প্রেমে পড়া রাবণ... হা হা হা… বারণ!
কিন্তু বারণ করলেইবা শুনছে কে!! কারণে হোক কিংবা অকারণে পরস্পরের সঙ্গে ঠিক মিলে যায়। কোনো বাধা, বারণ কিছুই মানতে চায় না। এমনকি প্রেমে ধোঁকা, ছ্যাঁকা—যাবতীয় সবকিছু খেয়েও ফের প্রেমের গলিতে পা বাড়ান। এরকমই কিছু কথা সারাবেলার বিশেষ আয়োজনে তুলে ধরেছেন—কাজী মাহেরা
বাঙালি প্রেম নিবেদন করতে পছন্দ করে বিশেষ কোনোদিনে, তাও যদি হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি; তাহলে তো কোনো কথাই নেই। বিশ্বায়নের হাত ধরে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার দিনে পরিণত হলো আমাদের দেশেও।
লাল রঙের ছোট-বড় তুলার তৈরি হৃদয় উঁকি মারল উপহারের দোকান, কফি শপ, শপিং মল সর্বত্র। প্রেম মানেই সবার চোখের সামনে এ তুলার হৃদয়ই ভেসে
উঠত। ধীরে ধীরে ভালোবাসার উদযাপন মানেই ১৪ ফেব্রুয়ারি হয়ে গেল। এদিন উপহার দেওয়া-নেওয়া, নতুন পোশাক পরা এবং কোনো রেস্তোরাঁয় গিয়ে খাওয়া-দাওয়ার একটি যেন নির্দিষ্ট তারিখ হয়ে গেল। তাই এখনকার প্রজন্মের কাছে ভ্যালেনটাইনস ডে বছরের ক্যালেন্ডারে এক জরুরি দিন বটে।
কিন্তু আপনি কি জানেন, অন্য অনেক দেশে এদিনটি কাটে একদম অন্যভাবে। কিছু দেশে ভালোবাসার উদযাপন হলেও, তা হয় অভিনব ভঙ্গিতে। আবার কিছু দেশে একদমই অন্য কিছু ঘটে ১৪ ফেব্রুয়ারি। জেনে নেওয়া যাক, কোন দেশে এদিন কেমন কাটে—
ফ্রান্স
ফ্রান্সের এক ছোট্ট গ্রামের নাম ভ্যালেনটাইন। সে গ্রাম এদিন সেজে ওঠে দারুণভাবে। প্রতিটি বাড়ি গ্রিটিংস কার্ড, ভালোবাসার বার্তা, প্রেমের প্রস্তাব লেখা চিরকুটে সাজিয়ে তোলা হয়। লতাপাতা ফুলও থাকে সেই অন্দরসজ্জায়। বাড়ির বাগানও সাজানো হয় একই ভাবে।
দক্ষিণ কোরিয়া
শুধু ১৪ ফেব্রুয়ারি নয়, এ দেশে ভালোবাসার উদযাপন হয় প্রতি মাসের ১৪ তারিখ। গোলাপ দিবস পালন করা হয় মে মাসে, চুম্বন দিবস জুনে এবং আলিঙ্গন দিবস এপ্রিলে।
ঘানা
১৪ ফ্রেব্রুয়ারি এ দেশে জাতীয় চকলেট দিবস হিসেবে পালিত হয়। দেশের পর্যটন বাড়ানোর জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছিল ঘানার সরকার।
আর্জেন্টিনা
ভালোবাসার উদযাপন হয়; কিন্তু তা ফেব্রুয়ারি মাসে নয়, জুলাই মাসে। কাছের মানুষকে চকলেট বা অন্য কোনো উপহার দেওয়ার রীতি রয়েছে এ দেশেও।
ডেনমার্ক
ভালোবাসার উদযাপন হয় বটে, তবে খানিক অভিনব কায়দায়। ভালোবাসার মানুষকে এদিন হাতে তৈরি কার্ড দেওয়া হয়। তবে যে সে কার্ড নয়। সাদা ফুল শুকিয়ে তা কাগজে ফুটিয়ে তোলা হয়। ঠিক যেমন বইয়ের পাতার ফাঁকে রেখে দিত এবং তার একটা স্পষ্ট ছাপ বইয়ে পড়ত, কিছুটা তেমন পদ্ধতিতে এ সাদা ফুলগুলো ফুটিয়ে তোলা হয় কার্ডে। এর নাম স্নোড্রপ।
রোমানিয়া
১৪ নয়, ২৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার উদযাপন হয় এ দেশে। বিভিন্ন জুটি এদিনে বাগদান পর্ব সেরে ফেলে। সৌভাগ্যের আশায় সাধারণত বরফে মুখ ধুয়ে নেয় তারা এদিনে।
জাপান
মনে পড়ে স্কুলবেলার প্রেমের কথা? অনেক সাহস জুগিয়ে হয়তো কাউকে উপহার দিয়েছিলেন কিছু। কিন্তু অন্যজন তা নির্মমভাবে ফিরিয়ে দিল।
জাপানে থাকলে সে দুঃখ খানিক কমবে। ১৪ ফেব্রুয়ারি কোনো উপহার দিতে পারেন পছন্দের মানুষকে।
তিনি ফিরিয়ে দিতে চাইলে তাকে ১৪ মার্চ অবধি অপেক্ষা করতে হবে। সেদিন ‘হোয়াইট ডে’ পালন করা হয়।
এইতো জানা গেল বিভিন্ন দেশের ভালোবাসা দিবসের রীতিনীতি; এবার জেনে নিই কেন আমরা প্রেমে পড়ি—
কথায় আছে কার যে কোথায় মন মজে, কার যে কখন কাকে মনে ধরে, তা কেউ বলতে পারে না। ঠিক কী কারণে কে, কার প্রেমে পড়ল—তা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে উত্তর প্রায় খুঁজেই পাওয়া যায় না। তবে বিজ্ঞান কি আর ছাড়ে? বিজ্ঞান বলে সবকিছুর মতো প্রেমে পড়ারও নাকি যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে। এ ব্যাপারে কী বলছে বিজ্ঞান? জেনে নিই এমনই কয়েকটি কারণ।
যখন দুজন মানুষ সত্যিই একরকম...
