তিন যুগে ডাইনোসর
পৃথিবীর প্রাণের বিকাশকে বিভিন্ন যুগে ভাগ করা হয়। তবে এ যুগ কিন্তু বারো বছরের যুগ নয়। কোটি কোটি বছর মিলেই একেকটি যুগ বা সময়সীমা ধরা হয়। আর ডাইনোসর পৃথিবীতে ছিল তিনটি বিশাল যুগ ধরে। প্রথমটি হলো ট্রায়াসিক, পরেরটা জুরাসিক ও সবশেষে ক্রিয়াসিস। যখন টি-রেক্স ডাইনোসরের আবির্ভাব ঘটে, তারও প্রায় আট কোটি বছর আগে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল স্টেগোসরস প্রজাতির ডাইনোসর। বুঝতেই পারছ, ডাইনোসরের রাজত্ব কত বিশাল সময় ধরে ছিল।
প্রজাতি
এখন পর্যন্ত যত ফসিল পাওয়া গেছে, সেগুলো থেকে গবেষকরা অনুমান করছেন অন্তত ৭০০ ধরনের ডাইনোসর ছিল। কোনোটা ছিল দশতলা ভবনের সমান বড়, আবার কোনোটি ছিল বাজপাখির মতো। এদের কোনোটা অন্য প্রাণী খেয়ে বাঁচত, কোনোটা শুধু ঘাস, লতাপাতা খেত।
সবখানে ডাইনোসর
পৃথিবীতে এখন একেক প্রাণীর বাস একেক মহাদেশে বেশি। যেমন তোমার আশপাশের জঙ্গলে একটা ক্যাঙ্গারুও খুঁজে পাবে না। আবার সুন্দরবনের যতই গহিনে যাও, একটা সিংহও পাবে না। কিন্তু ডাইনোসরের বিচরণ ছিল সব মহাদেশে। এমনকি অ্যান্টার্কটিকার বরফেও ডাইনোসরের ফসিল পাওয়া গেছে। এই ফাঁকে জানিয়ে রাখি, যারা ডাইনোসরের ফসিল নিয়ে গবেষণা করেন, তাদের বলে প্যালিওনটোলজিস্ট।
ডাইনোসর নামটা কে রাখল?
শব্দটা এসেছে দুটো গ্রিক শব্দ থেকে। ডেনিওস মানে হলো ভয়ানক আর সরস মানে গিরগিটি। ডাইনোসর দেখতেও এমন। আর তাই ১৮৪২ সালে ডাইনোসরের অনেকগুলো ফসিল আবিষ্কারের পর প্যালিওনটোলজিস্ট রিচার্ড ওয়েন প্রথম এ ধরনের প্রাণীর নাম রাখেন ডাইনোসর।
আর্জেন্টিনোসরস
আর্জেন্টিনার ভক্তদের জন্য সুখবর। কারণ এ দেশের নামেই রাখা হয়েছে সবচেয়ে বড় ডাইনোসরের নাম। আর্জেন্টিনার প্যালিওনটোলজিস্ট রোডলফো কোরিয়া ১৯৯৩ সালে এর ফসিল আবিষ্কার করেন। একটি আর্জেন্টিনোসরসের ওজন হতো কমসে কম ১৫টি হাতির সমান। উচ্চতা ৮ মিটার ও দৈর্ঘ্যে ৩৭ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতো এরা।
টি-রেক্সের কামড়
প্রাণিজগতের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক কামড় বসানোর রেকর্ডটা ছিল টাইরানোসরসের দখলে। এর মুখে থাকত সুচালো ও ধারালো ৫০-৬০টি দাঁত। নিজের চেয়ে আকারে বড় ডাইনোসরের মাংসও অনায়াসে ছিঁড়ে নিতে পারত ওরা। যে কারণে ডাইনোসর জগতের সবচেয়ে হিংস্র বলে ধরা হয় এদের।
সবচেয়ে বড় নাম
চীনে এক ধরনের তৃণভোজী ডাইনোসরের ফসিল পাওয়া গিয়েছিল। কোনো এক কারণে যার নাম রাখা হয় ‘মাইক্রোপেকিসেফালোসরস’। আকারে বড় না হলেও ডাইনোসরদের মধ্যে এর নামই সবচেয়ে বড়।
বংশধর
ডাইনোসর থেকে বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় আরও অনেক প্রাণী এসেছে। এর মধ্যে আছে গিরগিটি, টিকটিকি, কচ্ছপ, সাপ ও কুমির। আবার মুরগি থেকে শুরু করে এখনকার অনেক পাখিরই পূর্বপুরুষ ছিল ডাইনোসর। অর্থাৎ ডাইনোসর বিলুপ্ত হওয়ার আগেই এদের কয়েকটি ছোট হতে হতে পাখির মতো হয়ে যায়। আর এ প্রক্রিয়াতেও লেগেছে অন্তত কোটি বছর।