ঝলমলে পর্দার আড়ালে রয়েছে দুঃখ। ক্যামেরায় সেসব হয়তো ধরা পড়ে না। কিংবা দর্শকরা হয়তো শুধু আনন্দের ভাগটাই নিতে চায়। কষ্টগুলো বইতে হয় অভিনয়শিল্পীকে একাই। দেশের অনেক বড় তারকাও ক্যারিয়ারের শুরুতে অবহেলার শিকার হয়েছেন। সে ক্ষেত্রে অভিনেতা সাইদুর রহমান পাভেলকে পর্দায় নতুনই বলা চলে। দুবছর হলো এ পথে তার আনাগোনা। তার শুরুর গল্পেও লুকিয়ে আছে বেদনা। ফেলে আসা সেই যাতনার ভাগ দিয়েছেন কালবেলাকেও। পাভেল বললেন, ‘অভিনয় করতে গিয়ে প্রথম দিকে হতো কী—আমি দুপুরে খেয়েছি কি না, সেটা কেউ জিজ্ঞাসাও করত না। আবার দেখা যেত আমাকে পেমেন্টের কথা বলে নিয়ে গেছেন এক রকম; কিন্তু কাজ শেষে সেটা হয়ে যেত অন্যরকম। তারা বলতেন—পরে বাড়িয়ে দেবেন; কিন্তু তার সঙ্গে পরে আর কাজও হয়নি। আবার এমনও হয়েছে যে আমি অভিনয়শিল্পী, কিন্তু আমাকে দিয়ে অন্য কাজও করিয়ে নিয়েছেন। এরকম হয়েছে, কিন্তু আমি সেটা ভালোবেসেই করেছি। আমি বুঝতে পারিনি—আমাকে সহজে পেয়ে সেটা করিয়ে নিয়েছেন তারা।’
দুই বছরের পথচলায় সমালোচনার তোপেও পড়তে হয়েছে পাভেলকে। তিনিসহ আরও কজন অভিনেতা ও পরিচালকের প্রতি নাটকের সংলাপে গালাগাল দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। নাটকে অশ্লীলতা থাকার কথাও বলছেন কেউ কেউ। এসব বিষয়ে পাভেল বলেন, “গালির ক্ষেত্রে তো ‘টুট-টুট’ শব্দ যোগ করে দেওয়া হচ্ছে। আমি জানি না নাটকে কী অশ্লীলতা দেখানো হচ্ছে! কোনো বেড সিন তো দেখাচ্ছে না। যারা অভিযোগ তোলেন তারাই আবার অন্য দেশের সিরিজগুলো দেখছেন। তারা কিন্তু সেগুলোর সঙ্গে আমাদের কনটেন্টের তুলনাও করেন। বিদেশি সিরিজের সঙ্গে তুলনা করলে তো হবে না। বাংলাদেশে যতটুকু সম্ভব ততটুকুই করা হচ্ছে। গল্পের প্রয়োজনে যদি দু-এক জায়গায় গালি দিতে হয়, সেখানে ‘টুট-টুট’ শব্দ যোগ করে তো দেওয়াই হচ্ছে। আমাকেও তো অনেকে বলে টুট-টুট আর্টিস্ট।”
পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল জি বাংলায় ‘মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার ৯’-এর মঞ্চ থেকে ফিরে এখন পুরোদস্তুর অভিনেতা পাভেল। অভিনয়ে কীভাবে আসা হলো, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার অভিনয় জীবনের শুরুই হয়নি। তবে অভিনয় তো প্রতিটি দিনই শুরু হয়। যদি বলেন ক্যামেরার সামনে কাজ করার কথা, সেটার শুরু মীরাক্কেল থেকে। প্রথম দিকে আমি অনেক স্ট্যান্ডআপ কমেডি করেছিলাম। আমার গ্রুমার যারা ছিলেন, তারা একটা সময় আমাকে স্ক্রিপ্ট নিয়ে কাজের পরামর্শ দিলেন। আমি সেই অনুযায়ী কাজ করলাম। পরে দেখলাম আমাদের জাজ যারা ছিলেন তারা সবাই হ্যাপি। তারা আমার খুব প্রশংসা করলেন। অভিনয়ের আমি কিছুই বুঝি না। আমি সিনিয়রদের কাছ থেকে অভিনয় শেখার চেষ্টা করছি। সেটা একসময় শিখে যাব।’
মূলত ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটকে অভিনয় করে বেশ জনপ্রিয় হয়েছেন পাভেল। এটা তারই স্বীকারোক্তি। জনপ্রিয় হওয়ার পর সহঅভিনেতা নির্বাচনে খুঁতখুঁতে হয়েছেন কি না কিংবা কোনো সিন্ডিকেটে নাম লিখিয়েছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে অভিনেতা বলেন, ‘আমি তো অত বড় অভিনেতা হইনি এখনো যে আমার কোনো সিন্ডিকেট বা কোনো জুটি নিয়ে কাজ করতে হবে। আমার প্রথম প্রায়োরিটি থাকে গল্প।
ভালো গল্পে কাজ করার চেষ্টা করি। আবার গল্প ভালো হলেও দেখা যায় ডিরেকটর বা এডিটর সেটিকে ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেননি। অভিনয়শিল্পীরা নিজের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেন। অনেক ডিরেক্টর আমাকে প্রশ্ন করেন যে আমার সঙ্গে কাকে নেবেন। আমার উত্তর হলো, সেটা তো আমার দেখার
বিষয় নয়।’
‘ভালো গল্প পেলে নিজেকে উজাড় করে কাজটি করতে ইচ্ছা করে, সেটা যে প্ল্যাটফর্মেই হোক’, কথার শেষে এমনটাই জানালেন পাভেল। তা ছাড়া নাটকে এত নারীর সঙ্গে অভিনয় করতে দেখে তার স্ত্রী কোনো আপত্তি করেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে অভিনেতা বলেন, ‘আমার স্ত্রী আমাকে এতটাই ভালোবাসে যে আমি তার প্রতি ইমপ্রেসড।আমার স্ত্রী সাংবাদিক। সে ব্যাপারগুলো জানে বোঝে। সে একটা সময় বিনোদনেও ছিল। তো এ বিষয়ে তার সব জানা আছে।’
মন্তব্য করুন