নানা রকম দূষণে পৃথিবী আক্রান্ত। এর মধ্যে অন্যতম হলো বায়ুদূষণ। যেই দূষণ মানব এই জগৎকে দিন দিন ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই বায়ুদূষণ রোধ করতে হলে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাই এ নিয়ে বিশ্বের বড় বড় সংস্থা কাজ করে আসছে যুগ যুগ ধরে। যার সঙ্গে যুক্ত আছে হলিউড-বলিউডের তারকারাও।
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে অনেক আগে থেকেই কাজ করছেন হলিউড অভিনেতা ও প্রযোজক লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও। জলবায়ু রক্ষায় ২০১৪ সাল থেকে জাতিসংঘের ‘শান্তির দূত’ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
২০১৬ সালে ‘দ্য রেভেন্যান্ট’ সিনেমার জন্য প্রথমবার অস্কার হাতে নিয়েও এ অভিনেতা বলেন পরিবেশ রক্ষার কথা। ডিক্যাপ্রিও ছাড়াও পরিবেশপ্রেমীদের তালিকায় রয়েছেন হলিউড তারকা পিয়ার্স ব্রসন্যান, ব্র্যাড পিট, ম্যাট ডেমন, বেন অ্যাফ্লেক, নাটালি পোর্টম্যান, মার্ক রাফালো, কেট ব্ল্যানচেট, ড্রিউ ব্যারিমোরের মতো আরও অনেক তারকা। এ ছাড়া শুধু ডিক্যাপ্রিও নন, হলিউডের বেশ কয়েকজন তারকা কাজ করছেন পরিবেশ নিয়ে।
তেমনি পরিবেশ বাঁচাতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন দেশের জনপ্রিয় পপ সংগীতশিল্পী মেহরীন মাহমুদ। ২০২৩ সাল থেকে তিনি নিয়মিত গাছ লাগিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, যা তিনি আজীবন চলমান রাখতে চান, সে অনুযায়ী রয়েছে পরিকল্পনাও।
গাছ লাগানো নিয়ে মেহরীন বলেন, ‘২০২৩ সালের ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে গ্রিন ফেস্ট কন্সেপ্ট নিয়ে আমরা কাজ শুরু করি। যার প্রধান উদ্দেশ্যে ছিল গাছ লাগানো। এরপর আমরা কয়েক হাজার গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করলাম, লাগালামও। এরপর খেয়াল করলাম গাছ রোপণ করা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু পরিচর্যার অভাবে গাছগুলো মারা যাচ্ছে। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম গাছ শুধু লাগালেই হবে না, বাঁচাতে হলে আমাদের ভূমিকাও নিতে হবে। এরপর আমরা ভাবতে শুরু করলাম গাছ বাঁচানোর জন্য কোথায় লাগানো যায়। কারণ, রোপণের পর আমরা তো আর দেখভাল করতে পারব না। তারপর সিদ্ধান্ত নিই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রজেক্টটি করার। ওখানে শিক্ষিত ও বুদ্ধিমান মানুষরা থাকেন। তাদের কাছেই গাছগুলো নিরাপদ এবং যত্নে থাকবে। এ উদ্যোগ চলমান থাকবে। কারণ এ কাজে শুধু আমি একাই যুক্ত নই, আমার সঙ্গে আরও অনেক অর্গানাইজেশন রয়েছে। সবাইকে নিয়েই সুন্দর, সবুজ একটি পৃথিবী ভবিষ্যৎ উপহার দিতে চাই।’
মেহরীন উপদেশ দিতে কখনোই পছন্দ করেন না। তিনি মনে করেন, মানুষ যদি তার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে ভাবেন তাহলেই সচেতনভাবে বাঁচার চেষ্টা করবেন, প্রকৃতিকেও বাঁচিয়ে রাখতে ভূমিকা রাখবেন। তার মতে, ‘আমরা শুধু গাছ থেকে অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে থাকব আর তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসব না, তা হয় না।’ তাই মানুষ ও গাছ দুটির জীবন বাঁচাতেই তার এ উদ্যোগ।
মেহরীন গানের পাশাপাশি সামাজিক কাজের সঙ্গে অনেক আগে থেকেই যুক্ত আছেন। শিশুদের চোখ নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছেন তিনি। যুক্ত আছেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গেও। এ নিয়ে মেহরীন বলেন, ‘আমার প্রথম পরিচয় আমি একজন শিল্পী। গানের সঙ্গে আমার সম্পর্ক আগের মতোই রয়েছে। হয়তো কাজের ব্যস্ততা কিছুটা কমেছে, অন্যান্য কাজের জন্য। তবে এ বছরও আমি বেশ কিছু গানে ইভেন্ট করেছি আন্তর্জাতিকভাবে। সংগীত নিয়ে দেশের বাইরে সেমিনারও করেছি। সামনে আমার নতুন কিছু গান আসছে। যার প্রস্তুতি চলছে। তবে সামাজিক কাজগুলোতে একটু বেশি ব্যস্ততা যাচ্ছে। এর অনেক কারণ আছে।
তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, আমি শিশু এবং বয়স্কদের চোখ নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছি। প্রতি বছর ৩০ অক্টোবর আমার জন্মদিনের দিন অ্যাই ক্যাম্পেইন থাকে। সেখানে আমি উপস্থিত থাকি। এ ছাড়া অনেক সম্মানী ব্যক্তিও থাকেন। এরপর আমি জানি ছোটবেলায় শিশুদের চোখে কী ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে, যা সাধারণভাবে বাবা-মায়ের ধারণায় থাকে না। এ সমস্যা নিয়ে আমি আজীবন কাজ করতে চাই। এ ছাড়া স্লাম স্কুল নিয়ে আমি কাজ করছি।
কারণ, এ কাজগুলো করতে গিয়ে তাদের জীবন সম্পর্কে আমার জানার সৌভাগ্য হয়েছে। আমি সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশু নিয়ে কাজ করে শান্তি পাই। এ শান্তি নিয়েই আমি বেঁচে থাকতে চাই। আমি এবং আমার এ কাজের সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন তাদের জন্য সবাই প্রার্থনা করবেন। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এ শক্তি ও ইচ্ছা সারা জীবন যেন আমাদের বজায় থাকে।’
মেহরীন দুই যুগের বেশি সময় ধরে দর্শকদের গান উপহার দিয়ে আসছেন। তার গো গার্ল নামে একটি মিউজিক্যাল প্ল্যাটফর্মও রয়েছে। সেখানেই শ্রোতারা তার সব গান শুনতে পারবে বলেও জানান এ শিল্পী।