ঈদের নানা প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বেশ আগেভাগেই। বিশেষ করে ঈদের পোশাক নিয়ে ভাবনাটা শুরু হয় সবার আগে। কেননা ঈদের আনন্দ নতুন পোশাকেই। আর ঈদে ছেলেদের নতুন পোশাক মানেই যেন পাঞ্জাবি। কেননা ছেলেদের ঈদ ফ্যাশনে পাঞ্জাবির প্রাধান্যটাই সবার আগে। পাঞ্জাবির নানা দিক নিয়ে লিখেছেন এ কে রাসেল ফ্যাশনেবল সব পুরুষই ঈদের দিনে পাঞ্জাবি পরতে বেশি পছন্দ করেন। তবে জেনে রাখা দরকার ফ্যাশনেবলদের কোন ধরনের পাঞ্জাবিতে আরও বেশি স্মার্ট দেখাবে। খাটো নাকি লম্বা? ঢিলেঢালা নাকি আঁটসাঁট! জানা দরকার কোন রঙের পাঞ্জাবি আপনাকে আকর্ষণীয় করে তুলবে। বিশেষ করে এই আবহাওয়ায় পাঞ্জাবির কাপড়টি কেমন হবে সে বিষয়েও জেনে নেওয়াটা জরুরি। কারণ এবারের ঈদে রোদ-বৃষ্টির খেলা চলবে। সঙ্গে পড়বে গরম। তাই ঈদের পোশাকটি হওয়া চায় যেমন ফ্যাশনেবল তেমনি আরামদায়ক। দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো সবসময়ই আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখেই ক্রেতাদের জন্য পোশাক তৈরি করে থাকে। এবারের ঈদেও তার ব্যতিক্রম নয়।
নানা রঙের পাঞ্জাবি যেন হয়ে উঠেছে দেশি ফ্যাশন হাউসগুলোর রঙিন ক্যানভাস। আবহাওয়ার কথা চিন্তা করে ঈদের পোশাককে আরামদায়ক করতে সুতি, খাদি, মটকা, সিল্ক, অ্যান্ডি সিল্ক, প্রিন্স সামসি, কুশান, কাসিস, খানশা, শাহজাদা আদি, জয়শ্রী সিল্ক, অ্যান্ডি কটন, কটন ভয়েলসহ নানা ধরনের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবারের ঈদের পাঞ্জাবি। ঈদের পাঞ্জাবিতে রঙের প্রাধান্য পেয়েছে লাল, সাদা, নীল, খয়েরি, কমলা, কালো, ছাই, হালকা সবুজ, বেগুনিসহ বিভিন্ন রঙের। এবারে ঈদের পাঞ্জাবিতে কাটিং, প্যাটার্ন, লেন্থ, কালার সবকিছুতেই থাকছে নতুনত্ব। খাটো ঝুল, সেমি লং কিংবা লং পাঞ্জাবির ফ্যাশন চলছে এ বছরও। তবে সেমি লং গাঢ় রঙের পাঞ্জাবির প্রতি আগ্রহ বেশি তরুণদের। শেরওয়ানি কলারের মধ্যে সুতোর কাজ ও বুকে সুতার কাজের ভেতরে কাঠের ও স্টোনের বোতাম চলছে বেশি। এপ্লিক, বাটিক, ব্লক, পেইন্ট, এমব্রয়ডারি, সুতার কাজসহ সব ধরনের কাজ করা পাঞ্জাবিই চলছে বেশি। কিছু পাঞ্জাবিতে রয়েছে চুমকি, পুতি ও জরির সুতোর কাজ। এ ছাড়া স্ট্রাইপ ও চেক তাতের কাপড়ের প্লেন ও প্রিন্টের পাঞ্জাবিও রয়েছে। এ ছাড়া হাতা, গলায় ও বোতাম ধরে হালকা কাজ করা পাঞ্জাবিও রয়েছে বাজারে। ঈদে ট্র্যাডিশনাল পাঞ্জাবির পাশাপাশি অল্পস্বল্প কারুকাজ করা পাঞ্জাবিও থাকছে। বুকের সামনে, গলায় বা হাতা নিচের দিকে নানা নকশা করা হয়েছে অনেক পাঞ্জাবিতে। স্লিমফিটের পাঞ্জাবি, লং লেন্থের পাঞ্জাবি ও শর্ট পাঞ্জাবির বেশ চাহিদা রয়েছে এবারের ঈদে। নানা ধরনের প্রিন্টের পাঞ্জাবির সঙ্গে রয়েছে টাইডাই করা পাঞ্জাবিও। ক্রেতাদের চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই এবারের পাঞ্জাবিতে আনা হয়েছে নানা পরিবর্তন। এবারের ঈদ ফ্যাশন ট্রেন্ডে কয়েকটি পাঞ্জাবির বিবরণী।
বেসিক পাঞ্জাবি: বেসিক পাঞ্জাবির ডিজাইনে অতিরিক্ত তেমন কিছুই যুক্ত করা হয়নি। পাঞ্জাবির খুবই বেসিক প্যাটার্ন অনুসরণ করা হয়েছে। থাকছে না কোনো এমব্রয়ডারি বা প্রিন্টের কাজ। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একরঙা এ পাঞ্জাবিগুলোতে মাঝেমধ্যে দেখা যায় কাপড়ের বুননের বৈচিত্র্য।
