ঈদের আমেজ থাকবে আর বলিউড ভাইজান সালমান খানের সিনেমা পর্দায় আসবে না—এমন চিত্র দেখা যায় কদাচিৎ। বেশিরভাগ সময়ই ঈদের বাজার দখলে থাকে ভাইজানের সিনেমায়। এতেই অভ্যস্ত তার অনুরাগীরা। ব্যতিক্রম হয়নি এবারও। সাম্প্রতিক সময়ে তাকে খুব একটা বড় পর্দায় দেখা যায়নি। বেশ কিছু হতাশার সিনেমার পর দেখা গিয়েছিল ‘টাইগার-৩’ ও ‘কিসিকা ভাই কিসিকা জান’-এ, তা-ও হয়ে গেল বছর দুয়েক। দুই বছর পর ফের ভাইজানকে বড় পর্দায় দেখতে ভক্তদের আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। অবশেষে ঈদের আগের দিন মুক্তি পেল সালমান খানের বহুল প্রত্যাশিত ‘সিকান্দার’। কিছুদিন আগে রিলিজ হওয়া টিজারে ধামাকা মাতিয়েছেন তিনি। টিজার-ট্রেলার দেখে দর্শকদের মধ্যে ছিল উন্মাদনা। পাশাপাশি ৩১ বছরের ছোট ন্যাশনাল ক্র্যাশ ‘রাশমিকা মান্দানা’র সঙ্গে সালমানের প্রথমবার অনস্ক্রিন রসায়ন কেমন—সেটা দেখতেও উদগ্রীব ছিলেন দর্শক। ২৮ বছরের রাশমিকার সরব উপস্থিতি ৫৯ বছরের সালমানের সিনেমায় উপরি পাওনাই বলা যায়। অ্যাকশন থ্রিলার এ সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন দক্ষিণী পরিচালক এ আর মুরুগাদোস; যিনি ‘গজিনি’ ও ‘দরবার’-এর মতো ব্লকবাস্টার সিনেমার নির্মাতা।
‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’ বক্স অফিসে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হওয়ার পর সিকান্দার ছিল বড় পর্দায় প্রত্যাবর্তন আর ঘুরে দাঁড়ানোর মিশন। বছর দুয়েক আগে বন্ধু শাহরুখ খান ‘পাঠান’ আর ‘জাওয়ান’ দিয়ে যেভাবে বক্স অফিসে আলোড়ন তুলেছিলেন, সালমানও চেয়েছিলেন সেই পথে এগোনোর। দক্ষিণী নির্মাতা অ্যাটলির শরণাপন্ন হয়ে শাহরুখ সফল হন, তেমনি সালমানও নিজের হারানো সিংহাসন ফিরে পেতে জোট বাঁধেন এ আর মুরুগাদোসের সঙ্গে। টিজার-ট্রেলার যেভাবে সাড়া ফেলে, মূল কাহিনি কিন্তু সেভাবে এগোয় না। কিছু জায়গায় নায়ককে দেখে মনে হচ্ছিল, জোর করে অভিনয় করানো হচ্ছে। মারামারি হোক বা রোমান্টিক মুহূর্ত—যেন কেউ তাকে জোর করে অভিনয় করাচ্ছেন। মারকাটারি অ্যাকশন, স্টারডম, পর্দায় লার্জার দ্যান লাইফ দেখতে সালমানের ভক্তরা নিঃসন্দেহে ভালোবাসেন। সেদিক থেকে সফল হলেও গল্পের দুর্বলতায় ফিকে হয়ে যায় বাকি সব।
সিনেমার গল্পে দেখা যায়, গুজরাটের রাজকোটের রাজা সঞ্জয় রাজকোট ‘সিকান্দার’ নামে পরিচিত। সঞ্জয়ের স্ত্রী সাইশ্রী চিত্রশিল্পী, যাকে সবাই ‘রানি সৈধা’ বলে ডাকে। মন্ত্রী রাকেশ প্রধানের ছেলে অর্জুনের সঙ্গে সঞ্জয়ের শত্রুতা হয়। সেই রেশে ঘটনাক্রমে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর করুণ মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর তার ফুসফুস, চোখ ও হৃৎপিণ্ড মুম্বাইয়ে তিন রোগীর দেহে প্রতিস্থাপিত হয়। অনুতপ্ত সঞ্জয় সেই তিনজনের সঙ্গে দেখা করেন আর সমস্যায় এগিয়ে আসেন এবং অন্যায়ের প্রতিশোধ নিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এভাবেই গড়াতে থাকে সিনেমার কাহিনি। সমাজের নানা অসংগতি বরাবরই প্রাধান্য পায় সালমানের সিনেমায়। অনুরাগীদের সচেতনতা বাড়ানোর ব্যাপারে তাকে তৎপর দেখা যায়। ‘সিকান্দারে’ও সেই চেষ্টা করা হয়েছে। তবে সিনেমাটি যত এগোতে থাকে তত মনে হতে থাকে, এটি কেবলই একটি অ্যাকশন মুভি। সালমান অনুরাগীরা তাকে যেহেতু রণংদেহী রূপে দেখতে পছন্দ করেন, নিঃসন্দেহে তাদের ভালোই লাগবে। তবে বেশিরভাগ দর্শক ‘সিকান্দারে’র গল্পের সঙ্গে নিজেকে একাত্মবোধ করতে পারেননি। এমনকি দ্বিতীয় পর্বের পর ছবিটা কেন এগোচ্ছে, তার ব্যাখ্যাই পাওয়া যায় না। সিনেমাটির একমাত্র টুইস্ট নায়িকা রাশমিকার মৃত্যু। সেখান থেকেই এগোয় পুরো সিনেমা। এ ছাড়া গতানুগতিকতার আবদ্ধেই সীমাবদ্ধ ছিল কাহিনি।
দর্শক-ভক্তরা সালমানের ধামাকা দেখার অপেক্ষায় ছিলেন। সালমানও জানিয়েছিলেন ‘সিকান্দার’ হতে যাচ্ছে তার সেরা ছবি। অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান হলেও মন ভরেনি বেশিরভাগ ভক্তের। তুমুল হাইপ থাকলেও মুক্তির পর প্রত্যাশামতো আঁচড় কাটতে পারেনি দর্শকহৃদয়ে। ঈদের মৌসুম হলেও এখন পর্যন্ত বক্স অফিসে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। বক্স অফিসের হিসাব আপাতত ভবিষ্যতের জন্যই তুলে রাখা ভালো। কারণ অ্যাকশন, রোমান্স, দৌড়ঝাঁপ, আবেগ, নাচ-গান সবই আছে ‘সিকান্দারে’। রিভিউ যা-ই হোক, ভাইজানভক্ত হলে অন্তত একবার দেখা যেতেই পারে ‘সিকান্দার’।
মন্তব্য করুন