শাকিব খানকে লার্জার দ্যান লাইফ ক্যারেকটারে পাওয়া যেত। তবে ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘লিডার : আমিই বাংলাদেশ’-এ তা একেবারেই ব্যতিক্রম। এখানে তাকে রিয়েলিস্টিক ক্যারেকটারে পাওয়া গেছে। চরিত্রটা সচেতন এক যুবকের। যার মধ্যে দেশপ্রেমটা আছে। এমন চরিত্রে তাকে কমই দেখা গেছে। একদম নরমাল মেকআপ-গেটআপে হাজির হয়েছেন। হিরোইজম থেকে তিনি বের হয়েছেন। লুকটা বেশ আলাদা। ব্যাকব্রাশ করা চুল, পোশাক পুরোটাই চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে গেছে। এটা আমার কাছে বেশি ভালো লেগেছে। অনেক দিন ধরে শুট করার পরও তিনি তার চরিত্রটার টোন ধরে রেখেছেন। মনে হয়েছে তিনি হিরো নন, অভিনেতা।
ভালোলাগার আরও কারণ আছে। প্রথমত, গল্পটা মৌলিক। অযথা বিভিন্ন দিক মোড় নেয়নি। চরিত্র ও অভিনয় বিশ্লেষণ করলে বলব দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন শাকিব খান। পুরো ছবি নিজ কাঁধে টেনেছেন। তবে এটাও ঠিক, তার ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ ছবি তাকেই টানতে দেখা যায়। এর আগে শাকিব দেশের ছবি করলে তা হয়েছে অ্যাকশননির্ভর। যেগুলোতে দক্ষিণ ভারতের একটা প্রভাব দেখা যায়। তবে এ ছবিটা ব্যতিক্রম। এত বিপ্লব-বিদ্রোহ যে করছেন, সেখানে তাকে শুধু একটা জায়গায় মারামারি করতে দেখা যাবে।
জুটি হিসেবে দারুণ মানিয়েছে শাকিব খান ও শবনম বুবলীকে। বুবলী ধনী বাবার সন্তান। তার মা নেই। টাকার বিনিময়ে ভিপি হতে চান। তার চলাফেরাও ছেলেদের মতো। প্রথমদিকে তার চরিত্রটা বেশ প্রাণবন্ত ছিল। তবে শেষদিকে ছবিটি শাকিবকেন্দ্রিক হওয়াতে তাকে সেভাবে পাওয়া যায়নি। আমার কাছে ভালো জুটি মনে হয়েছে।
ছবিতে পরিচালক তপুর বড় ক্রেডিট আছে। শাকিবকে নিলে সবাই নায়কের মতো করে গল্প দাঁড় করিয়ে ছবি বানাতে চান। দর্শক যেভাবে দেখতে চায় সেভাবেই পরিচালক তৈরি করেন। তবে তপু তা করেননি। তিনি চেষ্টা করেছেন নিজের মতো করে শাকিবকে উপস্থাপন করতে। তার গল্পের প্লটটাই চ্যালেঞ্জিং।
তবে ডিটেইলিংটা বেশ। একটা উদাহরণ দিই। শাকিব খানের এলাকার একটি রাস্তা পাঁচ-ছয় বছর ধরে সংস্কার করেন না স্থানীয় নেতা। রাস্তার যে ভাঙাচোরা ভাব, রোগী পড়ে যাওয়া—এমন সব বিষয় খুব বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন শাকিব। মনেই হয়নি এটা সেট।
তবে ছবিতে সমালোচনার জায়গাও আছে। প্রথম ৪০ মিনিট একটু ধীরগতিতে এগিয়েছে। বলা যায়, এ অংশটাতে প্রচুর উপদেশ দিতে তাকে দেখা যায়। তখন একটু শঙ্কা জেগেছিল। এমন ছবিতে বেশ ঝুঁকি থাকে। শাকিব তার জনপ্রিয়তার কারণে তা উতরে নিয়েছেন। গল্পে ঢুকে যাওয়ার পর পুরোটাই ছিল বেশ ভালো। গতানুগতিকের বাইরে কাজটা করেছেন।
এর সিনেমাটোগ্রাফি ভালো। তবে খুব উঁচুমানের সেটা বলা যাবে না। কালার কারেকশন আরও ভালো হতে পারত। শাকিব খানের ছবি হিসেবে আরও ভালো আশা করেছিলাম। অ্যাকশন তো তেমন একটা ছিল না। শেষের ক্লাইমেক্সটা আরও জমানো যেত। এখানে আমার মনে হয়েছে, আরেকটু বড় অ্যারেজমেন্টের দরকার ছিল।
ছবিটি নিয়ে শেষ করার আগে একটি বিষয় উল্লেখ করা উচিত, সেটা হলো ভক্ত। শাকিব মানেই অসংখ্য ভক্ত। নায়কের ভক্তরাই তার ছবির প্রাণ। যেটা প্রেক্ষাগৃহে বসে ছবি দেখলে টের পাওয়া যায়। এ নায়কের এন্ট্রি, সংলাপ—সবকিছু ভক্তরা দারুণভাবে গ্রহণ করেছে, হাততালি দিয়েছে, শিস বাজিয়েছে। প্রেক্ষাগৃহে বসে তারা খুব উপভোগ করেছেন সিনেমাটি। আর এ ভক্তদের কারণেই ‘লিডার’ চলতি উৎসবের লাভজনক ছবিতে রূপ নিতে পারে।
লেখক: জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা