কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র (হাসান ইমাম) রোববার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স ছিল ৮৪ বছর। তার মৃত্যুতে চলচ্চিত্র অঙ্গণে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শেষ বিদায়ে বিএফডিসিতে সহকর্মীদের ফুলেল শ্রদ্ধা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা প্রবীর মিত্র। নবাবখ্যাত এ অভিনেতাকে বিদায় দিতে এসে স্মৃতিচারণ করেন তার সহকর্মী ও চলচ্চিত্র অঙ্গণের তারকারা।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, “আমাদের সিনিয়র যারা আছে, সকলেই অবহেলিত। তবে প্রবীরদা আসলে একটু আড়ালেই থাকার চেষ্টা করেছেন। প্রবীরদাও প্রথমে অন্য ধর্মে ছিলেন, পরবর্তীতে ভাবীকে ভালোবেসে ধর্মান্তরিত হন। তবে শেষ বয়সে উনি নামাজ, রোজা, কোরআন, ধর্মকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন। দুনিয়াতে চলতে গেলে আমাদের মধ্যে যে ভুলভ্রান্তি হয়ে যায়, প্রবীরদাসহ আমরা যেন সকলে সকলে মাফ করে দেই।“
মিশা সওদাগর বলেন, একে একে করে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি শূন্য হয়ে যাচ্ছে। সে সময়টাকে আমরা বলতাম সোনালী যুগ। আমরা যে স্কুলিং থেকে এসেছি, আমরা সবসময় সিনিয়র বা মুরব্বীদের সম্মান করতাম। প্রবীর মিত্র সাহেবের কাজ থেকে আমরা সহনশীলতা, ধৈর্য্যের শিক্ষা পেয়েছি। শিল্পী কাকে বলে এখনকার সাথে তখনকার পার্থক্য দেখলেই বুঝবেন। প্রবীর মিত্রের কাছ থেকে শিখেছি, একজন শিল্পীকে শিল্পীর পরিচয় বহন করতে হলে মৃত্যু অবধি শিল্পকে ধারন করতে হয়। তার নিয়ন্ত্রিত জীবন, ভদ্রতায় মুগ্ধ সবাই। তিনি প্রোডাকশন বয় থেকে শুরু করে সবাইকে আপনি সম্মোধন করতেন। তাকে নিয়ে কেউ কখনো কটু কথা লিখতে পারেননি।“
চিত্রনায়ক বাপ্পি চৌধুরী বলেন, “আমার সঙ্গে উনার একটা ভালো সম্পর্ক ছিল। আমি তার বাসায় যেতাম বার্থডে সেলিব্রেট করতে, আড্ডা দিতে। তার মধ্যে অনেক কষ্ট কাজ করতো যে কারও সঙ্গে তার দেখা হয় না। আজ সবাই এই সমাগম অথচ উনি থাকাকালীন যখন চাইতেন তখন কেউ আসেনি। বলা হয়, আমাদের ইন্ডাস্ট্রি একটা ফ্যামিলি। কিন্তু আমরা আসলে ফ্যামিলি না। আমাদের প্রবীণ শিল্পীরা, যারা ১৬০০ হল লিড করে এসেছে, তারা আমাদের সুপারস্টার। তারা একটু ভালোবাসাই চেয়েছে। সবার কাছে অনুরধ, বেঁচে থাকাকালীন তাদের উৎসবগুলো উদযাপন করুন।“
নির্মাতা ছটকু আহমেদ বলেন, “আমাদের একজন অসাধারণ গুণী শিল্পী প্রবীরদা। আমার সঙ্গে অনেক ছবিতেই কাজ করে গেছে। তার অসাধারণ অভিনয়ের জন্য আমাদের প্রতিটা গল্পেই তাকে চিন্তা করে রাখতাম। এবং তার অভিনয় নৈপুণ্যে প্রতিটি চরিত্রকে অসাধারণ রূপায়ন করেছেন। সে নায়ক, ভাই, বাবা নানান চরিত্র করেছে। আমরা তার অভিনয়ে মুগ্ধ ছিলাম। এমন কোন শিল্পী ছিল না যে তাকে ভালোবাসে না। একের পর এক এ শূন্যতা তৈরি হচ্ছে তা যেন নতুন প্রজন্ম দিয়ে পূরণ হয়।“
চিত্রনায়ক উজ্জ্বল বলেন, “প্রবীর ছিল জনতার শিল্পী। তার আগমন হয়েছিল নায়ক হিসেবে। পরবর্তীতে পরিচালক, প্রযোজকদের আস্থাপূর্ণ শিল্পীতে পরিণত হয়েছিলেন। এবং দর্শকরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম তার অভিনয় দেখেছেন এবং স্বীকৃতি দিয়েছেন। এ ইন্ডাস্ট্রিকে যারা গড়ে দিয়ে গেছেন, তাদের মধ্যে প্রবীর মিত্র অন্যতম। সে সহ সবার প্রতি আমার শ্রদ্ধা। আমাদের ইন্ডাস্ট্রির সোনালী দিন ফিরে আসুক।“
চিত্রনায়িকা মুক্তি বলেন, “প্রবীর মিত্র মামা অনেক ঠাণ্ডা প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। আমার পরিবারের সঙ্গে তার অনেক ভালো সম্পর্ক ছিল। উনার মৃত্যুতে খুব কষ্ট লাগছে। তাকে শেষ দেখাও দেখতে পারলাম না। আমাদের পরপর দুজন তারকা চলে গেলেন, যারা দুজনেই ফিল্মের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত ছিলেন। তারকাদের তারকা ছিলেন প্রবীর মিত্র। আর যে মানুষগুলোর সঙ্গে ওঠাবসা, পরিবারের মতন, সেখান থেকে যদি খোঁজ-খবর না নেয়া হয় তবে তো কষ্ট থাকবেই।