এবারের ঈদে টানা ৯ দিনের ছুটি। তাই পরিবার-পরিজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে পর্যটন স্পটগুলোতে ছুটছেন ভ্রমণপিপাসুরা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট রয়েছে পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সিলেটে পর্যটকের ভিড় আশানুরূপ হওয়ার প্রত্যাশা করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। করোনার পর থেকে পর্যটন শিল্প কিছুটা ধীর হয়ে পড়লেও, এবারের ঈদের লম্বা ছুটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভ্রমণের পরিকল্পনা অনেকেরই রয়েছে। বিশেষ করে সিলেটের পরিচিত পর্যটন এলাকাগুলোতে এবার অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, ঈদের ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকের ভিড় সিলেটের পর্যটন খাত চাঙ্গা করবে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পর্যটন খাত থেকে শতকোটি টাকার বেশি ব্যবসা করার আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। পর্যটন স্পটগুলোতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
করোনা মহামারি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভয়াবহ বন্যাসহ বিভিন্ন কারণে সিলেটের পর্যটন শিল্প বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। তখন পর্যটকদের আগমন ছিল খুবই কম, ফলে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় ধস নেমেছিল। তবে এবারের ঈদে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে। সিলেটের পর্যটন স্পটগুলোতে এবার আগত পর্যটকদের সংখ্যা অনেকটাই বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরাণ (রহ.) মাজার, চা-বাগান, ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর, উৎমা ছড়া, জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, লালাখালসহ অন্যান্য জনপ্রিয় পর্যটন স্পটগুলোতে ঈদের ছুটির দিনগুলোতে ভিড় থাকবে।
পাহাড়, টিলা আর দিগন্ত বিস্তৃত চা-বাগান যেন সিলেটকে ঢেকে রেখেছে সবুজ চাদরে। হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরাণসহ (রহ.) ৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যভূমি সিলেট নগর এবং পার্শ্ববর্তী বিমানবন্দর সড়কের দুপাশে রয়েছে সিলেটের প্রথম চা-বাগান মালনীছড়া। এ ছাড়া দৃষ্টিনন্দন লাক্কাতুরা চা-বাগান, কালাগুল, গুরজান, বাইশটিলা, খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের প্রাকৃতিক পরিবেশ পর্যটকদের বারবার টানে। সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে সাদাপাথর ও উৎমা ছড়ার মতো মনোমুগ্ধকর পর্যটন স্পট। জৈন্তাপুর উপজেলায় রয়েছে লালাখাল, ডিবির হাওর। গোয়াইনঘাটে রয়েছে জাফলং, রাতারগুল, পান্তুমাই ও বিছনাকান্দি। পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ বিছনাকান্দি। এবারের ঈদে পর্যটন খাতে চাপ বেড়ে যাবে—এমনটা বিবেচনায় রেখে ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিয়েছেন। হোটেল, রেস্তোরাঁ, পরিবহন, ট্রাভেল এজেন্সিগুলো তাদের সেবার মান বাড়াতে প্রস্তুত রয়েছে। সিলেটের হোটেলগুলো বুকিং আগেই শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, ঈদের ছুটির সময় পর্যটকদের উপস্থিতি ব্যবসার জন্য অনেকটা লাভজনক হবে এবং তারা তাদের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
জৈন্তা হিলস রিসোর্টের ম্যানেজিং ডিরেক্টর তোফায়েল আহমদ বলেন, আমার রিসোর্টে ৩০টি রুম রয়েছে এর মধ্যে কাপল ১৬টি ও ডাবল বা ফ্যামিলি রুম ১৪ আছে। এরই মধ্যে ১৭টি বুকিং হয়েছে, যা গত দুই ঈদের তুলনায় বেশি। এবার পরিবার-পরিজন নিয়ে ভ্রমণের সংখ্যাটা বেশি হবে মনে হয়। তিনি আরও বলেন, ঈদে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য স্পেশাল ছাড় দেওয়া হবে। সিলেট নগরের আম্বরখানার হোটেল শেরাটন আবাসিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুজন মিয়া কালবেলাকে বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, বন্যা ও করোনা মহামারির কারণে কয়েক বছর ধরে আমরা ক্ষতির মধ্যে ছিলাম। এবার আমরা আশাবাদী। এবার ঈদের ছুটিতে অগ্রিম রুম বুকিং প্রায় ৮০ শতাংশ হয়ে গেছে। আশা করছি, ঈদের পরও পর্যটকদের আগমনের ধারা অব্যাহত থাকবে। এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক ও হোটেল স্টার প্যাসিফিকের পরিচালক ফখরুস সালেহীন নাহিয়ান বলেন, এবারের ঈদে পর্যটক বরণে আমাদের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে। পর্যটকদের সুবিধার্থে আমরা কিছু ট্যুর প্যাকেজ চালু করেছি। সিলেট জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সম্রাট তালুকদার বলেন, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সিলেট জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা জোরদারের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে জেলা পুলিশ কাজ করছে। সিলেট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, সিলেটের পর্যটন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আমরা সর্বোচ্চ নজরদারি রাখছি।
মন্তব্য করুন