আল্লাহ সর্বশক্তিমান সত্তা। সমগ্র বিশ্বজগৎ এবং মানবজাতি তিনি সৃষ্টি করেছেন। এসব সৃষ্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে, তার ইবাদত ও উপাসনা করা। কিন্তু যুগে যুগে অনেক মানুষ আল্লাহকে ভুলে গিয়ে উদ্ধতস্বভাবের হয়ে গিয়েছিল। আল্লাহ তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করে দেন। পবিত্র কোরআনে এমন ছয়টি ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে সেসব সংক্ষেপে তুলে ধরেছেন মুহাদ্দিস ও ইসলামী চিন্তাবিদ মুফতি আরিফ খান সাদ
কওমে নুহ
হজরত আদম (আ.) ইন্তেকালের পর এক হাজার বছরের মধ্যেই মানুষের ভেতর এক আল্লাহর ইবাদতের পরিবর্তে অসংখ্য মূর্তির উপাসনা শুরু হয়ে যায়। আল্লাহতায়ালা মানুষকে সতর্ক করার জন্য প্রথম রাসুল ও বার্তাবাহক হিসেবে প্রেরণ করেন হজরত নুহ (আ.)-কে। তিনি তার জাতিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে ৯৫০ বছর নিরলসভাবে দাওয়াত দেন। কিন্তু তারা নুহ (আ.)-এর দাওয়াত তাচ্ছিল্যভরে প্রত্যাখ্যান করে। তারা পাল্টা হুমকি দিয়ে বলে, ‘হে নুহ! যদি তুমি বিরত না হও, তবে পাথর মেরে তোমার মস্তক চূর্ণবিচূর্ণ করে দেওয়া হবে।’ (সুরা শুয়ারা, আয়াত: ১১৬)। বহু চেষ্টায় অল্পসংখ্যক মানুষ সঠিক পথে ফিরে আসে। নুহ (আ.) তাদের আল্লাহর আজাব সম্পর্কে সতর্ক করেন। অবশেষে আল্লাহর আজাব নেমে আসে। এক ভয়ংকর প্লাবন ও জলোচ্ছ্বাস তার জাতির অবাধ্য লোকদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তখন নুহ (আ.)-এর নৌকায় যারা আশ্রয় নিয়েছিল তারাই রক্ষা পেয়েছিল। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তার (নুহের) বংশধরদের অবশিষ্ট রেখেছি বংশপরম্পরায়।’ (সুরা সাফফাত, আয়াত: ৭৭)। ছয় মাস পর প্লাবনের পানি নেমে গেলে ইরাকের মসুল শহরে তারা বসবাস শুরু করেন। তাদের মাধ্যমেই পুনরায় শুরু হয় মানবসভ্যতার দ্বিতীয় অভিযাত্রা।
কওমে আদ
হজরত নুহ (আ.)-এর কওমে বংশপরম্পরায় জনসংখ্যা বেড়ে গেলে কিছু পরিবার ইরাক থেকে ইয়েমেনের দিকে গিয়ে বসতি স্থাপন করে। এই বংশের নাম ছিল ‘আদ’। তারা হজরত নুহ (আ.)-এর ধর্মমত মেনে জীবনযাপন করত। কিন্তু কালক্রমে তাদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা। তারা আল্লাহর ইবাদত ছেড়ে ভোগ-বিলাস ও জীবন-জীবিকায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। স্থাপত্য ও নির্মাণ শিল্পে তারা অভূতপূর্ব প্রতিভার পরিচয় দেয়। তারা সুরম্য অট্টালিকা ও বাগান তৈরি করত। তাদের তৈরি ‘ইরম’ নগরীর মতো অনিন্দ্য সুন্দর শহর পৃথিবীর আর কোথাও ছিল না। তারা অঙ্কন শিল্পেও ছিল দক্ষ। জ্ঞান-বিজ্ঞানে তারা যেমন অগ্রসর ছিল, তেমনি সংস্কৃতিতেও অনন্য। কোরআনে তাদের শক্তিমত্তার প্রশংসা করে বলা হয়েছে, ‘তুমি কি দেখোনি, তোমার প্রতিপালক আদ জাতির ইরাম গোত্রের প্রতি কী করেছেন; যারা ছিল সুউচ্চ প্রাসাদের অধিকারী, যার সমতুল্য (প্রাসাদ) কোনো দেশে নির্মিত হয়নি।’ (সুরা ফাজর, আয়াত: ৬-৮)। আদ জাতি শক্তিমত্তায় আত্মম্ভরী স্বভাবের হয়ে উঠল। তারা ভুলে গেল যে, আল্লাহ বা স্রষ্টা বলতে কেউ আছেন। তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা যে আল্লাহই তাদের দিয়েছেন, তাও তারা বেমালুম ভুলে গেল। তাদের সতর্ক করার জন্য আল্লাহ হজরত হুদ (আ.)-কে নবী হিসেবে পাঠালেন। হজরত হুদ (আ.) আদ জাতির লোকদের গর্ব পরিত্যাগ করার আহ্বান জানালেন এবং আল্লাহর ইবাদত করার উপদেশ দিলেন। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে জীবন পরিচালনার কথাও বললেন। কিন্তু লোকেরা হুদ (আ.)-এর কথা শুনল না, বরং তারা তার কথা প্রত্যাখ্যান করল। তাকে বোকা ও মিথ্যাবাদী বলে গালাগাল দিল। নবীর প্রতি এমন অন্যায় আচরণে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হলেন। ফলে আদদের এলাকায় দেখা দিল প্রচণ্ড খরা। এতে তিন বছর তারা দুর্ভিক্ষের মধ্যে কাটাল। তারপরও তাদের স্বভাব-চরিত্রে কোনো পরিবর্তন হলো না। এবার সেখানে শুরু হলো ভয়ানক ঝড়। এই ঝড় সাত রাত ও আট দিন ধরে চলল। ফলে গোটা আদ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলো। আল্লাহ তার রহমতে হজরত হুদ (আ.) ও তার অনুসারীদের রক্ষা করলেন। আদ জাতির অমার্জনীয় হঠকারিতার ফলে প্রাথমিক আজাব হিসেবে উপর্যুপরি তিন বছর বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকে। তাদের শস্যক্ষেত শুষ্ক বালুকাময় মরুভূমিতে পরিণত হয়। বাগবাগিচা জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যায়। তা সত্ত্বেও তারা পাপ ত্যাগ করেনি। তারা বাধ্য হয়ে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করে। তখন আসমানে সাদা, কালো ও লাল মেঘ দেখা দেয়। একপর্যায়ে গায়েবি আওয়াজ আসে যে, তোমরা কোন ধরনের মেঘ পছন্দ করো? লোকেরা কালো মেঘ কামনা করে। তখন কালো মেঘ নেমে আসে। আদ জাতি তাকে স্বাগত জানিয়ে বলল, ‘এটি আমাদের বৃষ্টি দেবে।’ জবাবে হজরত হুদ (আ.) বললেন, ‘বরং এটি সেই বস্তু, যা তোমরা তাড়াতাড়ি চেয়েছিলে। এটি এমন বায়ু, যার মধ্যে রয়েছে মর্মন্তুদ আজাব।’ পরদিন ভোরে আল্লাহর চূড়ান্ত আজাব নেমে আসে। সাত রাত ও আট দিন ধরে অনবরত ঝড়-তুফান বইতে থাকে। মেঘের বিকট গর্জন ও বজ্রপাতে বাড়িঘর ধসে যায়। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে গাছপালা উপড়ে যায়। মানুষ ও জীবজন্তু শূন্যে উত্থিত হয়ে সজোরে জমিনে পতিত হয়। (সুরা হাক্কাহ, আয়াত: ৬-৮)
কওমে মাদয়ান
এ জাতি ছিল হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর তৃতীয় স্ত্রী কাতুরার ঘরের পুত্র মাদয়ানের বংশধর। আর হজরত শোয়াইব (আ.) প্রেরিত হয়েছিলেন মাদয়ান সম্প্রদায়ের কাছে। ধারণা করা হয়, বর্তমান সিরিয়ার মুয়ান নামক স্থানে কওমে হজরত শোয়াইব (আ.)-এর বসবাস ছিল। মাদয়ানবাসী পার্থিব লোভ-লালসায় এতটাই মত্ত হয়েছিল, তখন তারা পারস্পরিক লেনদেনের সময় ওজনে কম দিয়ে মানুষের হক আত্মসাৎ করত। দুর্নীতি, রাহাজানি, ছিনতাই, ধর্ষণ ও মজুতদারির মতো জঘন্য অন্যায় কাজ তাদের সমাজের মধ্যে বিষবাষ্পের মতো ছড়িয়ে পড়ে। এসব পাপে তারা এমনভাবে লিপ্ত ছিল যে, তারা কখনো মনে করত না, এসব কাজ অত্যন্ত জঘন্য বা গর্হিত। বরং তারা এসবের জন্য গর্ববোধ করত। অবশেষে তারা যখন সীমালঙ্ঘন করে ফেলল তখন আল্লাহতায়ালার গজব এসে গেল এবং তারা ধ্বংস হলো। তাদের সম্পর্কে কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘মাদয়ানবাসীদের প্রতি তাদের ভাই শোয়াইবকে আমি পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোনো উপাস্য নেই। আর ওজন ও পরিমাপে কম দিও না। আমি তো দেখছি তোমরা সমৃদ্ধিশালী (এর পরও তোমরা ওজনে কম দিলে), আমি তোমাদের জন্য এক সর্বগ্রাসী দিনের আজাবের আশঙ্কা করছি।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৮৪)। মাদিয়ানবাসীকে পবিত্র কোরআনে কোথাও কোথাও ‘আসহাবুল আইকা’ বলা হয়েছে। এর অর্থ হলো জঙ্গলের বাসিন্দা। এটি বলার কারণ হলো, এই অবাধ্য জনগোষ্ঠী প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে নিজেদের বসতি ছেড়ে জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। মহান আল্লাহ সেখানেই তাদের ধ্বংস করে দেন। কেউ কেউ বলেন, ওই জঙ্গলে ‘আইকা’ নামের একটি গাছকে তারা পূজা করত। এ কারণে তাদের ‘আসহাবুল আইকা’ বলা হয়।
কওমে সামুদ
আদ জাতির মতোই তৎকালীন আরেকটি জাতি হচ্ছে সামুদ। বর্তমান সৌদি আরবের ‘হিজর’ ছিল সামুদ জাতির কেন্দ্রীয় আবাসস্থল। সে শহরের ধ্বংসাবশেষ মদিনার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। বর্তমান শহর আল উলা থেকে কয়েক মাইল ব্যবধানে তা দেখা যায়। আদ জাতির পর তারাই ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে সমৃদ্ধিশালী জাতি। কিন্তু তাদের জীবনযাপনের মান যতটা উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছেছিল, মানবতা ও নৈতিকতার মান ততই নিম্নগামী ছিল। একদিকে উন্মুক্ত প্রান্তরে পাথর খোদাই করে করে প্রাসাদের পর প্রাসাদ তৈরি হচ্ছিল, অন্যদিকে সমাজে কুফর, শিরক ও পৌত্তলিকতার প্রসার ঘটছিল। অন্যায় ও অবিচারে সমাজ জর্জরিত হতে থাকে। সমাজে চরিত্রহীন লোকের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। তাদের হেদায়েতের জন্য পাঠানো হয় নবী হজরত সালেহ (আ.)-কে। সালেহ (আ.) সারা জীবন তাদের হেদায়েতের পথে আনার চেষ্টা করেন। এতে অল্প কিছু সঙ্গী ছাড়া গোটা জাতি তার অবাধ্যই থেকে যায়। একপর্যায়ে তারা দাবি করে, আপনি যদি সত্যি নবী হয়ে থাকেন, তাহলে আমাদের ‘কাতেবা’ নামের পাথরময় পাহাড়ের ভেতর থেকে একটি ১০ মাসের অন্তঃসত্ত্বা, সবল ও স্বাস্থ্যবতী মাদি উট বের করে দেখান। এটি দেখাতে পারলে আমরা আপনার ওপর ইমান আনব। সালেহ (আ.) আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। আল্লাহর কুদরতে পাহাড় থেকে একটি অদ্ভুত রকমের মাদি উট বের হয়। তা দেখে কিছু লোক ইমান আনে। কিন্তু তাদের সর্দাররা ইমান আনেনি, বরং তারা সে মাদি উটকে হত্যা করে ফেলে। এতে সালেহ (আ.) তার জাতির ওপর আল্লাহর আজাব নেমে আসার ঘোষণা দেন। তিনি তাদের সতর্ক করে দেন যে, তিন দিন পরই আল্লাহর আজাব তোমাদের ধ্বংস করে দেবে। নির্ধারিত সময়ে আসমানি আজাব এসে অবিশ্বাসীদের চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তারপর সীমা লঙ্ঘনকারীদের মহানাদ আঘাত করে। ফলে তারা নিজ নিজ গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে থাকে; যেন তারা কখনোই সেখানে বসবাস করেনি। জেনে রেখো, সামুদ জাতি তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করেছিল। আরও জেনে রেখো, ধ্বংসই হলো সামুদ জাতির পরিণাম।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৬৭-৬৮)। গগনবিদারী আওয়াজ সামুদ জাতির কর্ণকুহরে আঘাত হানে। সেই আওয়াজে তারা নিজ নিজ গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে থাকে।
কোরআনের বাণী ও শিক্ষা
কওমে ফেরাউন
