স্টার সিনেপ্লেক্স। দেশের সর্বাধুনিক মাল্টিপ্লেক্সের তকমা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে দেশ ও দেশের বাইরের সিনেমা দিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে স্টার সিনেপ্লেক্সের ১৯টি শাখা চালু রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। নান্দনিক পরিবেশ, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত সাউন্ড সিস্টেমসহ নানা অভিনবত্বের মধ্য দিয়ে দেশের সিনেমাপ্রেমী দর্শকের কাছে এটি বিনোদনের পছন্দের একটি স্থান। তবে এবার এমন একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভয়ংকর কিছু অভিযোগ আনলেন দেশের প্রভাবশালী সিনেমা নির্মাতা ও প্রযোজকরা। যার শুরুতেই রয়েছে দর্শক ও প্রযোজক ঠকানো।
গত রোববার বিএফডিসিতে স্টার সিনপ্লেক্সে উদাসীনতায় এক প্রতিবাদ সভা আয়োজন করা হয়। যেখানে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি ও খ্যাতিমান পরিচালক কাজী হায়াৎ বলেন, ‘আমরা চলচ্চিত্রের মানুষরা মনে হয় মরে গেছি। প্রতিবাদ করা উচিত চলচ্চিত্রের সব সংগঠনের। যেখানে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি শেষ হয়ে গেছে। সেখানে একটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের মতো করে ব্যবসা করে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংস করে দিচ্ছে। তারা ৫০০ টাকায় টিকিট বিক্রি করে। কিন্তু প্রযোজকদের দেয় মাত্র ৪৫ টাকা। একটি ধুঁকতে থাকা ইন্ডাস্ট্রির প্রযোজকদের জন্য যা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। বাংলা সিনেমা ধ্বংসে এদের ভূমিকা নিয়ে এখনই সবার এগিয়ে আসতে হবে। তারা যদি ঠিক না হয় তাহলে আমরা মানববন্ধনে যাব। এ ছাড়া মাননীয় তথ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের একটি লিখিত অভিযোগও পাঠানো হবে। এদের বিরুদ্ধে এখনই দাঁড়ানোর সময়।’
এ সময় প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু স্টার সিনেপ্লেক্সের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়ার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমার মাথায় এরা কাঁঠাল ভাঙে খাচ্ছে। সিনেপ্লেক্স জন্মের পর থেকে তার এসি চার্জ, ক্লিনিং চার্জ নিয়ে যাচ্ছেন। সবই যদি আমরা দেই তাহলে আপনাদের আসলে কী। এরপর তারা শেয়ার মানি নিয়ে লুকোচুরি করে যাচ্ছে। তারা প্রযোজকের কল ধরে না। এসব তো একজন প্রযোজকের জন্য যেমন লজ্জার তেমনই নির্মাতার জন্য। এমন আর চলতে দেওয়া হবে না। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা এর একটা সিদ্ধান্ত চাই। যা নিয়ে দ্রুতই বসা হবে। যদি তারা শেয়ার মানিসহ, ৮৫ শতাংশ বাংলা সিনেমাকে প্রাধান্য না দেয় তাহলে এই আন্দোলন চলতেই থাকবে।’
এ সময় নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু বলনে, ‘এরা আমাদের চলচ্চিত্র ধ্বংস করার জন্য পেছনে লেগেছে। এদের বিরুদ্ধে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার দেব। বঙ্গবন্ধু এই ইন্ডাস্ট্রি আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন। সেই ইন্ডাস্ট্রি এখনো ধ্বংস হয়নি। কিন্তু ধ্বংস করতে এসব অসাধু ব্যবসায়ী পেছনে লেগেছে। তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার এখনই সময়।’ এই প্রতিবাদ সভার ডাক দেওয়া নির্মাতা ও প্রযোজক এমডি ইকবাল ১৯ সংগঠনের নেতা খোরশেদ আলম খসরুকে শক্ত হাতে এই সমস্যার সমাধান করে সিনেমার পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আপনি আমাদের সভার অভিভাবক। আপনি ১৯ সংগঠনের সভাপতি। সিনেমার ভালোর জন্য আপনি সিদ্ধান্ত নেন। আমরা সবাই আপনার পাশে আছি।’
স্টার সিনেপ্লেক্সের বিরুদ্ধে এর আগেও দেশি সিনেমাকে হেয় করে বিদেশি সিনেমা প্রদর্শনের অভিযোগ রয়েছে। তবে এবার এই অভিযোগ আরও বেশি আলোচনায় আসে একই সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া বদরুল আনাম সৌদের ‘শ্যামা কাব্য’, এবং ‘ডেডবডি’ দর্শক পাচ্ছে না বলে নামিয়ে দিলে। পরে মুখ খোলে তারা। এবার এলো কঠোর আন্দোলনের ডাক।