‘জাগ্গু দাদা’ বলতেই সবাই বুঝে যায় কার কথা বলা হচ্ছে। অভিনেতা জ্যাকি শ্রফ; ভক্তের ভালোবাসায় পরোপকারী ‘জাগ্গু দাদা’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তবে ‘জাগ্গু দাদা’ হয়ে ওঠার নেপথ্যে রয়েছে এক ভিন্ন কাহিনি, যা হয়তো অনেকেরই অজানা।
একটা সময় বেশ লাজুক ও অন্তর্মুখী ছিলেন জ্যাকি। সিনেমাপ্রেমীদের কাছে উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ।
জ্যাকি তার জীবনের প্রায় অনেকটা সময় কাটিয়েছেন মুম্বাইয়ের তিন বাট্টি বলেশ্বর এলাকার বস্তিতে। বড় ভাই ও বাবা-মায়ের সঙ্গে ছোট থেকে সেখানেই থাকতেন তিনি। অভিনেতার ভাই সবসময় অসহায় হতদরিদ্র মানুষগুলোর পাশে থাকতেন। এক সাক্ষাৎকারে জ্যাকি বলেন, বড় ভাই-ই ছিল তার জীবনের হিরো। ভাইয়ের মতো হতে চান তিনি। কাজ করতে চান মানুষের জন্য।
বস্তিতে জ্যাকির ভাই ছিলেন আসলে ‘জাগ্গু দাদা’। তবে একটি দুর্ঘটনায় ভাইকে চিরকালের মতো হারাতে হয় তাকে। এরপর বস্তির সবার কাছে তিনিই হয়ে ওঠেন ‘জাগ্গু দাদা’।
জ্যাকিকে অভাবের তাড়নায় কাজ করতে হয়েছে হোটেলে, আবার কখনো থিয়েটারের বাইরে করতে হয়েছে বাদাম বিক্রি। এমনকি লাগাতে হয়েছে দেয়ালে পোস্টারও। তখনকার দিনে কোন কাজ বড় আর কোনটা ছোট সেটা তার কাছে ভাবনার বিষয় ছিল না। টাকার জন্য যে কাজ পেতেন, তাই করতেন।
তবে অভাবের তাড়নায় দিশেহারা জ্যাকি হঠাৎ করেই এমন এক ব্যক্তির দেখা পান, যিনি তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। অজানা সেই ব্যক্তি মডেলিংয়ের প্রস্তাব দেন জ্যাকিকে। সুযোগটি লুফে নিতে ভুল করেননি ‘জাগ্গু দাদা’। সেখান থেকেই শুরু হয় ভাগ্যের পরিবর্তন। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি হয়ে ওঠেন ভারতীয় ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম সুপারস্টার।
এত সাফল্যের পরও জ্যাকি তার শেকড় ভোলেননি, খুব কাছ থেকে দেখেছেন দারিদ্র্য কাকে বলে। এ কারণেই তিনি সবসময় গরিবদের পাশে দাঁড়ান। বলা হয়, বলেশ্বরের যে বস্তিতে তার শৈশব কেটেছে, সেখানকার প্রায় প্রতিটি ভিক্ষুকের কাছেও রয়েছে তার ব্যক্তিগত নম্বর। তারা যে কোনো প্রয়োজনে ফোন করলেই তাদের সাহায্যে এগিয়ে যান এই অভিনেতা।
জ্যাকি শ্রফ তার উদারতার প্রমাণ দিয়েছেন নানাভাবে, মুম্বাইয়ের নানাবতী হাসপাতালে তার নামে গরিবদের জন্য একটি আলাদা অ্যাকাউন্ট চালাচ্ছেন তিনি। সেখান থেকে ১০০টিরও বেশি দরিদ্র পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেন বলিপাড়ার এই নায়ক।
জ্যাকি শ্রফের প্রথম সিনেমা ‘হিরো’ সুপারহিট হয়েছিল। রাতারাতি তিনি বনে যান সুপারস্টার। এই সাফল্যের পরও তিনি ছেড়ে যাননি মুম্বাইয়ের বস্তি। পাঁচ থেকে ছয় বছর ছিলেন বস্তিতে। সকালে সবার সঙ্গে লাইন ধরে গিয়েছেন বাথরুমেও।
টাকার অভাবে একসময় যে মানুষকে করতে হয়েছে প্রান্তিক মানুষের কাজ, তার সম্পদের পরিমাণ এখন আকাশচুম্বী, বর্তমানে তিনি প্রায় ২১২ কোটি ভারতীয় রুপি সম্পদের মালিক। রয়েছে একাধিক বাড়ি, বিএমডব্লিউসহ অনেক বিলাসবহুল গাড়ি।
নব্বই দশকে নারী ভক্তদের হৃদয়ে একধরনের ঝড় তুলে দিয়েছিলেন জ্যাকি শ্রফ। ‘শপথ’, ‘দুশমনি’, ‘কুদরত কা কানুন’সহ একের পর এক সিনেমায় নিজের জাত চিনিয়েছিলেন বলিউডের এই বর্ষীয়ান অভিনেতা। ইদানীং অবশ্য কাজ কমিয়ে দিয়েছেন বলিপাড়ার ‘জাগ্গু দাদা’। বর্তমানে তিনি মন দিয়েছেন রান্নায়। মাঝেমধ্যেই নানারকম গ্রামীণ খাবার নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অবতরণ করেন এই অভিনেতা।