মানুষের জীবনের মালিক আল্লাহ। তিনি মানুষকে পৃথিবীতে এনেছেন, তিনিই মানুষকে পৃথিবী থেকে নিয়ে যাবেন। মানুষের জীবন ও পুনর্জীবনের নিয়ন্ত্রণ একমাত্র তার হাতে। তিনি যখন যাকে যেখানে যেভাবে ইচ্ছা জন্ম দেন ও মৃত্যু দেন। পরকালে পুনর্জন্মও দেবেন তিনি। চাইলে পৃথিবীতেও পুনর্জন্ম দিতে পারেন। পৃথিবীর মানুষকে এটা বোঝার জন্য কিছু বাস্তবে করেও দেখিয়েছেন। পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারায় এমন পাঁচটি ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। ঘটনাগুলো বনি ইসরাইলের যুগের। এসব ঘটনার উদ্দেশ্য মানুষকে এ কথা বোঝানো যে, পৃথিবীতে যেমন আল্লাহ পুনর্জীবন ঘটিয়েছেন, পরকালেও তেমনি পুনর্জীবন ঘটাবেন।
আল্লাহকে দেখার দাবি, মৃত্যু ও পুনর্জীবন
মিশর ও ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী প্রায় দশ মাইলের মতো বিস্তীর্ণ ভূ-ভাগের নাম ছিল তীহ প্রান্তর। মিশরে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সাগর পেরিয়ে পূর্বপুরুষদের আদিনিবাস ফিলিস্তিনে বসবাসের জন্য বনি ইসরাইল তীহ প্রান্তরে অবস্থান নিয়েছিল। এরই একদিকে সুবিশাল তুর পর্বতমালা। মুসা (আ.) তুর পর্বতে ৪০ দিন অবস্থান করে তাওরাত প্রাপ্ত হন। তুর পর্বত থেকে ফিরে তীহ প্রান্তরে স্বজাতির কাছে যখন তাওরাত উপস্থাপন করে বললেন, এটা তোমাদের জন্য আল্লাহর কিতাব; তখন উদ্ধত স্বভাবের কিছু লোক বলে উঠল, আল্লাহ যদি স্বয়ং আমাদের বলেন, এটা তার কিতাব তাহলে আমরা বিশ্বাস করব, অন্যথায় নয়। হতে পারে তুমি ৪০ দিন বসে বসে নিজে লিখে নিয়ে এসেছ। তখন মুসা (আ.) আল্লাহর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে কওমকে বললেন, তোমরা ৭০ জন নেককার লোক নির্বাচন করে দাও। কওমের নির্বাচিত ৭০ জন নেককার লোক নিয়ে মুসা (আ.) তুর পর্বতে গমন করলেন। সেখানে তারা সবাই আল্লাহর কথাবার্তা নিজ কানে শুনতে পেল। তবুও তাদের কিছু লোকের মন তৃপ্ত হলো না। তারা নতুন দাবি করে বসল, এ আল্লাহর কথা নাকি অন্য অদৃশ্য কারও কথা তা আমরা কীভাবে নিশ্চিত হব? আমরা যতক্ষণ তাকে সশরীরে প্রকাশ্যে আমাদের সামনে না দেখব ততক্ষণ আমরা বিশ্বাস করব না যে এ আল্লাহর বাণী। কিন্তু পৃথিবীতে আল্লাহ মানুষের দৃষ্টির একটি সীমাবদ্ধতা দিয়েছেন, আখেরাতে আল্লাহকে নিজ চোখে দেখা গেলেও দুনিয়ায় দেখার সক্ষমতা দেওয়া হয়নি। তাদের এ ধৃষ্টতার জবাবে আসমান থেকে বিকট এক বজ্রধ্বনি ছুটে এলো এবং মুহূর্তে ৭০ জন মৃত্যুবরণ করল। আকস্মাৎ এ ঘটনায় মুসা (আ.) হকচকিয়ে গেলেন। তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন—এমনিতেই বনি ইসরাইল অতিকথন ও হঠকারী স্বভাবের দোষে দুষ্ট। এখন তাদের নির্বাচিত লোকগুলোর মৃত্যুর দায়ভার তো তারা আমার ওপর চাপাবে। উপরন্তু তাওরাত তারা আরও বেশি অস্বীকার করবে। কারণ মূল ঘটনার সাক্ষী তো আমি ছাড়া আর কেউ নেই এখন। তাই তাদের পুনর্জীবন দান করুন, যেন আমি দায়মুক্ত হতে পারি এবং তারাও নিজেরাই গিয়ে সাক্ষ্য দিতে পারে। আল্লাহ মুসা (আ.)