বিশ্বে পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একটি শিশু মারা যায় এ রোগে। বাংলাদেশে বছরে পাঁচ বছরের নিচে ২৪ হাজার ৩০০ শিশু মারা যায় নিউমোনিয়ায়। তাদের অর্ধেকেরও বেশি কোনো চিকিৎসা পায় না।
কারণ
নিউমোনিয়া বিভিন্ন জীবাণু দ্বারা সংক্রমণ হয়। যেমন—ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদির আক্রমণের কারণে হতে পারে। তবে শিশুর ক্ষেত্রে কারণগুলো বয়স অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন হয়। শ্বাসতন্ত্রের সিনসিটিয়াল ভাইরাসের কারণে নিউমোনিয়া হয়, আবার নিউমোকক্কাস, স্টেপটোকক্কাস নিউমোনিয়া এবং হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা বেশি দেখা যায় পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুদের মধ্যে। ৫ থেকে ১৩ বছর বয়সীদের বেশি হয় মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া।
এর বাইরের কারণগুলো হলো—অপরিপক্ব শিশু, বুকের দুধ পান করেনি এমন শিশু, অপুষ্টিতে ভোগা শিশু, ভিটামিন ‘এ’র অভাবজনিত সংকটে ভোগা শিশু, ঘরে ধূমপানের ধোঁয়া থাকলে এবং পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হলেও শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।
অভিভাবকদের যত্নের ভুলেও শিশু নিউমোনিয়ার শিকার হয়। শিশুকে জোর-জবরদস্তি করে খাওয়ানো হলে সে বমি করে। সেই খাবার তখন শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস জালিকা ও ফুসফুসে চলে যেতে পারে। এতে এসপিরেশন নিউমোনিয়া হতে পারে। তখন শিশু দ্রুত শ্বাস নেবে। সঙ্গে কাশি ও জ্বর দেখা যাবে। এ ধরনের নিউমোনিয়ায় মৃত্যুহার প্রায় ২৫ শতাংশ।
শিশু যদি দুর্ঘটনাবশত কেরোসিন, গ্যাসোলিন এসব গিলে ফেলে তবে তা ফুসফুসে চলে যেতে পারে। এ অবস্থায় শিশুকে জোর করে বমি করানো হলেও নিউমোনিয়া হতে পারে। একে বলে হাইড্রোকার্বন নিউমোনিয়া।
অনেকে সর্দি-কাশি ঠেকাতে শিশুর নাকে-মুখে বিভিন্ন ধরনের তেল দেন (যেমন সরিষার তেল)। এটি যদি সামান্য পরিমাণেও ফুসফুসে ঢুকে যায় তবে লিপয়েড নিউমোনিয়া হতে পারে।
অতিরিক্ত বেবি পাউডারের ব্যবহারে নিউমোনিয়া হতে পারে। পাউডারের দানা এত সূক্ষ্ম হয় যে, তা সহজে শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের সূক্ষ্ম পথে ভেতরে চলে যেতে পারে। ট্যালকম পাউডারের উপাদান শিশুর ফুসফুসে ক্যান্সারও ঘটাতে পারে।
লক্ষণ
শিশুদের মধ্যে লক্ষণগুলো অনেক ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নয়। সংক্রমণের কয়েকটি সাধারণ লক্ষণ হলো—জ্বর, দুর্বল ভাব, ঘন ঘন ভারী শ্বাস-প্রশ্বাস, শ্বাসের সঙ্গে শোঁ শোঁ শব্দ, ক্লান্তি ও ঝিমুনি ভাব।
হাসপাতালের চিকিৎসার মধ্যে শিরা বা ইন্ট্রাভেনাস অ্যান্টিবায়োটিক এবং শ্বাসযন্ত্রের থেরাপি (শ্বাস-প্রশ্বাসের চিকিৎসা) অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে আইসিইউতে চিকিৎসার দরকার হতে পারে।
করণীয়