প্রেমের ব্যাপারে প্রচলিত কথা অপজিট অ্যাট্রাক্ট। তবে বিজ্ঞান কিন্তু এ যুক্তি একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে। বিজ্ঞানের দাবি, দুজনের ব্যক্তিত্বে, পছন্দ-অপছন্দে যত মিল থাকে, তারা একে অন্যকে তত বেশি আকৃষ্ট করে।
নিজের বাবা বা মায়ের সঙ্গে চেহারায় মিল...
মনোবিদরা জানাচ্ছেন, কোনো পুরুষের সঙ্গে বাবার চেহারায় মিল থাকলে মহিলারা সেই পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হন। অন্যদিকে, যে কোনো মহিলার সঙ্গে তার মায়ের চেহারায় মিল থাকলে পুরুষরা সেই মহিলার দিকে সহজে আকৃষ্ট হতে পারেন।
খোলা হাত, খোলা মন...
কথা বলার সময় হাত পকেটে পুরে রাখলে বা কাঁধ শক্ত করে রাখলে সে মানুষের প্রেমে পড়া সহজ নয়। কে কতটা সহজভাবে মিশছে, তা তার শরীরী ভাষাতেই ফুটে ওঠে। আলাপচারিতার সময় শরীর সহজ থাকলে, খোলা হাতে কথা বললে তার প্রতি মানুষ সহজে আকৃষ্ট হয়। প্রেমেও পড়ে।
চোখের ভাষা...
প্রেমের প্রথম সম্মতি কিন্তু চোখে চোখেই হয়। সব মানুষেরই চোখের ভাষা আলাদা। একে অন্যের চোখের ভাষা পড়তে পারলে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। বিজ্ঞান জানাচ্ছে, একে অন্যের চোখের দিকে টানা দুই মিনিট বা তার বেশি সময় তাকিয়ে থাকার অনুভূতি যদি মনোরম হয়—তবে প্রেমে পড়তে পারে।
নিয়ম করে ফোনে গল্প করা যথেষ্ট নয়...
প্রেমে পড়া কয়েক মুহূর্তের বিষয়; কিন্তু সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা সবচেয়ে কঠিন। নিয়ম করে ফোনে কথা বললে আর সঙ্গীকে উপহারে ভরিয়ে দিলেই সম্পর্ক মজবুত করা যায় না। প্রেম এমন এক অনুভূতি, যা আবেগের সংমিশ্রণে তৈরি হয়। সম্পর্কের সমীকরণ ঠিক কতটা মজবুত। সম্পর্কের স্থায়িত্ব শুধু ভালোবাসার ওপর নির্ভর করে না। ভালোবাসা ছাড়াও সম্পর্ক মজবুত করতে প্রয়োজন বেশ কিছু বিষয়।
সম্পর্ক ভালো রাখতে একে অন্যের প্রতি বিশ্বাস রাখাটা প্রয়োজন। সম্পর্কে ওঠানামা থাকবেই। তবে বিশ্বাসের ভিত যদি দৃঢ় হয়, তাহলে সম্পর্ক হবে অমলিন।
যে কোনো সম্পর্কে পরস্পরের প্রতি সম্মান থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। একে অন্যের পছন্দ, ভালোলাগা আলাদা হতে পারে। অস্বাভাবিক কিছু নয়। পরস্পরের পছন্দ, অপছন্দ, উপলব্ধিগুলো এড়িয়ে না গিয়ে বরং কখনো কখনো সেগুলোর স্বাদ নিন। একসঙ্গে দুজনের পছন্দগুলো ভাগাভাগি করে নিন।
যে কোনো সম্পর্কে বন্ধুত্ব থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। এটি সুস্থ সম্পর্কের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। দুজনের ভালোলাগা, মন্দলাগা, ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, উদ্বেগ, আনন্দ, চিন্তা—সবকিছুই একে অন্যের কাছে মন খুলে প্রকাশ করুন। সম্পর্কে কোনো জড়তা রাখবেন না। এমনকি সঙ্গীর কোনো আচরণেও যদি খারাপ লাগে তাও জানিয়ে দিন। রাগ পুষে রাখলে শুধু জটিলতাই বাড়বে। কিছু লাভ হবে না।
প্রেমে পড়লে যে কেউ একটি নিশ্চিন্ত আশ্রয় খোঁজেন। চান একটি ভরসার কাঁধ। আপনি আপনার সঙ্গীর সেই ভরসার জায়গা হয়ে উঠুন। একে অন্যের খারাপ সময়ে মানসিক জোর দিন। সম্পর্ক ভালো রাখতে মানসিক স্পর্শ জরুরি।