বিক্রয়কেন্দ্র। রয়েছে অপরূপ পাহাড়ে ঘেরা দার্জিলিং টিলা, যার সৌন্দর্য বিমোহিত করে এখানে আগত পর্যটকদের। আছে বধ্যভূমি ৭১, শতবর্ষের স্মৃতিবিজড়িত শ্রীমঙ্গলের ডিনস্টন সিমেট্রি। পাহাড়ঘেরা চিরসবুজ চা বাগানের মাঝখানে অবস্থিত এ সিমেট্রিতে ব্রিটিশদের কবর রয়েছে ৪৬টি। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ১৫ কিমি দূরে জেমস ফিনলে টি কোম্পানির ডিনস্টন চা বাগানের ভেতরে এর অবস্থান। রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, যা কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নে অবস্থিত।
এ বছর ঈদের টানা ৯ দিনের সরকারি ছুটি থাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন এখানকার পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। শ্রীমঙ্গলে গড়ে ওঠা অসংখ্য রিসোর্ট- কটেজ, হোটেল, গেস্ট হাউসে রাত্রিযাপন করেন হাজারো পর্যটক। তা ছাড়া ১৫ থেকে ২০টি দর্শনীয় পর্যটন কেন্দ্র প্রস্তুত হচ্ছে ঈদে পর্যটকদের বরণে। এখানে পাঁচতারকা মানের রিসোর্টসহ ৮০টিরও অধিক রিসোর্ট, কটেজ, হোটেল ও গেস্ট হাউস রয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা শ্রীমঙ্গলে রাত্রিযাপন করতে এসে এখানকার সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে যান। পরে অনেকে নিজেরাই গড়ে তোলেন একেকটি নান্দনিক কটেজ ও রিসোর্ট, যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫ শতাধিক মানুষের।
ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটকদের বাড়তি আনন্দ দিতে এখানকার হোটেল, রিসোর্ট, কটেজে চলছে বাড়তি সাজসজ্জার কাজ। রিসোর্টগুলোকে নান্দনিকতার ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তুলতে চলছে দিনরাত কর্মযজ্ঞ। কেউ নতুন করে গড়ে তুলেছেন সুইমিংপুল, করছেন শিশুদের বাড়তি বিনোদনের ব্যবস্থা, কোথাও হচ্ছে রাত্রিকালীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি কিংবা বিনোদনের আয়োজন।
শান্তিবাড়ি রিসোর্টের পরিচালক তানভীর লিংকন আহমেদ বলেন, রাধানগর গ্রামে পরিবেশবান্ধব পর্যটন শিল্পকেন্দ্র গড়ে তুলতে আমি ২০১২ সালে এই শান্তিবাড়ি ইকো রিসোর্ট তৈরি করি। তারপর থেকে আমাদের এখানে দেশ-বিদেশের অসংখ্য প্রকৃতিপ্রেমিক পর্যটক রাত্রিযাপন করতে আসেন।
শ্রীমঙ্গলের পর্যটন কল্যাণ পরিষদের সদস্য সচিব তারেকুর রহমান পাপ্পু বলেন, শ্রীমঙ্গলে গত কয়েক বছরে কমিউনিটি বেজড ট্যুরিজম বিকশিত হয়েছে, যা স্থানীয় মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি ও নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। শ্রীমঙ্গল ট্যুরিস্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল হোসেন চৌধুরী জানান, ঈদে পর্যটকদের নিরাপত্তায় শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন এবং জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন