মেজর (অব.) ড. নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৪৫ এএম
আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:০৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

জেন জি, কতিপয় জেনারেল ও জাতিসংঘ প্রসঙ্গ

জেন জি, কতিপয় জেনারেল ও জাতিসংঘ প্রসঙ্গ

১৯৭১ থেকে ২০২৪—এই ৫৩ বছরের দীর্ঘ পথ চলায় বাংলাদেশের ইতিহাসে আলোচিত যে কয়েকটি শব্দ ভবিষ্যতের শতসহস্র বছরে নানা কারণে বারবার উচ্চারিত হবে, তার অন্যতম জেনারেশন জেড সংক্ষেপে জেন জি। অন্যদিকে কতিপয় জেনারেলের কর্মকাণ্ড এ সময়ে এতই আলোচিত, সমালোচিত ও বিতর্কিত হয়েছে যে, জেনারেল শব্দটাই ভবিষ্যতের জন্য একটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে। জুলাই বিপ্লবে সাধারণ মানুষ বা জেনারেল পাবলিক জীবনবাজি রেখে জেন জির ডাকে সাড়া দিয়ে রাস্তায় নামে। অতীতেও বহুবার বহুভাবে জেনারেল পাবলিক রাস্তায় নেমেছিল। কিন্তু নীতিনৈতিকতা এমনকি মানবিক মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে কেবলই ব্যক্তি স্বার্থে কতিপয় পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজি) কিংবা সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত কতিপয় সেনা জেনারেল এবং আইন অঙ্গনের কিছু অ্যাটর্নি জেনারেল গুম, খুন, অত্যাচার ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে এবং নিজের অধীনদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত করার কারণে বারবার ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় সেসব আন্দোলন। তবে জুলাই বিপ্লবের চরম ক্লান্তিকালে সেনা অফিসারদের এক সভায় বিচক্ষণ সেনাবাহিনী প্রধান অতি উৎসাহী এবং জাতি বা রাষ্ট্রের বদলে সরকারের প্রতি অন্ধ আনুগত্যের জন্য বিতর্কিত জেনারেলদের বদলে শুনতে চাইলেন তরুণ সেনা কর্মকর্তাদের কথা তথা সেনাবাহিনীতে কর্মরত জেন জি’দের কথা। সুযোগ পাওয়া মাত্র এই তরুণ জেন জি’রা পরিষ্কার ভাষায় বুঝিয়ে দিলেন তারা কোন অবস্থায় এ দেশের সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে যেতে রাজি নন। তারা লাইক দিয়েছেন ছাত্র-জনতাকে। অন্যদিকে আনফ্রেন্ড করেছেন হেলমেট ও হকিস্টিক বাহিনীকে এবং ব্লক করেছেন ফ্যাসিবাদকে। সব জেনেবুঝে সেনাবাহিনী প্রধান স্পষ্টত জানিয়ে দিলেন তার সেনারা জনতার প্রতি গুলি ছুড়বে না, বরং প্রতিটি গুলির কঠোর হিসাব নেওয়া হবে। সেনাপ্রধানের এমন ঘোষণায় জেনারেশন জি’র সাহসী ও অগ্রপথিক সদস্যরা দ্বিগুণ উৎসাহে মাঠে নামে আর অজানা শঙ্কায় বা পরিবারের চাপে ঘরে বসে থাকা জেন জি’রাও বলেকয়ে কিংবা কাউকে কিছু না বলেই ঘর ছেড়ে রাজপথে নামে। অন্যদিকে অভিভাবকরা আর বারণ না করে বরং নিজেরাই সন্তানদের হাত ধরে বেরিয়ে আসে ও জনতার কাতারে শামিল হয়। এর মধ্য দিয়েই জেন জি’র ভাষায় ৩৬ জুলাই অর্থাৎ ৫ আগস্ট আগের সরকারের প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।

তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ১৯৯৬ থেকে (মতান্তরে ১৯৯৭ থেকে) ২০১০ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়াদের আক্ষরিক অর্থে জেনারেশন জি বা জেন জি নামে আখ্যায়িত করা হয়। সে হিসাবে এখন যাদের বয়স ১৪ থেকে ২৮, তারাই জেন জি’র ধারক ও বাহক। ২০০১ সালের প্রথম দিনে (১ জানুয়ারি) শুরু হওয়া নতুন শতাব্দীতে তারা দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ প্রজন্ম। তাদের আগের প্রজন্মের নাম মিলেনিয়াল, যাদের জন্ম ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে। আর ২০১০ কিংবা পরবর্তী বছরগুলোতে জন্ম নেওয়া প্রজন্মের পরিচয় জেনারেশন আলফা (এ) হিসেবে। বিশ্বের প্রায় সর্বত্র মানবসমাজের এমন বিভাজনকে নানা আঙ্গিকে মূল্যায়ন করা হয়। সেই সূত্রে বলা যায়, আগামী অন্তত ৪০-৫০ বছর ছোট-বড় নানা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, নতুন কিছু উদ্ভাবন; এককথায় দেশ মহাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে সমগ্র বিশ্বের নীতিনির্ধারক হতে চলেছে এই জেন জি। এরই মধ্যে স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশ ফিনল্যান্ড পেয়েছে ৩৪ বছরের প্রধানমন্ত্রী সানা মার্টিনকে। আর লাতিন আমেরিকান দেশ চিলি পেয়েছে ৩৬ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বরিককে। কোনো বিপ্লব বা প্রতিবিপ্লব নয়, সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তারা উভয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

