অ্যালার্জির সমস্যায় ভোগেন এমন ব্যক্তিদের জন্য বর্ষা বেশ যন্ত্রণাদায়ক। এ সময় অ্যালার্জির পাশাপাশি শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্টও বাড়ে। বেশিরভাগই পরাগজনিত কারণে ঘটে। যার প্রভাবে চোখও সংক্রমিত হয়। দেখা দেয় কনজাংকটিভাইটিস, চুলকানি, র্যাশ ইত্যাদি। লিখেছেন ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
বর্ষায় ত্বকের অ্যালার্জি বাড়ে। বিশেষ করে দূষণের মাত্রা বেশি থাকলে সেখানে বর্ষায় এ অ্যালার্জি দেখা দেয়। এ সময় জামা ও জুতা ভিজে যায় কিংবা স্যাঁতসেঁতে থাকে বলেও অ্যালার্জির প্রকোপ বাড়ে।
সিনথেটিক পদার্থ দিয়ে তৈরি রেইনকোট, জ্যাকেট বা গ্লাভস যখন ত্বকের সংস্পর্শে আসে, তখন ছত্রাকের সংক্রমণ বেড়ে যায়। এতে শরীরের বিভিন্ন ভাঁজ যেমন—হাঁটু বা কনুইতে পৌঁছায় বিভিন্ন ছত্রাক। পোষা প্রাণী, পরাগ বা ধূলিকণার সংস্পর্শে শরীরে হিস্টামিনের উৎপাদন বেড়ে যায়। এর ফলে অ্যালার্জির ট্রিগার হয়। এ জন্য বিশেষজ্ঞরা অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ মৌসুমি অ্যালার্জির চিকিৎসা ব্যবহার করে। ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, তরল, নাকের স্প্রে ও আই ড্রপসহ বিভিন্ন ধরনের পাওয়া যায় এটি।
হাইপারপিগমেন্টেশন : বর্ষাকালের আরেক সাধারণ অ্যালার্জি হাইপারপিগমেন্টেশন। এটি ত্বকে বিশেষ করে মুখে গাঢ় আকারের প্যাঁচ ঘটায়। সাধারণত ত্বকের মেলানোসাইট যখন সূর্যের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে আসে তখন হাইপারপিগমেন্টেশনের সৃষ্টি হয়। বর্ষায় যেহেতু সবসময় সূর্য দেখা যায় না, তাই হঠাৎ সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এ অ্যালার্জি তৈরি হয়।
ব্রণ ও একজিমা : বর্ষায় ব্রণ ও একজিমার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আর্দ্রতা ও পরিবর্তিত আবহাওয়ার কারণে ত্বকে চুলকানি, লালচে ভাব, ব্রণ ও একজিমা হতে পারে। ত্বকের যত্ন নিলে এটি সেরে যায়। তবে বেশি সমস্যা হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
ফেসিয়াল ফলিকুলাইটিস : বর্ষায় ত্বকের রোমকূপের ফলিকলগুলোতে প্রদাহ দেখা দিতে পারে। একে বলে ফলিকুলাইটিস। ফলিকুলাইটিস সাধারণত বাহু, ঊরু ও কপালে দেখা দেয়। আর্দ্রতা, ঘাম, ডিহাইড্রেশনের মাধ্যমে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে শরীরে। ঘাম নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত গোসল এবং ত্বক শুষ্ক রাখার মাধ্যমে এ অ্যালার্জি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
মোল্ড অ্যালার্জি : বর্ষায় ভেজা দেয়াল, বদ্ধ ঘরসহ পানি বা খাবারে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী ছত্রাক সংক্রমণ ঘটতে পারে। মোল্ড অ্যালার্জির ফলে ত্বকে সংক্রমণ, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি হতে পারে।
ছত্রাক সংক্রমণ : বর্ষায় হাত বা পায়ের আঙুলের ফাঁকে ছত্রাক সংক্রমণ দেখা দেয়। যাকে বলা হয় অ্যাথলেট ফুট। চুলকানি, জ্বালাপোড়া ও ব্যথা হয়। পা থেকে এ সংক্রমণ পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
করণীয়
ঘরে হালকা বাতাস প্রবেশ করতে জানালা খোলা রাখুন। দেয়াল ও মেঝে যাতে না ভেজে।
বর্ষার সময় কার্পেট, পর্দা, বিছানার চাদর ও বালিশের কাভার শুকনো, পরিষ্কার ও ধুলাবালিমুক্ত রাখুন।
এয়ার কন্ডিশনারের ফিল্টারে জমে থাকা ধুলা নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
গরম পানিতে পোশাক ধুয়ে নিন এবং সূর্যের আলোয় ভালো করে শুকিয়ে নিন। তোশক বা চাদর সূর্যের আলোতে গরম করে নিন।
অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে পোষা প্রাণী এড়িয়ে চলুন। শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলে বেডরুমে কখনোই পোষা প্রাণী রাখবেন না।
কেমিক্যালযুক্ত স্প্রে ব্যবহার না করে নিমপাতা, লবঙ্গ ইত্যাদির মাধ্যমে ঘর থেকে পোকামাকড় দূর করুন।
নিয়মিত ভেষজ চা পান করুন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
আপেলে থাকা কোয়েসার্টিন ফ্ল্যাভানয়েড সংক্রমণের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। তাই বেশি করে আপেল খান।
হোমিও সমাধান
বেশিরভাগ প্রোটিন জাতীয় খাবার, ডিম, চিংড়ি, বেগুন, ওল থেকেই অ্যালার্জি হয়। মাংস, ভাজা খাবার খেলেও অ্যালার্জি হয়ে থাকে। দীর্ঘদিন এই র্যাশ থাকলে একজিমা হয়ে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা এ ক্ষেত্রে Ars.Alb 30 খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। দিনে তিনবার দুই-তিন দিন খেতে পারেন।
ফুল বা কোনো কড়া গন্ধ থেকে অ্যালার্জি হলে পরামর্শ দেওয়া হয় Sang 30 ওষুধটির। যা দিনে তিন-চারবার দুই-তিন দিন খেতে হয়। খাবারের গন্ধ থেকে বমি হলে Sep, Colch, ধুলো, ধোঁয়া থেকে অ্যালার্জি হলে Poth, House Dust, Blata.o., সূর্যের রশ্মি থেকে অ্যালার্জি হলে Canth, Sol এবং ঘামাচির সমস্যা থেকে বাঁচতে Sygiyz ওষুধটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন হোমিও চিকিৎসকরা।
তবে হোমিওপ্যাথি একটি লক্ষণনির্ভর চিকিৎসা। এ ক্ষেত্রে মানুষভেদে ওষুধ পরিবর্তন হয়। তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
মন্তব্য করুন