এক্সট্রা ভ্যালু অ্যাডেড অন নেক: শুধু ঘাড়ের কাছে অংশে ডিজাইনকে হাইলাইট করা হয় এ স্টাইলে। মানে ব্যান্ড কলার এবং প্লাকেটে এমব্রয়ডারি বা প্রিন্টের নকশা থাকে। বডির অন্যান্য অংশে কোনো কাজ থাকে না।
মোটিফ ওয়ার্ক অন চেস্ট: মোটিফ সহজ ও সাধারণ স্টাইল হলেও অসম্ভব জনপ্রিয়। শোল্ডার জয়েনিং থেকে সমগ্র চেস্টজুড়ে এমব্রয়ডারি বা প্রিন্টের মোটিফ ওয়ার্ক থাকে এ স্টাইলে।
অল ওভার প্রিন্ট: সারা বিশ্বের অনেক পোশাকেই অল ওভার প্রিন্ট এখন ট্রেন্ডি। ফ্যাশনের সে চল দেখা যাচ্ছে আমাদের পাঞ্জাবিতেও। পাঞ্জাবিতে অল ওভার প্রিন্ট নতুন কিছু না হলেও চলতি ট্রেন্ডের খাতিরে তা অন্যরকম প্রভাব ফেলছে। এ স্টাইলে সমগ্র পাঞ্জাবি জুড়ে হতে পারে ফ্লোরাল, জ্যামিতিক মোটিফ অথবা অন্য কোনো মোটিফের প্রিন্ট।
টাই ডাই: বিভিন্ন নকশা অনুযায়ী কাপড় বা পোশাককে বেঁধে ডায়িং করা আমাদের দেশের পুরোনো রীতি। টাই ডাইয়ে এক অন্যরকম সুন্দর প্রিন্ট ইফেক্ট আসে, যা অন্যান্য সময়ের মতো উৎসবের পোশাকেও চাহিদা ফেলে। আসন্ন ঈদেও প্রভাব দেখা যাবে টাই ডাইয়ের।
ডেনিম: ফ্যাশন এখন বৈশ্বিক। ডেনিম ফেব্রিকে পাঞ্জাবি ডিজাইন হওয়া তারই দারুণ এক উদাহরণ। বিশ্ব অঙ্গনে প্রথম শ্রেণির স্টাইলকে নিজেদের পোশাকে কাস্টমাইজডভাবে কাজে লাগিয়ে নতুন ট্রেন্ড সৃষ্টি করাই ডিজাইনারদের কৃতিত্ব। ডেনিম পাঞ্জাবি গত এক-দুই বছর সে দৃষ্টান্তই সৃষ্টি করে চলেছে। তবে ডেনিমের যে পাঞ্জাবি কিনছেন, তা গরমের জন্য সহনীয় কি না বুঝে নিন। দেখে-বেছে নিন পাতলা কাপড়। ভালো ব্র্যান্ডেড ফ্যাশন হাউসগুলোতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে নিশ্চয়তা পাওয়া যায়।
ঐতিহ্য: গার্মেন্ট ডিজাইনে সুযোগ থাকে নিজেদের ঐতিহ্য ও শিল্প-সংস্কৃতি থেকে উৎসাহ পাওয়ার। পাঞ্জাবিতেও সেই চল দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে কোনো কোনো ডিজাইনে প্রিন্টের মাধ্যমে ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে দেখা যায় ডিজাইনারদের। মোটিফ হয়ে ওঠে পট, কাঁথা ও সরার চিত্রল বর্ণেরা। এই ঈদে আপনিও কিনতে পারেন এগুলোর মধ্যে থেকে আপনার পছন্দের যে কোনো পাঞ্জাবি। আর হয়ে উঠুন আরও বেশি ফ্যাশনেবল। সঙ্গে নিজেকে আরও স্মার্ট হিসেবে উপস্থাপন করুন সব মহলে।
দরদাম: শিশুদের পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০০ টাকার মধ্যে। বড়দের পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০০ টাকায়।
কোথায় পাবেন: ইজি, অঞ্জন’স, প্লাস পয়েন্ট, কে-ক্র্যাফট, সাদাকালো, রং বাংলাদেশ, বিশ্ব রঙ, ডিমান্ড, কাপড়-ই-বাংলা, গ্রামীণ মেলা, বাংলার মেলা, রঙ, স্বদেশী, দেশি দশ, ওটু, লুবনান, আর্টিস্টি, লা রিভ, ফ্রিল্যান্ড, ইয়েলো, মনসুন রেইন, ক্যাটস আইসহ যে কোনো শোরুমে। এ ছাড়া পাবেন গুলিস্তান পীর ইয়ামেনি মার্কেট, নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, মালিবাগ, মৌচাক, সদরঘাট, গুলিস্তানসহ রাজধানীর যে কোনো মার্কেটে।
মন্তব্য করুন