করপোরেট জগতেও জেন জি’র জয়জয়কার চোখে পড়ার মতো। মাত্র ১৯ বছর বয়সে কো-ফাউন্ডার বা চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) হিসেবে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন ফেসবুক বা ম্যাটার মার্ক জুকারবার্গ (জন্ম: ১৪ মে, ১৯৮৪), স্কেল এআইর আলেকজান্ডার ওয়াং (জন্ম: ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৩) এবং ও ওয়াই ও রুমসের রিতেশ আগরওয়াল (জন্ম: ১৬ নভেম্বর, ১৯৯৩) প্রমুখ। মাত্র ১৩ বছর বয়সে নিউইয়র্কের ফ্যাশন জগতে তোলপাড় তুলেছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার ইসাবেলা রোজ টেইলর। আমেরিকার কিলি জেনার মাত্র ২১ বছর বয়সে কসমেটিকস ব্যবসার মাধ্যমে বিলিয়ন ডলার সম্পদের মালিক হন। এ ধারাবাহিকতায় আগামী এক যুগ বা তারও কম সময়ে পৃথিবীর রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে চালকের ভূমিকায় থাকবে জেন জি—এমনটা নির্দ্বিধায় বলা চলে।

জেন জি’র চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো একই দলে বহুমতাবলম্বীর সহাবস্থানের মনোভাব আবার প্রয়োজনে ডিলিট বা আনফ্রেন্ড করে পছন্দের কাউকে নতুন করে খোঁজার প্রবণতা, ডিজিটাল জগতের অবয়ব ও নগদ অর্থের গুরুত্ব অনুধাবন, নানা প্রকার চ্যালেঞ্জের ভেতর দিয়ে বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতা এবং ডিলিট বা রিসেট করার তথা পরিবর্তন আনার সাহস প্রভৃতি। এমন বৈশিষ্ট্যের কারণে তারা মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের সুযোগ, চাকরির বদলে উদ্যোক্তা হওয়ার আত্মবিশ্বাস, ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়, মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা, মুক্তচিন্তা ও বাস্তবতা অনুধাবন প্রভৃতির সক্ষমতা অর্জন করেছে। এর বিপরীতে জেন জি’র দুর্বলতা হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অধিক সময় ব্যয়, নির্দিষ্ট কিছুতে মনঃসংযোগে ঘাটতি, অবাস্তব কিছু প্রত্যাশা করা, কোনো কিছু অর্জনের ক্ষেত্রে অপেক্ষা করতে অনীহা, না পাওয়ার বেদনায় ভেঙে পড়া ইত্যাদি।

জুলাই বিপ্লবের আগে এ জেনারেশন জি উপলব্ধি করে যে তাদের রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক জীবনে রিসেট বা ডিলিট করার তথা পরিবর্তন করার সুযোগ কমতে কমতে প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। তারা ভোট না দিলেও সরকার গঠন হয়ে যায়। যোগ্যতার বদলে রাজনৈতিক কোটায় চাকরির প্রথা ভাগ্যবদলের পথ রুদ্ধ করে দেয়। নতুন উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ক্ষুদ্রঋণও পাওয়া যায় না অথচ হাজার হাজার ডলার পাচার হয়ে যায়। কথা বললেই সবকিছু বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি আসে। লেজুড়বৃত্তি না করলে টিকে থাকা যায় না ইত্যাদি। এমনই এক বাস্তবতায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহল থেকে তাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলা এবং তাদের বিরুদ্ধে বিপথগামী আরেক দল জেন জি’কে লেলিয়ে দেওয়ার প্রেক্ষাপটে পরিবর্তনের জন্য বন্দুকের নলের সামনে বুক উঁচিয়ে দাঁড়ায় জেন জি।