-এর দোয়া কবুল করলেন এবং তাদের পুনরায় জীবিত করলেন। এ ঘটনা পবিত্র কোরআনে সংক্ষেপে এভাবে বর্ণিত হয়েছে, ‘আর স্মরণ করো ওই সময়ের কথা, যখন তোমরা বললে, হে মুসা, কস্মিনকালেও আমরা তোমাকে বিশ্বাস করব না, যতক্ষণ না আমরা আল্লাহকে প্রকাশ্যে দেখতে পাব। তখন তোমাদের পাকড়াও করল বিজলির ঝলক আর তোমরা তা প্রত্যক্ষ করছিলে। তারপর, তোমাদের মৃত্যুবরণের পর আমি তোমাদের পুনরায় জীবিত করেছি। যাতে করে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে নাও।’ (সুরা বাকারা: ৫৫-৫৬)। এ ঘটনার পর তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করেছে এবং অন্যদের মতো স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।
গাভির ঘটনা ও সুরা বাকারার নামকরণ
বনি ইসরাইলে ছিল এক এতিম যুবক। আর তার চাচা ছিল খুব ধনী, ঘরে ছিল একমাত্র সুন্দরী কন্যা। যুবকের ইচ্ছে হলো চাচাতো বোনকে বিয়ে করে চাচার অঢেল সম্পদের মালিক হবে। কিন্তু চাচা তার ভাতিজার কাছে কন্যা বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় গোপনে তাকে হত্যা করে সে। রাতের অন্ধকারে নিহত চাচার লাশ অন্য এক নিরপরাধ লোকের ঘরের দরজার সামনে ফেলে রাখে। সকালে উঠে কান্নাকাটি জুড়ে দেয় এবং চাচার হত্যার বিচার দাবি করে। কিন্তু সুস্পষ্ট প্রমাণ ও সাক্ষীর অভাবে বিচার করা যাচ্ছিল না। কওমের লোকজন মুসা (আ.)-এর কাছে এসে মীমাংসার অনুরোধ জানায়। মুসা (আ.) অহি মারফত জানতে পেরেছিলেন বাদি নিজেই আসামি। বিচারপ্রার্থী নিজেই হত্যাকারী। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন তোমরা একজনকে হত্যা করে সে সম্পর্কে একে অন্যকে দায়ী করছিলে, অথচ আল্লাহ তা প্রকাশ করে দিলেন, যা তোমরা গোপন করতে চাচ্ছিলে।’ (সুরা বাকারা: ৭২)। এ হত্যাকাণ্ড প্রমাণের জন্য আল্লাহ একটি ব্যবস্থা জানিয়ে দিলেন। কোনো একটি গরু জবাই করে মাংসের একটি টুকরো নিহতের শরীরে স্পর্শ করলেই সে জীবিত হয়ে হত্যাকারীর পরিচয় বলে দেবে। বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন মুসা নিজ জাতিকে বললেন, আল্লাহ তোমাদের একটি গরু জবাই করতে বলেছেন। তারা বলল, আপনি কি আমাদের সঙ্গে উপহাস করছেন? মুসা বললেন, আমি মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাইছি।’ (সুরা বাকারা: ৬৭)। তাওরাতে তখনো মানুষ হত্যার বিচার সম্পর্কে কোনো বিধান বর্ণিত হয়নি। বনি ইসরাইলের সমাজেও মানুষ হত্যার বিচার সম্পর্কে নির্দিষ্ট আইন ছিল না। তাই তারা স্বভাবসুলভ বক্রতার কারণে গরু জবাইয়ের নির্দেশ মেনে নিতে পারল না। তবে শেষ পর্যন্ত মেনে নিল এবং তারা বলল, তাহলে আপনি আপনার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা করুন, যেন তিনি বলে দেন, গাভিটি কেমন হবে? তিনি বললেন, গাভিটি এমন হবে, না বৃদ্ধা না কুমারী; বার্ধক্য ও যৌবনের মাঝামাঝি বয়সের। এখন তোমাদের যা আদেশ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করো।’ (সুরা বাকারা: ৬৮)। তারপর আদেশ এলো, ‘গরুর একটি মাংস-টুকরো নিহত ব্যক্তির শরীরে স্পর্শ করো। এভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং তোমাদের তার নিদের্শনাবলি প্রদর্শন করেন। যেন তোমরা চিন্তাভাবনা করো।’ (সুরা বাকারা: ৬৭-৭৩)। মাংসের টুকরো নিহত ব্যক্তির শরীরে স্পর্শ করতেই লোকটি জীবিত হয়ে উঠে বসল। লোকজনের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বলল। ভাতিজা কীভাবে তাকে হত্যা করেছে সব খুলে বলল। সবার সঙ্গে কথাবার্তা বলে ভাতিজার হত্যার বিবরণ দিয়ে লোকটি পুনরায় মৃত্যুবরণ করল। মানুষ যেমন ঘুম থেকে জেগে উঠে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। এ ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য পবিত্র কোরআনের সবচেয়ে বড় সুরায় তা উল্লেখ করেছেন এবং এই গাভির ঘটনা থেকেই সুরাটির নামকরণ করা হয় ‘বাকারা’, অর্থাৎ গাভি।
মৃত্যু থেকে পালিয়ে কেউ বাঁচবে না
ফিলিস্তিনের এক শহরে বনি ইসরাইলের এক সম্প্রদায় বাস করত। তাদের সংখ্যা ছিল প্রায় দশ হাজার। একবার সে জনপদে মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধির প্রাদুর্ভাব দেখা দিল। শহরের লোকজন ভীত হয়ে শহর ত্যাগ করে দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী এক উপত্যকায় গিয়ে বসবাস করতে লাগল। আসলে মৃত্যু থেকে কেউ পালিয়ে বাঁচতে পারে না—এ কথা পৃথিবীর মানুষকে অবগত করার জন্য আল্লাহ তাদের মৃত্যু দিলেন এবং পুনর্জীবন দিলেন। সেখানে দুজন ফেরেশতা পাঠালেন। দুই ফেরেশতা দুই পাহাড়ের দুই প্রান্তে দাঁড়িয়ে বিকট শব্দে চিৎকার করলেন। সবাই সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুবরণ করল। কেউ বেঁচে রইল না। পার্শ্ববর্তী লোকালয়ের লোকজন এ সংবাদ জানতে পেরে সেখানে এসে দেখে সবাই মরে পড়ে আছে। দশ হাজার মানুষের কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা খুব সহজ ব্যাপার ছিল না। তাই চারদিকে দেয়াল তুলে কূপের মতো বানিয়ে দিল তারা। সময়ের পরিক্রমায় মৃতদেহ পচে-গলে হাড়গোড় শুকিয়ে পড়ে রইল, যেন এক মৃতনগরী। অনেক বছর পর বনি ইসরাইলের নবী হিজকিল (আ.) সে পথ দিয়ে যাওয়ার সময় বিক্ষিপ্তভাবে হাড়গোড়ের স্তূপ পড়ে থাকতে দেখে বিস্মিত হলেন। অহির মাধ্যমে তাকে ঘটনা জানানো হলো। তিনি সেখানে যাত্রাবিরতি করে হাত তুলে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ, তাদের পুনর্জীবিত করে দিন। আল্লাহ তার দোয়া কবুল করলেন এবং বিক্ষিপ্ত হাড়গুলোকে আদেশ করলেন, ‘ওহে পুরোনো হাড়সমূহ! আল্লাহ তোমাদের নিজ নিজ স্থানে একত্রিত হতে আদেশ করেছেন।’ আল্লাহর নবীর জবানে এ নির্দেশ শুনে নির্জীব হাড়গুলো নড়েচড়ে পুনস্থাপিত হলো। তারপর নবী আদেশ করলেন, ‘ওহে, হাড়সমূহ, আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন তোমরা মাংস পরিধান করো এবং রগ-চামড়া দ্বারা সজ্জিত হও।’ নবীর কথা শুনে হাড়ের প্রতিটি কঙ্কাল একেকটি পরিপূর্ণ লাশ হয়ে গেল এবং রুহকে আদেশ করা হলো, ‘ওহে আত্মাসমূহ, আল্লাহ তোমাদের নিজ নিজ শরীরে ফিরে আসতে নির্দেশ দিচ্ছেন।’ এ শব্দ উচ্চারিত হতেই নবীর সামনে সমস্ত লাশ জীবিত হয়ে দাঁড়াল এবং আশ্চর্য হয়ে চারদিকে তাকাতে শুরু করল। সবাই বলতে লাগল, ‘তোমারই পবিত্রতা বর্ণনা করছি হে আল্লাহ, তুমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই।’ এ ঘটনা কোরআনে এভাবে বর্ণিত হয়েছে, ‘তুমি কি তাদের দেখোনি, যারা মৃত্যুর ভয়ে নিজেদের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল? অথচ তারা ছিল হাজার হাজার। তারপর আল্লাহ তাদের বললেন মরে যাও। মৃত্যুর পর তাদের পুনরায় জীবিত করলেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের প্রতি অনুগ্রহকারী। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞ হয়ো না।’ (সুরা বাকারা: ২৪৩)।
জীবনমরণ আল্লাহর হাতে
একটি বিরোধের জের ধরে বনি ইসরাইলের যুগের অত্যাচারী শাসক বাইতুল মুকাদ্দাসে আক্রমণ করে এবং ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। লাখ লাখ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে, নারী ও শিশুকে বন্দি করে নিয়ে যায়। গ্রামের পর গ্রাম লুটপাট করে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। অনেক দিন পর সে জনপদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন হজরত উজাইর (আ.)। তিনি তাওরাত মুখস্থ করেছিলেন। বাইতুল মুকাদ্দাসের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় হঠাৎ এমন ভূতুড়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত নগরী দেখে বিস্মিত হন। তিনি বলে ওঠেন, আল্লাহ এভাবে মানুষের কঙ্কাল ও ভবনের ইট-সুরকি পড়ে আছে, দেখে মনে হচ্ছে এখানে কোনো শহর ছিল না, কোনো মানুষ বসবাস করত না। মানুষ কীভাবে মৃতদের জীবিত করবেন? এমন কৌতূহল তাকে ভাবিত করে। আল্লাহ তাকে বোঝানোর জন্য মৃত্যু দেন। এভাবে তিনিও সেখানে অন্যান্য লাশের সঙ্গে মিশে যান। তার বাহন গাধাও মরে কঙ্কাল হয়ে যায়। তবে খাবার ও পানীয় আগের মতোই বহাল রাখা হয়। একশ বছর পর তাকে আবার জীবিত করা হয়। (তাফসিরে ইবনে কাসির: ১/৫২৭)। এ ঘটনা কোরআনে এভাবে বর্ণিত হয়েছে, ‘তুমি কি সে লোককে (উজাইর) দেখোনি, যে এমন এক জনপদ দিয়ে যাচ্ছিল যার বাড়িঘরগুলো বিধ্বস্ত হয়ে ছাদের ওপর বিরান পড়ে ছিল? সে বলল, এভাবে মরে পড়ে থাকার পর কীভাবে আল্লাহ তাদের জীবিত করবেন? তখন আল্লাহ তাকে মৃত্যু দিয়ে একশ বছর ফেলে রাখলেন। তারপর তাকে পুনরায় জীবিত করে বললেন, কত কাল এভাবে ছিলে? সে