নিজেকে খোদা দাবি করেছিল ফেরাউন। তার কাছে ইমানের দাওয়াত নিয়ে গিয়েছিলেন মুসা ও হারুন (আ.)। বিনিময়ে মুসা (আ.)-কে হত্যা করতে মনস্থির করে ফেরাউন। সদলবলে ফেরাউন একদিন মুসা (আ.)-কে ধাওয়া করে। তিন দিকে ঘেরাও হওয়া মুসার দলের সামনে ছিল উত্তাল সাগর। আল্লাহর হুকুমে সাগরে পথ সৃষ্টি হয়। নিজের দল নিয়ে মুসা (আ.) এই পথ দিয়ে সমুদ্র পার হয়ে যান। কিন্তু সাগরে ডুবে মারা যায় ফেরাউন। আল্লাহ তাকে পৃথিবীবাসীর কাছে দৃষ্টান্ত হিসেবে রেখে দিয়েছেন। তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় সাগরে নিমজ্জিত থাকার পরও তার লাশে কোনো পচন ধরেনি। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আজ আমি তোমার (ফেরাউন) দেহ রক্ষা করব, যাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হয়ে থাকো। অবশ্যই মানুষের মধ্যে অনেকে আমার নিদর্শন সম্পর্কে উদাসীন।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৯২)। সিনাই উপদ্বীপের পশ্চিম সাগরতীরে যেখানে ফেরাউনের লাশ সাগরে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল, আজও জায়গায়টি অপরিবর্তিত আছে। বর্তমানে এ জায়গার নাম জাবালে ফেরাউন বা ফেরাউন পর্বত। এরই কাছাকাছি আছে একটি গরম পানির ঝরনা। স্থানীয় লোকেরা এর নাম দিয়েছে হাম্মামে ফেরাউন। এর অবস্থানস্থল হচ্ছে আবু জানিমের কয়েক মাইল ওপরে উত্তরের দিকে। স্থানীয় লোকেরা জায়গাটি চিহ্নিত করে বলে, ফেরাউনের লাশ এখানে পড়ে থাকা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।
কওমে লুত
হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর যুগে আরেকজন নবী ছিলেন হজরত লুত (আ.)। তার জাতি যে অঞ্চলে বাস করত, তাকে বর্তমানে ট্রান্স জর্ডান বলা হয়। এটি ইরাক ও ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। বাইবেলে এ জাতির কেন্দ্রীয় স্থান ‘সাদুম’ বলা হয়েছে। সাদুম নগরী সবুজ শ্যামল ছিল। এতে পানির সরবরাহ ছিল পর্যাপ্ত। ভূমি ছিল অত্যন্ত উর্বর ও শস্যে ভরপুর। অঞ্চলটিকে আল্লাহতায়ালা নানা প্রাচুর্য দিয়ে ঢেলে সাজিয়েছিলেন। লুত (আ.)-এর জাতি প্রাচুর্যময় জীবনযাত্রার সঙ্গে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। পৃথিবীতে পরিচিত ও অপরিচিত এমন কোনো অপরাধ নেই, যা সে জাতির ভেতর ছিল না। সে সময় তারা আরও একটি অপরাধ আবিষ্কার করেছিল, যা তখন পর্যন্ত অন্য কোনো জাতির মধ্যে দেখা যায়নি। সেটি হলো সমকামিতা। এই জঘন্য অপকর্ম তারা প্রকাশ্যে করে আনন্দ লাভ করত। লুত (আ.)-এর জাতির পাপীদের ওপর সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মহাপ্রলয় নেমে আসে। এক শক্তিশালী ভূমিকম্প পুরো নগরটি সম্পূর্ণ উল্টে দেয়। ঘুমন্ত মানুষের ওপর তাদের ঘরবাড়ি আছড়ে পড়ে। পাশাপাশি আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো কঙ্কর নিক্ষিপ্ত হতে থাকে। ওই মহাপ্রলয়ের হাত থেকে কেউ রেহাই পায়নি। ওই জনপদের ধ্বংসাবশেষ এখনো বিদ্যমান। লুত (আ.)-এর জাতির ধ্বংসস্থলটি বর্তমানে ‘বাহরে মাইয়েত’ বা ‘বাহরে লুত’ নামে খ্যাত। এটি ডেড সি বা মৃত সাগর নামেও পরিচিত। ফিলিস্তিন ও জর্ডান নদীর মধ্যবর্তী স্থানে বিশাল অঞ্চলজুড়ে নদীর রূপ ধারণ করে আছে এটি। জায়গাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ নিচু। এর পানিতে তেলজাতীয় পদার্থ বেশি। এতে কোনো মাছ, ব্যাঙ, এমনকি কোনো জলজ প্রাণীও বেঁচে থাকতে পারে না। এ কারণেই একে ‘মৃত সাগর’ বলা হয়।