ঠিক একই সময়ে সরকারের পক্ষে কাজ করার বিনিময়ে কতিপয় পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজি) কিংবা সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত কতিপয় সেনা জেনারেল এবং আইন অঙ্গনের কিছু অ্যাটর্নি জেনারেল কর্তৃক দেশের অর্থ বিদেশে পাচার, ব্যাংক ও শেয়ারবাজার লুট এবং দেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার সচিত্র তথ্য উপাত্ত ও সাক্ষ্য প্রকাশ্যে আসতে থাকে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে বিদেশি টেলিভিশন প্রকাশ করে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজের নাম, যিনি নিজে তার ভাইদের নিয়ে এক নজিরবিহীন অনিয়মের জীবন্ত উপাখ্যান। পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজি) বেনজীর আহমেদকে যেন গোটা বাংলাদেশ কিনে ফেলার নেশায় উন্মাদ হয়েছিলেন। জেনারেল জিয়াকে যেন পেয়ে বসে গুম ও খুনের ভয়ংকর নেশা। আরও দুই গোয়েন্দা প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানের মতো কতিপয় জেনারেলের বিদেশে থাকা শতকোটি টাকা দামের বাড়ির ছবি, নম্বর ও ঠিকানা প্রচার হতে থাকে দেশ-বিদেশের পত্রিকায়। প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তা উপদেষ্টার জেনারেল তারেকের বহুবিধ অমানবিক কর্মকাণ্ড ও অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির তথ্য রটে যায় দেশের আনাচে-কানাচে। সবকিছু মিলিয়ে জেনারেল পাবলিকের সেন্টিমেন্ট বা বৃহৎ জনসমর্থন কাজ করে জেনারেলদের বিপক্ষে এবং জেন জি’র পক্ষে। চূড়ান্ত পর্যায়ে এর ফল হলো ১৬ বছরের একটি কঠিন শাসনব্যবস্থার অবিশ্বাস্য পতন।

জেন জি’রা বড় আশাবাদী করেছে আমাদের। আমেরিকার সমাজবিজ্ঞানী ও বিপণন বিশেষজ্ঞ মার্সি মেরিম্যান এ প্রসঙ্গে যথার্থই বলেছেন—‘এই প্রজন্ম পরিবর্তনের মধ্যে জন্ম নিয়েছে। যে সমাজে তারা বেড়ে উঠেছে, তারই প্রতিফলন এ প্রজন্ম। আগামীর পৃথিবী যেভাবে গড়ে ওঠা উচিত, তারা নিজেরাই সেই কাঠামো। আমাদের সামনে ভবিষ্যতে কী আসছে, তা তরুণ প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে উপলব্ধি করা যায়। মানুষের চাহিদা ও প্রত্যাশা পরিবর্তন এরই মধ্যে চলমান। এ পরিবর্তন অনুধাবন করে ব্যবসা-বাণিজ্যে সফল হতে হলে আমাদের জেন জি’র চাওয়া, প্রয়োজনীয়তা ও আকাঙ্ক্ষাকে বুঝতে হবে (সূত্র: ইওয়াই ডটকম)।

যে কোনো রাষ্ট্রে বৈধ বা অবৈধভাবে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রশ্নটি সামনে চলে আসে। অনেক দেশে বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হলে আন্তর্জাতিক মহলে সেই সরকারের স্বীকৃতি না পাওয়ার বহু নজির রয়েছে। একইভাবে বহু দেশও নতুন কোনো দেশ বা নতুন সরকারকে স্বীকৃতি না দেওয়ার উদাহরণ কম নয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করলেও চীন নতুন দেশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ স্বাধীনতার প্রায় তিন বছর পর।

জুলাই বিপ্লবের পর বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ছোট বোন শেখ রেহানাসহ ভারতে আশ্রয় নেন। তার মন্ত্রিসভার বহু সদস্য, শতাধিক সংসদ সদস্য ও নেতা, বিচারক, আমলা, জেনারেল, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও পুলিশ কর্মকর্তা দল বেঁধে ভারতে পাড়ি জমান। অনেকে আবার রাতের অন্ধকারে ভারতে যাওয়ার পথে সীমান্তে ধরা পড়েন, গণপিটুনির শিকার হন এবং সর্বস্ব হারান। এতে ভারতের সঙ্গে আগের সরকারের বোঝাপড়া এবং উষ্ণ ও মধুর সম্পর্কের দিকটিই স্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে। এর আগে ট্রানজিট প্রদান ও তিস্তাসহ বিভিন্ন অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা বিষয়ে উচ্চবাচ্য না করা এবং বিগত তিনটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে নিরঙ্কুশ সমর্থন প্রদানের কারণে ভারত আওয়ামী লীগ ও হাসিনাবিহীন নতুন বাংলাদেশ ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি কী মনোভাব প্রকাশ করবে, তা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা ছিল।

বাস্তবে দেখা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সরকারকে অভিনন্দন জানাতে মোটেও দেরি করেনি বিশ্বসমাজ। ভারত শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে এবং তাদের দলের বহু নেতাকর্মীকে আশ্রয় দিলেও বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ ঠিকই প্রকাশ করে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা ২২ আগস্ট ২০২৪ অর্থাৎ বিপ্লবের ১৫ দিনের মাথায় নবনিযুক্ত সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং হৃদ্যতাপূর্ণ সুসম্পর্ক বজায় রেখে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। জুলাই বিপ্লবের পর ভারতের এমন অবস্থান অবশ্যই বেশ অর্থবহ।

সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে একটি কুচক্রী মহল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে নতুন সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যোগদান নিয়ে নানা গুজব প্রচার করতে থাকে। তাদের একদল ড. ইউনূস কোনো নির্বাচিত সরকারপ্রধান বা সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারপ্রধান নন— এমন বক্তব্য সামনে এনে তার পক্ষে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেওয়া সম্ভব হবে না—এ মর্মে অপপ্রচার চালাতে থাকে। এ সময় শেখ হাসিনার ফাঁস হওয়া একটি টেলিফোন কথোপকথন ভাইরাল হয়। এ কথোপকথনে শেখ হাসিনা জানান যে, তিনি পদত্যাগ করেননি এবং নিয়মানুসারে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা করেননি। এমন বক্তব্যের বিপরীতে অনেকেই দাবি করেন যে, শেখ হাসিনাই সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশের বৈধ সরকারপ্রধান। একধাপ এগিয়ে অতি উৎসাহীরা আরও চাউর করে যে, শেখ হাসিনা ওই সময়ে আমেরিকার নিউইয়র্কে ঢুকে পড়বেন এবং সবাইকে চমকে দিয়ে হাজির হবেন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে।

তবে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৫৭ জনের বহর নিয়ে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে ঠিকই পৌঁছে গেলেন নিউইয়র্কে। অতীতে কখনো ৩৪৪ কিংবা ৩৩৫ জন নিয়েও জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের উদাহরণ রয়েছে। তবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৫৭ জনের বহরে সংবাদ ও নিরাপত্তাকর্মী এবং রাষ্ট্রীয় প্রটোকলজনিত কর্মকর্তাদের বাইরে যোগ দিয়েছিলেন জেন জি’র কয়েকজন প্রতিনিধি। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলায় দেওয়া দীর্ঘ বক্তৃতায় ড. ইউনূস গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেন এই জেন জি’দের কথা। শুধু তাই নয়, বিশ্বখ্যাত ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে তিনি মঞ্চে ডেকে আনেন তার সঙ্গে যাওয়া জেন জি প্রতিনিধিদের। প্রশংসায় ভাসিয়ে দেন জেন জি’কে।

জাতিসংঘের অধিবেশনের আগে-পরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্টসহ ১৪টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সাইটলাইনে ৪০টি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন (সূত্র: বিবিসি)।এভাবেই জাতিসংঘের পাশাপাশি বিশ্ববাসীর অলিখিত সমর্থন পায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও জিন জি’র জয়ের গল্প।

লেখক: গবেষক, বিশ্লেষক ও কলামিস্ট, মেজর (অব.)

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অন্তরঙ্গ ভিডিও ফাঁস, অভিনেত্রীর দাবি ডিপফেক

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা-মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতের বৈঠক

ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রপক্ষের ফ্রি ওয়াই-ফাই

বগুড়ায় দুই মাস পর আন্দোলনে নিহত সাব্বিরের মরদেহ উত্তোলন

গণঅভ্যুত্থানের বিজয়কে আরও এগিয়ে নিতে হবে : গণতন্ত্র মঞ্চ

১২ বিচারপতিকে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হবে না : সুপ্রিম কোর্ট

পঞ্চগড়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে কালবেলার দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন

বিএনপির সঙ্গে নরওয়ের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বৈঠক

রাঙামাটিতে কালবেলার দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

ফরিদপুরে নতুন সাজে কালবেলার দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

১০

সাকিবকে নিয়েই মিরপুর টেস্টের দল ঘোষণা

১১

কাঁচামরিচে একদিনেই দাম কমেছে ১৬০ টাকা

১২

নিজের বয়স জানালেন কুসুম শিকদার 

১৩

পরিবেশ উপদেষ্টার বিশেষ নির্দেশে বিএফআইডিসির ১৫৫ একর জমি উদ্ধার

১৪

জাতীয় দিবস বাতিলের উদ্যোগ প্রতিহিংসামূলক : আ.লীগ

১৫

বাংলাদেশে চীনের চিগো ব্র্যান্ডের ডিসট্রিবিউটর হলো মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপ

১৬

ইনজেকশনে ৩০ রোগী অসুস্থ, তদন্তের নির্দেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের 

১৭

রাষ্ট্র পরিচালনায় এ সরকার অভিজ্ঞ নয় : আলাল

১৮

আশুলিয়ায় বাসাবাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি

১৯

মেসির নতুন রেকর্ডে রোনালদোর আরও হতাশা

২০
X