আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বর্তমান বিশ্বে আলোচিত একটি বিষয়। মানুষের দৈনন্দিন জীবন আরও বেশি নিখুঁত ও সহজ করে দিতে এর বিকল্প দেখছে না অনেক বড় প্রতিষ্ঠান। যার কারণে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এর ব্যবহারও বাড়ছে দিন দিন। যার ফলে মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাশক্তিকে কৃত্রিম উপায়ে প্রযুক্তিনির্ভর করে যন্ত্রের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে বাস্তবে রূপ দেওয়া হচ্ছে। যেই প্রভাবে বিশ্ব চলচ্চিত্র শিল্পেও এসেছে পরিবর্তন।
হলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে এআইর ব্যবহার বহু বছর আগে থেকেই করা হচ্ছে। এরপর এর ব্যবহার বেড়েছে বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতেও। এবার বাংলাদেশে কৃত্রিম উপায়ে নতুন করে নির্মিত করা হয়েছে দেশের প্রথম ডিজিটাল প্রযুক্তিতে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘বালুঘড়ি-দ্য স্যান্ড ক্লক’। এটি পরিচালনা করেছেন রাজীবুল হোসেন। এর মাধ্যমে দেশের চলচ্চিত্রে প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে সিনেমাটি।
পরিচালক রাজীবুল হোসেন কেন ‘বালুঘড়ি-দ্য স্যান্ড ক্লক’ সিনেমায় ‘এআই’ টেকনোলজি ব্যবহার করেছেন, জানতে চাইলে তিনি কালবেলাকে বলেন, “কাগজে-কলমে আমার এ সিনেমাটি আজ থেকে ১৮ বছর আগে ২০০৬ সালে দেশের প্রথম ডিজিটাল সিনেমা হিসেবে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর অনেক বছর পার হয়ে গেছে। এখন সিনেমাটি দর্শকের সামনে নতুন করে আবার মুক্তি পেতে যাচ্ছে। এই নতুন বিষয়টি মাথায় রেখে আমি সবাইকে নতুন কিছু উপহার দিতে চেয়েছি। যে চাওয়া হচ্ছে দেশের সিনেমায় নতুন প্রযুক্তি যুক্ত করা। সে জায়গা থেকেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ‘বালুঘড়ি-দ্য স্যান্ড ক্লক’ সিনেমায় ‘এআই’ ব্যবহার করেছি। এর মাধ্যমে আমাদের দর্শকরা প্রথমবারের মতো পূর্ণদৈর্ঘ্য একটি ‘এআই’ নির্ভর সিনেমা দেখতে পাবেন।”
কৃত্রিম প্রযুক্তি ব্যবহারে সিনেমায় কী কী পরিবর্তন এসেছে এবং কোনো সংশয় ছিল কি না, জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, “পরিবর্তনের জন্যই তো আমাদের এই টেকনোলজির ব্যবহার করা। যার কারণে সিনেমাটি শুরু থেকে রি-মাস্টারিং করে এর কালার গ্রেডিং, ইমেজ ইন হ্যান্ডস, সাইন্ড স্ক্যাপ ডিজাইন ও ভয়েস কোয়ালিটির ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়েছে। এরপর আধুনিক প্রযুক্তির আবিষ্কার ও উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সিনেমাটি পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। তবে ‘এআই’ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে একটু দ্বিধা ছিল। কারণ আমরা এর ব্যবহার কতটুকু করব, এটি ব্যবহার করলে সৃজনশীলতায় কতটা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে এবং সৃজনশীলতা কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এসব বিষয় মাথায় নিয়ে এরপর আমরা ভাবতে শুরু করি ‘বালুঘড়ি’ যেহেতু এর আগে একটি মাইলফলক সৃষ্টি করেছে, তাহলে আরও একটি মাইলফলকের জন্য আমরা এর এক্সপেরিমেন্ট শুরু করি। তারপর সফলতাও আসতে শুরু করে।”
এরপর জানতে চাওয়া হয় কেন এত পুরোনো একটি সিনেমাকে ‘এআই’ দ্বারা আবার পুনর্নির্মাণ করা হলো। তিনি বলেন, ‘সিনেমার আসলে কোনো বয়স হয় না। সিনেমার একটি চিরকালীন বিষয় থাকে, সে জায়গা থেকে সময়ের সঙ্গে আমরা টেকনোলজির ব্যবহার যুক্ত করেছি। এ ছাড়া হাজার বছরের পুরোনো একটি বই নতুনভাবে অনুবাদ করলে যে আনন্দ পাওয়া যায়, সে আনন্দই আমি পেয়েছি কাজটি করে। পুনর্নির্মাণের এ ছাড়া আর কোনো কারণ নেই।’
‘বালুঘড়ি’ ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মুক্তি পেয়েছিল। সে সময় রাজীবুল হোসেনের পরিচালনায় অ্যান্টি-ন্যারেটিভ শৈলীতে নির্মিত সিনেমাটি দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। এবার এটি দর্শকদের জন্য নতুনভাবে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে। তবে কবে, কোথায় মুক্তি পাবে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছিলেন প্রয়াত কায়েস চৌধুরী, রশিদ হারুন, ওয়াহিদা মালিক, ফারহানা মিলি, মনোজ কুমার প্রামাণিক, রুনা খানসহ আরও অনেকে। এ চলচ্চিত্রটি নির্মাতা তার চিন্তার গভীরতা ও গল্পকথার মাধ্যমে দর্শকদের তাদের জীবনের নতুন নতুন প্রশ্নের সম্মুখীন করবে বলেও জানান তিনি। প্রথম যখন সিনেমাটি মুক্তি পায় কোনো গান ছিল না। এবার সিনেমায় গান থাকছে, যা কি না এআই দিয়েই নির্মিত।