নানা জটিলতার কারণে আমাদের মুখের চামড়া কুঁচকে যাওয়া থেকে শুরু করে ভাঁজ পড়া, দাগ পড়া, ফেটে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এসবের ধারাবাহিকতায় মুখে পড়তে পারে মেছতার দাগও। লিখেছেন ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ-
মেছতা কী?
মেছতাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলে মেলাজমা অথবা কোলাজমা। এমনটা হলে ত্বকে হালকা বাদামি রঙের ছোপ দাগ পড়ে। মুখ-কপালসহ বুকেও হতে পারে মেছতা।
কারণ
জিনগত সমস্যা, অস্বাভাবিক হরমোন ক্ষরণ, ঘুমের অভাব, পরিমাণমতো পানি পান না করা, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, দুশ্চিন্তা, ঘাম হওয়ার পরও পরিচ্ছন্ন না হওয়া, অতিবেগুনি রশ্মি; এসবের কারণে মেছতা হয়। আবার হাইপারপিগমেন্টেশনও এর কারণ। ব্রণ, বসন্ত রোগ, একজিমা এবং অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়াতেও এ দাগ পড়তে পারে।
প্রকার
ত্বকের লেয়ার অনুযায়ী মেছতা দুই ধরনের। ওপরের লেয়ারে হলে অ্যাপিডার্মাল মেলাজমা। ডার্মাল লেয়ারে হলে সেটা ডার্মাল মেলাজমা। মেছতা একবার হলে তা একেবারে দূর করা যায় না। ধীরে ধীরে দাগ হালকা করা যায়।
ঘরোয়া কিছু সমাধান
আলু: আলুতে ক্যাটেকোলেজ এনজাইম থাকে। এটি ত্বকের কালো দাগ দূর করে স্বাভাবিক রং ফিরিয়ে আনে। একটি ছোট আলু গ্রেট করে মুখে লাগান। ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
চন্দন : চন্দন মুখের কালো দাগ দূর করতে দারুণ কার্যকর। এতে আছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা ব্রণ, মেছতা ও কালো দাগ দূর করে। ১ চা চামচ চন্দন গুঁড়ার সঙ্গে কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল ও লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট বানান। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। যেন কোনোভাবেই চোখে না যায়। ধোয়ার পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। পেস্টটি সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করতে পারেন।
কমলার খোসা: কমলার খোসায় আছে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান। এটি মুখের কালো ছোপ দাগ ও ব্রণ দূর করে। খোসা বেটে, হলুদ ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। ১০ মিনিট মুখে লাগিয়ে গোলাপজল দিয়ে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
লেবুর রস: তাজা লেবুর রস দাগে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
কাঁচা দুধ: কাঁচা দুধ ত্বককে এক্সফোলিয়েট করে। দুধে পরিমাণ মতো হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট বানান। লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
অ্যালোভেরা: অ্যালোভেরার জেলে প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রতিদিন এ জেল ত্বকে দিলে দাগ কমে। উপকারী কোলাজেনও বাড়ায়। ত্বকের ঘা বা ফোঁড়াও দূর করে।
টমেটোর রস: লাইকোপেন সমৃদ্ধ টমেটোর রস মুখের দাগ দ্রুত দূর করে। ত্বকের খোলা পোরস সংকুচিত করতেও সহায়তা করে এটি।
পেঁপে: পাকা পেঁপে ভালোভাবে চটকে মুখে মাখুন। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
হলুদ: টেট্রাহাইড্রোকারকিউমিন হলো হলুদের একটি নির্যাস। এটি কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। হলুদের সঙ্গে দুধ মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগান। ২০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
মুলতানি মাটি: এটি মুখের তৈলাক্ত পদার্থ দূর করে। মুলতানি মাটি পানি দিয়ে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মেখে ধুয়ে ফেলুন।
ডিমের সাদা অংশ: রাতে ঘুমানোর আগে একটি ডিমের সাদা অংশ হালকা করে মুখে ম্যাসাজ করে রাখুন। অন্যদিকে যাদের মেছতার সমস্যা আছে তাদের ত্বকে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার, পেঁয়াজ বা পেঁয়াজের রস ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়।
মেছতার জন্য হোমিওপ্যাথি
ত্বকের দাগ দূর করতে প্রসাধনে যে রাসায়নিক থাকে তা অনেক সময় ক্ষতিই ডেকে আনে। সেক্ষেত্রে অনেকের ত্বকে স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। মেছতার চিকিৎসা আছে হোমিওপ্যাথিতেও। ত্বকের দাগ দূর করতে যেসব হোমিওপ্যাথি ওষুধ রয়েছে তার মধ্যে বার্বারিস একোপুলিয়াম উল্লেখযোগ্য। তা ছাড়া লক্ষণ অনুসারে থুজা, সিফিলিনাম, কেলিব্রোম, আর্সেনিক, সিফিয়া ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। তবে এসব নিজে নিজে ব্যবহার না করে অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী
কল্যাণ সমিতি
মন্তব্য করুন