বলল, একদিন কিংবা একদিনের কিছু কম সময় ছিলাম। তিনি বললেন, তা নয়; বরং তুমি তো একশ বছর ছিলে। এবার তাকিয়ে দেখো তোমার খাবার ও পানীয়ের দিকে, সেগুলো পচে যায়নি। তকিয়ে দেখো তোমার গাধাটির দিকে; আমি তোমাকে মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত বানাতে চেয়েছি। আর হাড়গুলোর দিকে চেয়ে দেখো, আমি এগুলোকে কেমন করে জুড়ে দিই এবং সেগুলোর ওপর মাংসের আবরণ পরিয়ে দিই। অতঃপর যখন তার ওপর এ অবস্থা প্রকাশিত হলো, তখন বলে উঠল—আমি জানি, নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাশীল।’ (সুরা বাকারা: ২৫৯)।
আল্লাহ যেভাবে মৃতকে জীবিত করবেন
ইব্রাহিম (আ.)-এর বন্ধ্যা স্ত্রী সারাহ যখন ইসহাককে জন্ম দিলেন, তখন তার ইমান আরও বৃদ্ধি পেল এবং মৃতকে কীভাবে আল্লাহ পরকালে জীবিত করবেন, তা প্রত্যক্ষ করার কৌতূহল জাগল। আল্লাহ বললেন, এমন আকাঙ্ক্ষার কারণ কী? আল্লাহর শক্তির প্রতি কি আস্থা নেই? ইব্রাহিম (আ.) বললেন, অবশ্যই পূর্ণ আস্থা আছে; কিন্তু চোখে দেখে মনে তৃপ্তি পেতে চাই। যেন পুনরুত্থান দিবসে সবাই পুনর্জীবিত হয়ে কীভাবে হাশরের মাঠে সমবেত হবে সেটা অবলোকন করতে পারি। আল্লাহ তার মনের বাসনা কবুল করলেন এবং বাস্তবায়নের জন্য চারটি পাখি লালনপালন করতে বললেন, যেন সেগুলো এমনভাবে পোষ মেনে যায়—ডাক দিলেই চলে আসে, তিনিও তাদের পুরোপুরি চিনতে পারেন। তারপর সেগুলো জবাই করে হাড়-মাংস টুকরো টুকরো করে চারটি ভাগ চারটি পাহাড়ে রেখে আসতে বললেন। আল্লাহর আদেশে তিনি নিকটস্থ সিনাই পর্বতের চারটি পাহাড়ের চূড়ায় চারটি ভাগ রেখে আসলেন। চার পাহাড়ের মাঝখানে উপত্যকায় দাঁড়িয়ে পাখিগুলোর নাম ধরে ডাকলেন। দেখা গেল সব পাখির হাড়ের সঙ্গে হাড়, পাখার সঙ্গে পাখা, মাংসের সঙ্গে মাংস, রক্তের সঙ্গে রক্ত সব মিলেমিশে আগের রূপ ধারণ করল এবং আগের রূপে জীবিত হয়ে দৌড়ে চলে আসল; যেভাবে তিনি লালনপালনের সময় ডাকলে চলে আসত। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন ইব্রাহিম বলল, হে আমার পালনকর্তা আমাকে দেখান, কীভাবে আপনি মৃতকে জীবিত করেন। তিনি বললেন, তুমি কি বিশ্বাস করো না? সে বলল, অবশ্যই বিশ্বাস করি, কিন্তু আমি দেখতে চাইছি এজন্য, যেন আমি অন্তরে প্রশান্তি লাভ করতে পারি। তিনি বললেন, তাহলে তুমি চারটি পাখি ধরে আনো। সেগুলোকে নিজের পোষ মানিয়ে নাও, অতঃপর সেগুলোর দেহের একেকটি অংশ বিভিন্ন পাহাড়ের ওপর রেখে আসো। তারপর সেগুলোকে ডাকো, দেখবে তোমার কাছে তারা দৌড়ে চলে আসবে। আর জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, অতি জ্ঞানসম্পন্ন।’ (সুরা বাকারা: ২৬০)।
এতে চোখের সামনে ফুটে উঠল, আল্লাহ কীভাবে মৃতকে সম্পূর্ণরূপে জীবিত করেন। কেয়ামতের দিন সব মানুষের শরীর-অস্থি-মজ্জা পুনরায় গঠিত হবে এবং পুনরায় জীবিত হবে। যেভাবে প্রথমবার জন্ম হয়েছে।
লেখক: মুহাদ্দিস ও ইসলামী চিন্তাবিদ