শীতকালে ঠান্ডা বেশি পড়লে অনেকের নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। কেউ খুব ঘাবড়ে যায়, আবার কেউ বিষয়টি গুরুত্ব দেন না। নাক থেকে রক্তক্ষরণকে চিকিৎসার পরিভাষায় এপিস্ট্যাক্সিস বলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি খুব গুরুতর সমস্যা নয়। বিস্তারিত জানাচ্ছেন ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
এপিস্ট্যাক্সিস শিশুদের এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। হিমোফিলিয়ার মতো রক্তপাত এবং রক্ত জমাট বাঁধার ব্যাধি থাকা লোকদের ছাড়া, নাক থেকে রক্তক্ষরণ বয়ঃসন্ধিকালের পর খুব কমই দেখা যায়। নাক থেকে রক্তক্ষরণ সাধারণভাবে নাকের ডগার (সামনের দিকের এলাকা) কাছে নাকের ভেতর থেকে ঘটে কিন্তু এমনটা হওয়ার পেছনে কারণ হচ্ছে, নিঃশ্বাস ফুসফুসে যাওয়ার আগে নাককে আর্দ্র করে দেয়। তাই আবহাওয়া খুব ঠান্ডা ও শুষ্ক হলে শ্বাসও শুষ্ক হয়ে যাওয়ায় নাকের ভেতরের আর্দ্রতা কমে যায়।
তখন নাকের ভেতরের অংশ শুকিয়ে যায়। এর ফলে নাকের অস্বস্তি বাড়ে। চুলকানি হয়। এ সময় আঙুল দিয়ে নাকের ভেতর খোঁচাখুঁচি করলে শুষ্ক ত্বক সহজেই ফেটে যায় এবং সেখানকার রক্তবাহ থেকে রক্তপাত হয়। এ সময় ভয় না পেয়ে কিছুক্ষণ নিয়ম মেনে নাক চেপে ধরে রাখলে সাধারণত রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়।
কেন হয়
নাকে রয়েছে বেশ কিছু রক্তনালি, যা নাকের ঝিল্লি আবরণে এমনভাবে থাকে একটু আঘাত লাগলেই রক্তপাত হতে পারে। সাধারণত শুষ্ক আবহাওয়ায় এ সমস্যা বেশি হতে পারে। অনেক কারণে নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে পারে।
নাকের ভেতরে আঘাত পেলে, নাকের বা সাইনাসের সংক্রমণ অথবা নাকের বিভিন্ন টিউমার; ইনফেকশন, ট্রমা, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, নন-অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাদক সেবন ও বংশগত কিছু রক্তের সমস্যাও নাক থেকে রক্ত ঝরতে পারে। এ ছাড়া বৃদ্ধ বয়সে রক্তনালির সংকোচন প্রসারণশীলতা কমে যাওয়ার কারণেও নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।
করণীয়
নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হলে প্রাথমিক অবস্থায় শান্ত হয়ে চেয়ারে বসুন। বসার সময় সোজা হয়ে এবং মাথাটা একটু সামনের দিকে ঝুঁকে বসুন। তাহলে নাকের রক্ত নাকের পেছনের পথ দিয়ে গলায় বা মুখে চলে আসবে না। নাকের এই রক্ত মুখে চলে আসলে তা ফেলে দিন। রক্ত গিলে ফেলবেন না। তাহলে এ রক্ত পেটে গেলে বমি বমি ভাব বা রক্তবমি হতে পারে।
হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল এবং তর্জনী দিয়ে নাক জোরে চেপে ধরুন এবং নাক বন্ধ থাকাকালে মুখ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। এভাবে ৫-১০ মিনিট নাক চেপে ধরে রাখুন। প্রয়োজন হলে আরও বেশিক্ষণ নাক চাপ দিয়ে ধরে রাখুন। সম্ভব হলে বরফ এনে গামছায় পেঁচিয়ে তা নাকের চারপাশে ধরে রাখুন।
এ বরফ নাকের রক্তনালি সংকুচিত করে রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে সাহায্য করবে। যদি এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা সত্ত্বেও নাকের রক্তক্ষরণ ১৫-২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, তখন দেরি না করে রক্তক্ষরণ বন্ধের পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নিকটস্থ হাসপাতালে চলে যান অথবা কোনো নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন।
সাবধানতা
নাক দিয়ে রক্ত পড়াকালে চিত হয়ে শোবেন না। এতে রক্ত নাকের পেছন দিয়ে গড়িয়ে শ্বাসনালিতে চলে গিয়ে জটিল সমস্যা তৈরি করতে পারে।
নাকের রক্তক্ষরণ বন্ধ হলেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নাক পরিষ্কার করবেন না। জোরে নাক ঝাড়বেন না।
শিশুদের নখ ছোট রাখতে হবে এবং নাকে হাত দেওয়ার বদভ্যাস পরিত্যাগ করাতে হবে।
যাদের নাকের ঝিল্লি শুষ্ক হয়ে যাওয়ার প্রবণতা আছে তাদের ক্ষেত্রে শুষ্ক মৌসুমে নাক যাতে অতিরিক্ত শুষ্ক না হয়, তার জন্য নাকের ছিদ্রের সামনে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা যেতে পারে।
আপনার যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তবে নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
আপনার যদি বারবার নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হওয়ার প্রবণতা থাকে তবে আপনার কক্ষে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষ করে এটা শীতকালে ঠান্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়ায় নাকের ঝিল্লি শুষ্ক হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করবে। ফলে নাক থেকে রক্তক্ষরণের আশঙ্কা কমে যাবে।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি