সাধারণভাবে ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা ক্ষতিকর নয়। তবে অনেকের শ্বাসনালি সরু হয়ে যাওয়ার একটি লক্ষণ হতে পারে ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা। এই রোগের নাম স্লিপ অ্যাপনিয়া। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে রোগটি বড়সড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন ডা. হেমন্ত রায় চৌধুরী
ঘুমের সময় গলবিলের মাংসপেশি প্রসারিত হয়, ফলে শ্বাসনালির রাস্তা সরু হয়ে যায়। এই সরু রাস্তার বিপরীতে বাতাস যাওয়ার সময় আলজিহ্বা, টনসিলের প্রাচীর ও জিহ্বার পেছনের অংশের কম্পনের জন্য নাক ডাকার শব্দ হয়। এই শব্দ ৯০ ডেসিবেল তীব্রতা পর্যন্ত হতে পারে।
ঘুমের মধ্যে ১০ সেকেন্ডের বেশি শ্বাস বন্ধ হলে এবং ঘণ্টায় পাঁচবারের বেশি হলে তাকে স্লিপ অ্যাপনিয়া সিনড্রোমের রোগী বলে ধরা হয়। এই রোগে শিশুদের মস্তিষ্কের বা শারীরিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই নাক ডাকাকে সাধারণ সমস্যা ভাবার সুযোগ নেই। ছোট-বড় সবার ক্ষেত্রেই নাক ডাকার সমস্যায় চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
কেন হয়
পাঁচ বছর থেকে যে কোনো বয়সী শিশুসহ সবারই স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে। তবে নারীদের চেয়ে পুরুষদের সমস্যাটা বেশি হয়। স্থূলকায় হলে এবং ৪০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের ঝুঁকি বেশি। এডিনয়েড বড় হয়ে থাকলে কিংবা নাসারন্ধ্র বাধাপ্রাপ্ত হলে স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে। চিত হয়ে শোয়ার অভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান না করা, নাকের অ্যালার্জি বা সাইনাস সমস্যা থাকলে। আবার কম ঘুমানো, নিয়মিত ঘুমের ওষুধ খেলে বা পারিবারিক নিদ্রাহীনতার ইতিহাস থাকলেও রোগ হতে পারে। ধূমপান এবং মদপানের মতো নেশাও হতে পারে এ রোগের কারণ।
জটিলতা
ঘুমে দম বন্ধ হলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি হয় ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের আধিক্য দেখা যায়। ফলে হার্টে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়ে হার্ট ফেইলিওর হতে পারে। হার্টের গতি অস্বাভাবিক হয়ে হঠাৎ মৃত্যুও ঘটতে পারে। নাক ডাকার চিকিৎসা না করালে এটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।
Link a Story
অ্যালার্জি নাকি ঠান্ডা, বুঝবেন যেভাবে
লক্ষণ
• নাক ডাকা যা পাশের ঘর থেকে শোনা যায় এবং ঘুমে পাঁচ বা তার অধিকবার দম বন্ধ হয়।
• অফিসে, বাসে, নির্জনে বা টিভি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে যাওয়া।
• মুখ হাঁ করলে তালু ও আলজিহ্বা সহজে না দেখা গেলে বুঝতে হবে স্লিপ অ্যাপনিয়া সমস্যা।
• মাথাব্যথা বিশেষ করে সকালের দিকে ।
• অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব, ক্লান্তি বা অবসাদ।
• রাতে তৃপ্তিদায়ক ঘুম না হওয়া, মানসিক বিষণ্নতা।
চিকিৎসা
সিপ্যাপ (CPAP) নামক এক প্রকার ডিভাইস মাস্ক রয়েছে, যা নাকে লাগিয়ে ঘুমালে মৃদু স্লিপ অ্যাপনিয়ার রোগীরা বেশ ভালো ফল পায় ও সুস্থ জীবনযাপন করে। এটা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। তবে যাদের উচ্চ শ্বাসনালিতে বিভিন্ন লেভেলে নিঃশ্বাস বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং যাদের ঘুমের সময় সিপ্যাপ ব্যবহারে অস্বস্তি লাগে, তাদের সমস্যা চিহ্নিত করে নাক, তালু, জিহ্বা এমনকি মুখের নিচের চোয়াল সার্জারি করার প্রয়োজন হতে পারে।
করণীয়
• নিয়ন্ত্রিত ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী ওজন আয়ত্তে রাখা। প্রচুর পানি, শাকসবজি, ফলমূল খাওয়া নিয়মিত ব্যায়াম, যেমন—হাঁটা, সাঁতার কাটা ইত্যাদি।
• অ্যালার্জি, সর্দি বা ঠান্ডা লাগায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অ্যালার্জেন বস্তু থেকে সাবধান থাকা।
• ঘুমের বালিশ একটু উঁচু (৪ ইঞ্চি পরিমাণ) নিতে হবে। কাত হয়ে শোয়ার অভ্যাস করতে হবে। যথাসম্ভব মুখ বন্ধ করে ঘুমানো।
• ঘুমানোর আগে ক্যাফেইন, দুধ বা অন্য কোনো ভারী খাবার না খাওয়া।
• নাসারন্ধ্রের পথ পরিষ্কার রাখা। এ জন্য নিয়মিত গরম পানির ভাপ নেওয়া এবং সহনীয় গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গার্গল করা।
• ধূমপান বা যে কোনো ধরনের নেশা পরিহার।
• ঘুমানোর ২ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খাওয়া ঘুমের ওষুধ গ্রহণের অভ্যাস পরিত্যাগ।
আর্কাইভ 
| ২৬ এপ্রিল ২০২৪ 