দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। তীব্র গরমে যখন মানুষ একটু শীতলছায়া খুঁজছেন, ঠিক তখনই যেন আরও গরম হয়ে উঠেছে চলচ্চিত্রপাড়া।
গত ১৯ এপ্রিল ছিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। সেখানে কলি-নিপুন ও মিশা-ডিপজল পরিষদ ছাড়াও স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু উত্তাপ ছিল সাধারণ সম্পাদক পদে ডিপজল ও নিপুনের মধ্যে কে জয়ী হন সেটি নিয়ে। শেষ পর্যন্ত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে ১৬ ভোটে হেরে যান নিপুন। নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেন মিশা-ডিপজলরা। নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনো সংঘাত না হলেও পরবর্তী কলঙ্কজনক ঘটনার সাক্ষী হলেন সাংবাদিক-শিল্পীরা।
বড় জয় নিয়েও স্বস্তিতে নেই মিশা-ডিপজলরা। শুরুতেই বিতর্কের মুখে পড়তে হলো তাদের। ২৩ এপ্রিল ছিল মিশা-ডিপজলসহ নবনির্বাচিতদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। কিন্তু সেখানেই বাধে বিপত্তি। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার আগেই দোয়া মাহফিল ও মিষ্টি বিতরণ চলাকালে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বিএফডিসি প্রাঙ্গণ।
এদিন দফায় দফায় নায়ক-ভিলেনরা হামলা চালান ইউটিউবার ও সাংবাদিকদের ওপর। এতে কমপক্ষে ২০ জন ইউটিউবার সাংবাদিক গুরুতর আহত হন। সবশেষ তথ্য তাদের মধ্যে চারজন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে একজন ইউটিউবারের আপত্তিকর প্রশ্ন নিয়ে! শপথ অনুষ্ঠানে এক সময়ের আলোচিত ও সমালোচিত চিত্রনায়িকা ময়ূরী তার মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন। কথিত ওই ইউটিউবার কাম সাংবাদিক ময়ূরীর অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে মায়ের অভিনীত সিনেমা নিয়ে আপত্তিকর প্রশ্ন করেন।
ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন খলঅভিনেতা শিবা শানু। তিনি ওই ইউটিউবারকে সাংবাদিক কি না জানতে চান। একপর্যায়ে তাকে চলে যেতে বলেন শিবা। কিন্তু ওই ইউটিউবার তর্কে জড়িয়ে পড়েন। হঠাৎ করে হাতাহাতি-ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। অন্যদিকে আরেক ইউটিউবার খবর ছড়িয়ে দেন শিল্পীরা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। কিছু অতিউৎসাহী ইউটিউবার সঙ্গে সঙ্গে ওই মারামারিতে যোগ দেন। তারা শিল্পী সমিতির ভেতরে ঢুকে শিবাকে মারতে তেড়ে যান। একপর্যায়ে নায়ক-ভিলেনরা এক হয়ে ইউটিউবারদের ওপর হামলা চালান। এফডিসির প্রতিটি কোনায় কোনায় ধরে ধরে পেটানো হয় তাদের। এতে বেশ কয়েকটি টেলিভিশন সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যানও আহত হন। শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি মিশা সওদাগর রণক্ষেত্রের মধ্যে ঢুকে দুপক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করলেও কোনো লাভ হয়নি। উপস্থিত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা চেষ্টা করেন মারামারি থামানোর। শেষ পর্যন্ত পুলিশ ও চলচ্চিত্র প্রযোজক আরশাদ আদনানের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদ এবং সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিনোদন সাংবাদিকসহ নানা বিটে কর্মরত সাংবাদিকরা। গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত এফডিসির সামনে মানববন্ধনের আয়োজক ছিল টেলিভিশন ক্যামেরাম্যান অ্যাসোসিয়েশন। মানববন্ধনে বিএফইউজের সভাপতি ওমর ফারুক, মহাসচিব দীপ আজাদ, ডিইউজের নবনির্বাচিত অন্যতম সভাপতি সাজ্জাদ আলম তপু, সোহেল হায়দার, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মুজতবা ধ্রুব, বাচসাসের সভাপতি রিমন মাহফুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবুসহ বিভিন্ন টেলিভিশন, পত্রিকা ও অনলাইনের সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ঘটনার পর ওইদিন রাতেই তাৎক্ষণিকভাবে তদন্তের জন্য ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি ও সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পাঁচজন করে রাখা হয়েছে। আর উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন প্রযোজক আরশাদ আদনান।
১০ জনের তদন্ত কমিটিতে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে রাহাত সাইফুল, লিমন আহমেদ, আহমেদ তৌকির, বুলবুল আহমেদ জয়, আবুল কালাম এবং শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে মিশা সওদাগর, ডি এ তায়েব, নানা শাহ, রুবেল ও রত্নাকে রাখা হয়েছে।